ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের তিনি একজন অন্যতম চমকপ্রদ চরিত্র, বিপ্লবী অনুশীলন সমিতির অবিসংবাদী নেতা ও প্রখ্যাত চিকিৎসক।তিনি যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়।১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে ১৮ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের তমলুকে জন্মগ্রহন করেন তিনি।
যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের পিতার নাম কিশোরীলাল মুখোপাধ্যায়। সুলেখক ধনগোপাল মুখোপাধ্যায় তাঁর ছোট ভাই। ১৯১৫ সালে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবস্থায় তাঁকে আত্মগোপন করতে হয়। ১৯২১ সালে আত্মগোপন থেকে আত্মপ্রকাশের পর ফাইনাল এম.বি. পরীক্ষায় মেডিসিনে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ডাক্তারি পাস করেন।
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে যুগান্তর দল ১৯১৫ সালে জার্মানির সহযোগিতায় ভারতে সশস্ত্র সংগ্রামের আয়োজন করেছিলেন, তিনি ছিলেন সে দলের বৈদেশিক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত নেতা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ।যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় ১৯০৫ সালে অনুশীলন সমিতির সভ্য হন।
বালেশ্বর যুদ্ধে যতীন্দ্রনাথের মৃত্যু হলে যুগান্তর দলের দায়িত্ব আসে তাঁর উপর। পুলিসের মতে যাদুগোপাল “ওয়াস থে ব্রাইন অফ থে জুগান্তার” এবং তাঁকে ধরিয়ে দেবার জন্য ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তিনি ১৯২১ সাল পর্যন্ত আত্মগোপন করে বাংলা, অসম, চীন সীমান্ত ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে দলের কাজ চালিয়ে যান। এসময় তার সহকারী ছিলেন বিপ্লবী সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, কুলেন্দ্র রাহা রায় প্রমুখ। ১৯২৩ থেকে ১৯২৭ সন পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন। মুক্তি পেলেও তাঁকে বাংলা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
যুগান্তর পার্টির কর্ণধার হিসেবে তিনি ইশতেহার প্রচার করে বিপ্লবী সংগঠন তুলে দিয়ে বাংলার বিপ্লবীদের কংগ্রেসের মাধ্যমে গণআন্দোলনে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৯২৭ সাল থেকে যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় বিহারের রাঁচি শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস ও চিকিৎসা ব্যবসা করতে থাকেন। ৩৫ বছর ধরে ঐ অঞ্চলে সুচিকিৎসকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। এ বিষয়ে তিনি একটা গ্রন্থও রচনা করেন।
যাদুগোপাল ১৯৪২ – ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ভারত ছাড় আন্দোলনের অংশ নেবার কারণে কারারুদ্ধ থাকেন। এ সময় হাজারিবাগ জেলে তাঁর সহবন্দিদের মধ্যে ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। আন্দোলনকে সফল করে তোলার জন্য তিনিই জয়প্রকাশ নারায়ণ ও আরো কয়েকজনকে জেল থেকে পালানোর পরিকল্পনাসহ পরামর্শ দেন এবং প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন।
তিনি শুধু রাজনীতিবিদ বা চিকিৎস্যক ছিলেন না,সেই সাথে তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীত বিশারদ ও সুসাহিত্যিক ছিলেন।তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে, ভারতের সমর সংকট ও বিপ্লবী জীবনের স্মৃতি।
১৯৭৬ সালের ৩০ আগষ্ট এই মহান মানুষটির মহাপ্রয়ান ঘটে।এখন সংবাদ পরিবার তাঁকে জানায় শতকোটি প্রনাম