Select Language

[gtranslate]
৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিনার্ভা থিয়েটারে আড়িয়াদহ ক্লাইম্যাক্স এর দুটি নাটক “অন্তরাল ও স্কাইল্যাব” ।

কেকা মিত্র :- মিনার্ভা থিয়েটারে মঙ্গলবার আড়িয়াদহ ক্লাইম্যাক্স নাট্য দলের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো দুটি নাটক অন্তরাল এবং স্কাইল্যাব।

” অন্তরাল ” নাটকের বিষয় মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। গত তিন বছর ধরে সে বাড়ি আসেনি। বাড়িতে তার বাবা – মা অধীর আগ্রহে ছেলের চিঠির জন্যে অপেক্ষা করে থাকেন। চিঠিতেই তার ছেলের খবরাখবর পান। আর আছে তাদের পুত্রবধূ
শাস্বতী। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই যার স্বামী চলে গেছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে। সারাদিন হাসি মুখে সংসার সামলায়। অসুস্থ শ্বশুর শ্বাশুড়ি র সেবা যত্ন করে, তাদের ভালো রাখতে চায় সে প্রাণপণ।
শ্বশুর মশাই অবনিবাবু খুব গল্প করতে ভালোবাসেন। সেইরকম ভাবেই একদিন সায়ন্তন নামের এক যুবক কে বাড়িতে নিয়ে আসেন, যে সেনাবাহিনী তে কাজ করে। কোনো একটা ঠিকানা খুঁজতে সে এদিকে এসেছিল। বাড়িতে তখন অবনীবাবুর বন্ধু বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পবিত্র উপস্থিত
ছিলেন।

এ বাড়িতে আসার পর সায়ন্তন ক্রমে বুঝতে পারে সে এই বাড়ীর ঠিকানাই সে খুঁজছিল। তিন বছর আগে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত বন্ধু সুদীপ্তর পরিবার কে সমবেদনা জানানো তার উদ্দেশ্য। কিন্তু এখানে সুদীপ্তর বাবা – মা তাদের ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন। তার স্ত্রী শাশ্বতী সধবার সাজে সংসার আগলে রেখেছে। নিয়মিত সুদীপ্তর চিঠি আসছে। আসল সত্যটা সে কি ভাবে জানাবে ! এইনিয়ে এক ঘন্টা দশ মিনিটের এই নাটক “অন্তরাল” মঞ্চস্থ হলো। চমৎকার একটি নাটক। এই নাটকটি রচনা করেছেন বসন্ত ভট্টাচার্য্য। অভিনয়ের ক্ষেত্রে (শাশ্বতী) সবিতা দাস, (স্বর্ন) চৈতালি চট্টোপাধ্যায়, ( পবিত্র) রাজীব বর্ধন, (অবনী) পলাশ পাল ও
(সায়ন্তন) শুভঙ্কর ভট্টাচার্য্য।
সবিতা দাস এর নির্দেশনায় এই নাটকটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে।

পরের যে নাটকটি মঞ্চস্থ হলো সেটি হলো এক ঘণ্টার নাটক
” স্কাইল্যাব ” ।
নাটকটি লিখেছেন বিমল বন্দ্যোপাধ্যায় । নাটকটির বিষয় সমুহ হলো , নাসার পাঠানো স্পেস স্টেশন ” স্কাইল্যাব ” তার
কক্ষচ্যুত হয়ে পৃথিবীর দিকে প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে। রটনা অনুযায়ী আর এক সপ্তাহের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে ধূলিসাৎ করে দেবে মানবকুল। এমন অবস্থায় গোবর্ধন বাবার আশ্রমে ভন্ড সাধুবাবা আর তার সহযোগী ধনুষ্টঙ্কার নানান রকম মাদুলী বিক্রি করে ভীতগ্রস্থ জনগণের থেকে টাকা লুটছে। একসময় বাবার আশ্রমে আসে অনন্ত গোপাল, গর্জন সিং,
মস্তান প্রাণকেস্ট। প্রত্যেকেই স্কাইল্যাব এর এই পতনকে তাদের ব্যাক্তিগত সার্থসিদ্ধি তে
কাজে লাগাতে চায়। অবশেষে প্রবেশ করে দরিদ্র সহায় সম্বল হীন এক বৃদ্ধা। একসময় , অল্প বয়সে বিধবা হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝি গিরি করে সে ছেলেকে মানুষ করেছে। ছেলে বড় হয়ে বিয়ে করে অন্য জায়গায় গিয়ে বউ – ছেলে নিয়ে থাকে। ছেলে লজ্জা বোধ করে তার মা লোকের বাড়ি ঝি এর কাজ করতো বোলে। পাশাপাশি সেই মা ছাগলের দূধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সেই বিধবা মা সাধুবাবার কাছে একটি পুরনো আংটি র বদলে সে তিনটি মাদুলি চায়। একটা তার নাতিকে পরাবে। অন্য দুটি তার ছাগলের জন্যে। এই স্কাইল্যাব যেন তার ছাগলের কোনো ক্ষতি না করে। আর তার সাথে সাধুবাবাকেও সে একটি মাদুলি পরে থাকতে বলে।
কারণ জগতের সবার কথা ভাবতে গিয়ে যদি নিজের কথা ভুলে যান তাই। জগৎ সংসারের সমস্ত মুখ, আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েও বৃদ্ধার মনের এই মমত্ববোধ দেখে ভন্ড সাধুরও
চোখ জলে ভরে ওঠে। মাতৃ স্বরূপা বৃদ্ধার পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে সে তার প্রতারণা কারবার বন্ধ করে দেয়। সব মিলিয়ে এই নাটক আলাদা উপলদ্ধি র নাটক। এই নাটকে দারুন অভিনয় করেছেন
(ধনুষ্টঙ্কার) অমৃত রায়,
(গোবরর্ধন বাবা) রাজীব বর্ধন,
(অনন্ত গোপাল) অর্ণব ভট্টাচার্য্য,
(গর্জন সিংহ) সৌম্যজিত মন্ডল,
(প্রাণকেস্ট) তন্ময় সাহা এবং
(বৃদ্ধা মা) এর চরিত্রে সবিতা দাস। এই নাটকে তপন বিশ্বাস এর আবহ, অসিত সাহা র আলো
যথাযথ।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News