Select Language

[gtranslate]
৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ২৫শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লোকমাতা রাণী রাসমণিকে জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলী।

সুস্মিত মিশ্র


ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় অভিজাত পরিবারের নারীরা থাকতেন পর্দার আড়ালে। ঘর থেকে বের হলেও চারদিকে পর্দাঘেরা পালকিতে চেপে যাতায়াত করতেন, যাতে বাইরের কোনো পুরুষ তাদের চেহারা দেখতে না পারে। সেটা এমন এক সময় ছিল যখন বেশিরভাগ বয়ঃসন্ধির আগেই অধিকাংশ মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যেত। আর যৌবনপ্রাপ্তির পর সন্তানধারণ ছাড়া আর কিছু ভাবারই সুযোগ দেওয়া হতো না।

এমনই এক সময়ে আবির্ভাব রাণী রাসমণির। ওই যুগে একজন নারীর শাসনকার্য ও ব্যবসায় একাধারে সফল হওয়া ছিল বিরলতম ঘটনা।



১৭৯৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন কাঞ্চনপল্লীর ‘কোনা’ গ্রামে অধুনা নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাণী রাসমণির জন্ম হয়। পিতা হরেকৃষ্ণ দাস ও মাতা রাম প্রিয়া, মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান। তিনি ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী। মাত্র এগারো বছর বয়সে কলকাতার জানবাজারের ধনী জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাস-এর সঙ্গে তার বিবাহ হয়।

১৮৩৬ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি স্বহস্তে তার জমিদারির ভার তুলে নেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা করতে থাকেন। ব্যক্তিগত জীবনে রাণী রাসমণি এক সাধারণ ধার্মিক বাঙালি হিন্দু বিধবার মতোই সরল জীবনযাপন করতেন।



একবার গঙ্গায় অসহায় জেলেদের মাছ ধরার উপর জলকর আরোপ করেছিলেন   ইংরেজ সরকার । নিরুপায় হয়ে জেলেরা রাণীমার স্মরনাপন্ন হয় ।রাণীমা ইংরেজ সরকারকে ১০ হাজার টাকা কর দিয়ে  ঘুসুড়ি থেকে মোটিয়াবুরুজ অঞ্চলের সমস্ত গঙ্গা জমা  হিসেবে নেন এবং জেলেদের সুবিধার্থে  রশি টানিয়ে জাহাজ ও নৌকো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন।  ইংরেজ সরকার  রাণী রাসমণির এই কার্যকলাপে আপত্তি জানায়।তবে রাসমণির বক্তব্য ছিল যে জাহাজ চলাচল করলে মাছ অন্য জায়গায় চলে যাবে আর যার ফলে জেলেদের ক্ষতি হতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে  ইংরেজ সরকার রাণী রাসমণির ১০ হাজার টাকা তাঁকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং  জলকর তুলে নেন।


নীলকর সাহেবদের সাধারণ প্রজাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করেছিলেন রাণী রাসমণি । সাধারন মানুষের জন্যে এক লক্ষ টাকা ব্যয় করে স্টোনার খাল খনন করিয়েছিলেন যাতে মধুমতী নদীর সাথে নবগঙ্গার সংযোগ ঘটে।  এছাড়াও রাণী রাসমণি সোনাই, বেলিয়াঘাটা ও ভবানীপুরে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে  বাজার স্থাপন করেছিলেন এবং কালীঘাটের নির্মাণ করেন ।

ধর্মচর্চার জন্য দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির তিনিই নির্মাণ করেন।মা ভবতারিণীর মন্দির ১৮৫৫ সালে ৩১ মে বৃহস্পতিবারে স্নান যাত্রার পুণ্য তিথিতে প্রতিষ্ঠা হয়।যা এক সময় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের লীলাক্ষেত্র

রাণী রাসমণির জানবাজারের বাড়ির দুর্গাপুজো কলকাতার বিখ্যাত পুজো। ষষ্ঠীর দিন কলাবৌ স্নানকে ঘিরে ব্রিটিশ সাহেবের সঙ্গে কলহ বেধেছিল। রাণী রাসমণির প্রধান পুরোহিত সেই ষষ্ঠীর ভোরে এসে রানিকে জানান যে কলাবৌ স্নানের সময় ঢাক-ঢোলের শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মামলা ঠুকেছেন এক ব্রিটিশ সাহেব। পরেরদিন আরো লোকলস্কর আর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে রানি গঙ্গাস্নানে পাঠান মহিলাদের। তাতে আরো ক্ষুব্ধ হন সাহেব। এমনকি পঞ্চাশ টাকা জরিমানাও হয় রানির। এর প্রতিশোধ নিতে বাবুরোডের দুপাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে গাড়ি-ঘোড়া যাওয়ার পথ আটকে দেন রাণী রাসমণি। অবশেষে রাণীর সঙ্গে মীমাংসা করে নেন সেই সাহেব।


জমিদারি শাসন থেকে সমাজ সংস্কার,ধর্মাচারন থেকে সমাজসেবা সবেতে অত্যন্ত নিপুনা মহিয়ষী রাণী রাসমণি ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, কালীঘাটের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাণীমা সাধারণ মানুষের প্রতি দয়া-মায়া থাকার জন্য তিনি ‘লোকমাতা’ সম্মান লাভ করেন।

লোকমাতা রাণী রাসমণিকে জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছে এখন সংবাদ পরিবার

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News