পরনে ঢিলেঢালা শার্ট,স্কিন টাইট জিন্স আর বেপরোয়া চালচলন যুবকটির। বুকের মাঝে তাজা বারুদ নিয়ে সে গাইছে ‘এই বেশ ভাল আছি’! পুরো দেশ যেন কেঁপে উঠলো এটমিক বোমার তান্ডবে ! তার মুখ নি:সৃত প্রত্যেকটি শব্দ যেন এক একটি মিসাইল হয়ে উঠলো অন্যায় অবিচার ও শাসনের নামে শোষণের বিরুদ্ধে। খেটে খাওয়া, বঞ্চিত জনতা তাদের মেরুদন্ডে পেল শক্তি ! তিনি নচিকেতা,নচিকেতা চক্রবর্তী আধুনিক বাংলা গানের জীবনমুখী ধারার এক অগ্রগণ্য শিল্পী।
জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪, কলকাতায়।যদিও তাঁর সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম। সে জন্ম সাল বা তারিখ যাই হোক, নচিকেতার মত শিল্পীদের জন্ম হয়না,ঘাম-রক্ত-মাংসে পুড়ে সৃষ্টি হয়।
তার পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার চেচরীরামপুর গ্রামে ,পড়াশোনা করেছেন উত্তর কলকাতার মণীন্দ্র কলেজে। ছোটবেলা থেকেই গান লেখা শুরু, সেই সঙ্গে নিজের মতো করে গান চর্চা।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকের কথা- দীর্ঘদিনের না ছাঁটা চুল, মুখ ভর্তি দাড়ি, ধনুকের ছিলার মত ছিপছিপে গড়ন আর আশ্চর্য তীক্ষ্ণ কিন্তু মায়াময় একজোড়া চোখ নিয়েই গাইছেন এই বেশ ভালো আছি।বেকার যুবকের হতাশা তার গানে পেল নতুন ভাষা, সভ্যতার ফাঁপা বেলুন ফাটিয়ে ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো সে। সৃষ্টি হল নতুন একটি যুগের। ‘নচিকেতা চক্রবর্তী’ একটি আদর্শের নাম। যে আদর্শ সততা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিপ্লবের সমন্বয়ে গড়া। সংগীত জীবনে নচিকেতার রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। জীবনমুখী বাংলা গানে তিনি বিশ্বসেরা।
প্রথম অ্যালবাম ‘এই বেশ ভালো আছি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে এবং প্রকাশ পাওয়া মাত্র অভাবনীয় সাড়া পড়ে যায়। নচিকেতা চক্রবর্তী মুহুর্তে হয়ে যান নচিকেতা। এরপর শুধু সাফল্যের ইতিহাস। পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি কখনও। তার সবচেয়ে প্রিয় গান ‘নীলাঞ্জনা ৩য় খন্ড’। এ পর্যন্ত তিনি তিনশতরও বেশি গান রচনা করেছেন এবং সুর দিয়েছেন। লেখা-লেখির ক্ষেত্রে জ্যাক লন্ডন এর লেখা পড়ে তিনি প্রথম অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ ছাড়া মহাভারতের কৃষ্ণ চরিত্র তাকে প্রভাবিত করে।
নচিকেতার গানের মধ্যে বাস্তবতা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে তাই সচেতন শ্রোতা মহলে অনেক জনপ্রিয়।বাঙ্গালীর না পাওয়া-যন্ত্রনার জীবনে তিনি “ফিনিক্স পাখী”।
আজ চল্লিশের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো আপামর বাঙ্গালী যুবক-যুবতীর নয়নের মণি,আগুন পাখী তোমার জন্ম দিনে তোমাকে কুর্নিশ জানায় এখন সংবাদ পরিবার