১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিন দিনের ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এন্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউনিয়নের ১৭ তম সাধারণ সভা হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলে স্মৃতি বিজড়িত কাঁথি শহরের টাউন হলে ।১৩ সেপ্টেম্বর ডাব্লিউ বি এম এ এস আর ইউ র সাধারণ সম্পাদক বাসব রায়চৌধুরী সম্পাদকীয় প্রতিবেদন এবং কোষাধ্যক্ষা টিংকা মাঝি আয় ব্যয়ের হিসাব রাখেন। ৩০৩ জন বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৪২ জন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন । সভা মঞ্চ থেকে দশটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয় । জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক বাসব রায়চৌধুরী জবাবী ভাষনে বলেন, দেশব্যাপী আর্থিক অবনমন ঘটছে । ব্যাপক হারে ওষুধ সহ বিভিন্ন শিল্পের মন্দার চিত্র প্রকট এবং ক্রমবর্ধন। ফলে গণছাঁটাই বেড়ে চলছে। বাদ যায়নি আমাদের কর্মস্থলের কর্মীদের ছাটাই এবং শাসানি, সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক, ভিক্টিমাইজেশন, ট্রান্সফার, কোম্পানি ক্লোজার ইত্যাদি। প্রতিদিন এই সব ঘটনা ঘটে চলছে। কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতি মানুষের জীবনকে ওষ্টাগত করেছে। অপরদিকে শ্রমিক শ্রেণীর অর্জিত অধিকার খর্ব করার জন্য মালিকপক্ষ সচেষ্ট। এই অবস্থায় লাগামহীন আন্দোলনে জোটবদ্ধ ট্রেড ইউনিয়নের প্রয়োজন ।
কাঁথি জেনারেল কাউন্সিল সভার শেষে এক সাংবাদিক বৈঠকে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এন্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়নের নেতৃত্বগণ বলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের শ্রম কোড বাতিল করতে হবে । এই সরকার দেশের ৪৪ টি শ্রম আইনের ১৫ টি পণ্য আইনের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে অবলুপ্তি ঘটিয়েছে। ২৯ টি শ্রম আইন চারটি শ্রম কোডে ভাগ করে সংসদীয় আইনের প্রণীত হয়েছে । ফলে শ্রমিক বিরোধী এই কোডগুলি কর্তৃপক্ষের কাজের মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কমানোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। যার ফলে ছুটি ,নিয়োগ ,সেলস প্রমোশন কর্মীরা হারাচ্ছেন । কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী ও শ্রমিক বিরোধী নীতির ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দরীদ্র সীমার নিচে বাস করেন। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত ওষুধ বিষয়ক নীতির কারণে এনপিপিএ ‘ র আইনে থাকা ওষুধ সহ সমস্ত ধরনের ওষুধের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উচ্চ রক্তচাপ ,ডায়াবেটিস সহ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় দীর্ঘস্থায়ী রোগের ওষুধ আমাদের দেশের দরিদ্র প্রান্তিক অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের সারা বছর যে ওষুধ খেতে হয় তা কেনার জন্য এই খরচ মেটানোর কঠিন হয়ে পড়ে। ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতিবছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে চলছে। শুধু তাই না সরকার এর ওপর জিএসটি বসিয়ে সাধারণ গরিব মানুষের জীবন দায়ী ওষুধের উপর মুনাফা লুটছে। কেন্দ্রের মোদি সরকার ডিপিসিও তে ওষুধের দাম পাইকারি মূল্য সূচক অনুযায়ী বাড়ানোর অনুমতি দিয়ে ওষুধের দাম কে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে চলে গেছে। ভারতবর্ষে ওষুধের বর্ধিত দামের উপর পাঁচ শতাংশ ,বারো শতাংশ ,আঠারো শতাংশ জিএসটি চাপানো সরকারের এই জনবিরোধী নীতির প্রতিফলন। এছাড়া সাংবাদিক বৈঠকে তারা বলেন ওষুধ কোম্পানিগুলো ফিল্ড কর্মীদের উপর নানান রকম শর্ত চাপিয়ে তাদের মানসিক নির্যাতন ,এমনকি কর্ম থেকে ছাটাই এর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । তাই মালিক এবং সরকার পক্ষে শোষণ যত বাড়বে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের শক্তিকে হাতিয়ার করে শ্রমিক শ্রেণীর সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নেতৃত্বরা দাবি করেন পশ্চিমবঙ্গ সেলস প্রমোশন এমপ্লয়ীদের জন্য ন্যূনতম বেতন এবং নির্দিষ্ট ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ নয় ,আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলেও তাদের কোন ওভারটাইম নেই। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শুভ্রাংশু ভট্টাচার্য ,সাধারণ সম্পাদক বাসব রায়চৌধুরী, কোষাধাক্কা টিংকা মাঝি, এফ এম আর আই সাধারণ সম্পাদক শান্তনু চ্যাটার্জী, শুভময় চক্রবর্তী,পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সংগঠনের সম্পাদক কিংকর সামন্ত, সভাপতি মিঠুন চক্রবর্তী । আন্তর্জাতিক গানের মাধ্যমে প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভার সমাপ্তি ঘটে এবং কাঁথি লোকাল কমিটির তরফ থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ডেলিগ্রেসদের গার্ড অফ অনার দেয়া হয়।