Select Language

[gtranslate]
১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার ২৮শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

।। ছড়া ছন্দসী ।।

সুদর্শন নন্দী

ছড়া সাহিত্যের একটি শাখা। সমাজ, প্রকৃতি, বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে উচ্চারিত ছন্দময় ছোট ছোট কবিতাকে ছড়া বলা যেতে পারে । ছড়ার কথা বললেই শিশু কিশোরদের জন্য উপাদেয় ছন্দ-সুরম্য কবিতার কথা মনে পড়ে। এই বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতনের মধ্যে বাংলা ছড়া অন্যতম। আটের শিশুর শৈশবে পড়া মজার ছড়ার আনন্দ আশিতে গিয়েও যে হাসি মুখে উপভোগ করেন ছড়াপ্রিয়রা তা বললে বাহুল্য হবে না। কবিগুরু থেকে শুরু করে যোগীন্দ্রনাথ সরকার, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কামিনী রায় প্রমুখের ছড়া আপামোর বাঙালির মুখে মনে পেস্ট করা আছে যা আজীবন ডিলিট হয় না সুখময় স্মৃতি থেকে। আবার সুকুমার রায়ের মজার ননসেন্স ছড়াগুলি বাঙালির জীবনসঙ্গী বল্লেও অত্যুক্তি হবে না। তাঁর লেখা আবোল তাবোল ছড়ার বইটি শুধু বাংলা সাহিত্যে নয় বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার স্থান করে নিয়েছে।


জ্বলদর্চি প্রকাশিত লেখিকা মায়া দে’র ‘ছড়া ছন্দসী’ বইটির ছড়াগুলি পড়তে গিয়ে উপরের কথা কয়েকটি বলতে হল বাংলার ছড়ার দিকটির ওজন বোঝাতে। সেই ওজনদার, মুল্যবান ধারায় নতুন কোন কিছু সংযোজিত হলে তার আলোচনায় পূর্বসূরিদের উল্লেখ করতেই হয়।
যিনি ছড়া লেখেন তাঁকে ছড়াকার বলা হয়। সেই হিসেবে লেখিকা একজন ছড়াকারও। তাঁর ছড়া শিশুদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে লেখা হলেও বড়রাও আনন্দ পাবেন বলা যেতে পারে। যদিও কিছু কিন্তু’র উল্লেখ করব আলোচনায়।
লেখিকা বইটির একেবারে প্রথমেই জানিয়েছেন“ ছড়া হলো ছন্দে গড়া। আজগুবি, উদ্ভট, অসম্ভব, অতি হাস্যকর, অতি বাস্তব, অতি অবাস্তব সবকিছু নিয়েই ছড়ার চলন- গমন। মনের এক প্রগাঢ় রসবোধ থেকে ছড়ার সৃষ্টি। রসিক জনের কাছে ছড়া কেবল মজার বিষয় শুধু তা নয়, ছড়া মনের আরাম, মনের আনন্দ। ছড়া মন খারাপের মলম। সকলেই ছড়াকে সঙ্গী করে এক অনাবিল আনন্দ মুখর ছন্দময় জীবন কাটাতে পারেন। তাই আমি মায়া দে, ছড়াকার হিসেবে আমার প্রচেষ্টা, ছড়াকে সকলের মনের অন্দরে পৌঁছে দেওয়া। এই প্রচেষ্টা যদি সার্থকতা পায়, তবে আমার “ছড়া ছন্দসী” এই ছড়ার বই প্রকাশ ও সার্থকতা পাবে।”…
প্রথমেই বইয়ের প্রচ্ছদটি তারিফ করতে হয়। বেশ চিত্তাকর্ষক; শিশুমনকে প্রচ্ছদটি আকর্ষিত করবেই এ আমার ষোল আনা বিশ্বাস। সেজন্য প্রচ্ছদকার সুরজিৎ সিনহার প্রশংশা করতেই হয়। আসি বইটির ছড়াগুলি বিষয়ে। বেশিরভাগ ছড়াই ছোটবড় সবার যে ভালো লাগবে তা মোটামুটি বলা যেতে পারে।
হেমন্ত লক্ষ্মী, নিধু বাবু, চড়াই বউ, হাসির বাজার ছড়াগুলি পাঠকের মনে দাগ কাটবে।
চড়াই বউএ লেখিকা লিখেছেন-
চড়াই বউ চড়াই বউ
ঘরে আছিস নাকি?
বাইরে আয় গল্প করি
ডাকে ফিঙে পাখি।
চড়াই বউ ঘোমটা টেনে
বসলো দাওয়ায় এসে
পিঁড়িখানা বাড়িয়ে দিল
ফিঙে বউয়ের পাশে।…।
এই ছড়া শিশুমনকে যে আকৃষ্ট করবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তেমনি মন টানে বিদ্যাসাগর ছড়াটি।
মেদিনীপুরের খাঁটি রত্ন
সবার হৃদয় মণি
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
নামেই যারে চিনি।
দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর
তুলনা তাঁর নাই
আর্ত মানুষে করেছো সেবা
হৃদয়ে দিয়েছো ঠাই।…।
তেমনি ‘মনোহারি ছাতা’র ছড়া বেশ বাহারি ভাবেই উঠে এসেছে বইএর পাতায়। শিশু থেকে কিশোর, আঁট থেকে আশি সব পাঠকরেই রেশ থেকে যাবে পাঠ্য আনন্দে।
মজা রয়েছে ভূতের পুতের বিয়ে ছড়াটিতেও। শাকচুন্নির ঝিয়ের সাথে ভূতের ছেলের বিয়েতে ছড়াকার যেন পাঠককে বরযাত্রী করে টেনে নিয়ে যান তাঁর ছড়া-ছন্দসীর ছাতনা তলায়।
তবে বেশ কিছু ছড়ায় আরও যত্নবান হলে ভালো হত। কিছুদিন ফেলে রেখে বারবার সম্পাদনা করলে মনে হয় সেসব ভুল শুধরে যেত। কিছু কিছু ছন্দ মিল মনে হয়েছে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যা খাপছাড়া লেগেছে। কিছু অন্ত্যমিল অতৃপ্তি ডেকে এনেছে। পাঠক এতে হোঁচট খেয়ে আনন্দের খেই হারিয়ে ফেলবেন।
“বাসা ভাঙা পাখি ছানা” ছড়ায় লিখেছেন-
ছটফট ছটফট
একরত্তি পাখিটা
প্রাণ যেন যায় যায়
ছোঁ দিল কাকটা।
দুই হাতে তুলে নিয়ে
এক বুক মমতায়
ভালোই লাগে না কিছু
শুধু ডানা ঝটকায়…।।
এরকম বেশ কিছু ছড়া পাঠকের কতটা ভালো লাগবে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বইটির অলংকরণ প্রশংসনীয়। রেখার গুণে পাঠক যে তৃপ্ত হবেন তা বলাই বাহুল্য। ঝকঝকে ছাপা এই ছড়ার বইটি বহুল প্রচার কামনা করি।

গ্রন্থঃ ছড়া-ছন্দসী
লেখকঃ মায়া দে
প্রকাশকঃ জ্বলদর্চি
প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ সুরজিৎ সিনহা
পরিবেশকঃ শব্দরঙ
মুল্যঃ ১৫০ টাকা
*****

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read