মেয়েদের স্কুলশিক্ষা
দেশ জুড়ে সচেতনতা অভিযান শুরু করছে ক্রাই
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার কোনও বিকল্প নেই। দেশের প্রতিটি মেয়ে যাতে অন্তত স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা গড়ে তোলার ডাক দিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রাই – চাইল্ড রাইট্স অ্যান্ড ইউ।
শিশুদের আবশ্যিক ও অবৈতনিক শিক্ষার অধিকার আইন (রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট) ২০০৯ প্রতিশ্রুতি ছিল, ছয় থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতায় আনা হবে। গত দেড় দশকে সেই লক্ষ্যে অনেকটাই অগ্রসর হওয়া গিয়েছে। ২০২০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির ঘোষণায়, বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকারকে ১৮ বছর বয়ঃসীমা পর্যন্ত সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু, সরকারি তথ্যই বলছে, শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার ১৫ বছর পূর্তিতেও দেশের সব শিশুর কাছে, বিশেষত মেয়েদের মধ্যে, শিক্ষার অধিকার পৌঁছে দেওয়া যায়নি। গত কয়েক বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার অনেকটা বাড়লেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের স্কুলছুটের চিত্রটি উৎসাহব্যঞ্জক নয়। ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন-এর (ইউডাইস প্লাস) ২১-২২ সালের তথ্য অনুসারে দেশের প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে তিনজন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছয়।
বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে, শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের অন্যতম প্রধান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রাই – চাইল্ড রাইট্স অ্যান্ড ইউ জাতীয় স্তরে একটি ক্যাম্পেন শুরু করেছে। ক্রাই-এর তরফে জানানো হয়েছে, ২৪ জুন থেকে দেশের ২০টি রাজ্যে ‘পুরি পঢ়াই, দেশ কি ভালাই’ নামে এই জনসচেতনতা অভিযান শুরু হয়েছে, চলবে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত। দেশের প্রতিটি মেয়ে যাতে অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও উদ্যোগ গড়ে তোলাই এই অভিযানের লক্ষ্য। মেয়েদের স্কুলশিক্ষা সম্পুর্ণ হলে তা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পক্ষে, এবং দেশের সামগ্রিক উন্নতির পক্ষে কতটা সহায়ক হতে পারে, মানুষকে তা বোঝাতেই এই কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে, ক্রাই তার সহযোগী সংস্থাগুলিকে নিয়ে রাজ্যে-রাজ্যে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। চলছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও স্থানীয় প্রশাসনের পদাধিকারীদের উদ্যোগী করে তোলার কাজও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমা ব্লক অফিসে স্থানীয় বিধায়ক সমীর কুমার জানা, পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনুশ্রী মন্ডল, সহ-সভাপতি রাজবাহাদূর সিং, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ্য কূলদীপ বর্মন, যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌমিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, ক্রাই-এর এ্যাসোসিয়েট জেনারেল ম্যানেজার সুশান্ত চক্রবর্তী, প্রোগ্রাম ম্যানেজার আকাশ গাঙ্গুলী এবং কাজলা জনকল্যাণ সমিতির জেলা কো-অর্ডিনেটর বিবেকানন্দ সাহু, প্রমুখের উপস্থিতিতে কাজলা জনকল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় ‘পুরি পঢ়াই, দেশ কি ভালাই’ নামে জনসচেতনতা অভিযান শুরু করা হলো। উপস্থিত শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া একটি করে চারা গাছ। উপস্থিত শিশুদের মধ্যে পাথরপ্রতিমা ব্লকের গোপালনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুশ্রীতা দাস বলে- “যতদিন বাঁচবো ততদিন পড়াশুনা করবো এবং দেশ গড়বো।“
বিধায়ক সমীর কুমার জানা বলেন – ক্রাই-এর অভিনব জনসচেতনতা অভিযানকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কন্যাশিশুদের অগ্রগতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার সর্বদা অগ্রনী ভূমিকা গ্রহণ করেছে, ক্রাই-র এই উদ্যোগকে যৌথভাবে ব্যাপক প্রচারের জন্য রাজ্য সরকারের দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সৌমিত্র গঙ্গোপাধ্যায় বলেন- কন্যা শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারীভাবে নানা প্রকল্প চালু রয়েছে, কিন্তু এখনো মেয়েরা বাল্যবিবাহ, পাচার ও পণপ্রথার শিকার। আমরা এই অভিনব উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং ব্লকের সকল কন্যাশিশুকে শিক্ষার আঙিনায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করব।