সিপিআইএম পার্টির বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য এবং পার্টির সদ্য প্রাক্তন এরিয়া কমিটির সম্পাদক, শিক্ষক নেতৃত্ব হরপ্রসাদ ত্রিপাঠী( ৬৭) জীবনাবসান হয়েছে আজ সকাল ৭ . ১৫ মিনিটে কাঁথির মনোহরচক এর বাসভবনে। তিনি সারা জীবন ধরে একত্রিত পরিবারে বড় হয়ে পার্টিকে একত্রিত পরিবারের মত মনে করে সঙ্ঘবদ্ধ ও যৌথ সিদ্ধান্ত কে গুরুত্ব দিয়ে পার্টি সমৃদ্ধির কাজে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে নিযুক্ত করেগেলেন । হরপ্রসাদ ত্রিপাঠি ১৯৫৮ সালে একুশে জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাগোট গ্রাম পঞ্চায়েতের কাপাসদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে এস এফ আই ছাত্র নেতৃত্ব ছিলেন। অবিভক্ত মেদিনীপুরে এস এফ আই র জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালে কাঁথি পি কে কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।পরবর্তীকালে তিনি কাঁথি হরিসভা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতা করেন ।পাশাপাশি যুব এবং শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্র অবস্থায় তিনি ১৯৭৮ সালে সিপিআইএম পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন ।পরে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব হিসেবে উঠে এসে অবিভক্ত কাঁথির রিজিওনাল কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে যুক্ত থেকে পরবর্তীকালে তিনি কাঁথি জোনাল কমিটির সম্পাদক ও পরবর্তীকালে এরিয়া কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ।
গত ৮ জানুয়ারি ২০২৫ কাঁথিতে এরিয়া কমিটির সম্মেলনে পার্টিকে আরো সুদৃঢ় এবং মানুষের কাছে মার্কসবাদী মতাদর্শ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে সংগঠনের দায়িত্ব দেয়ার জন্য তিনি এরিয়া কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি পার্টির জেলা কমিটির সদস্য। আগামী ৩১ শে জানুয়ারি ২০২৫ পার্টির জেলা সম্মেলন উপলক্ষে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় মিটিং মিছিল সংঘটিত করে আসছেন। গতকাল কাঁথি শহর এরিয়া কমিটির মিটিং শেষে বাড়ি ফিরে যান রাতে।সকাল ৭.১৫ নাগাদ হঠাৎ শরীরে অসুস্থতা অনুভব করেন ।অল্প সময়ের মধ্যে কাঁথির বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে পার্টির নেতৃত্ব এবং অগণিত শ্রমিক কর্মচারী সাধারণ মানুষ পৌঁছে যান। পূর্ব মেদিনীপুর পার্টি জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি সহ জেলা সম্পাদক মন্ডলী শোক প্রকাশ করেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। হিমাংশু দাস ও তার সর্বক্ষণের সাথী পার্টির জেলা নির্ধারণ কানাই মুখার্জি সুকুমার সেনগুপ্ত ভবনে তার মরদেহে রক্ত পতাকা দিয়ের শ্রদ্ধা জানান ।রাজ্য নেতৃত্ব রবীন দেব ,মিনতি ঘোষ সহ অনেকেই তার আকস্মিক মৃত্যুতে হকচকিত হয়ে যান ও শোক প্রকাশ করেন।তার মৃত্যুর খবরে মরদেহে এসে মালা দেন কাঁথি লোকসভার সদস্য সৌমেন্দু অধিকারী ,তার এককালে ছাত্র অবস্থায় বন্ধু কাঁথির বিধায়ক অরূপ কুমার দাস ,ছাত্র অবস্থা থেকে বন্ধুত্বে থেকে বড় সিপিআইএম পার্টি সদস্য অধ্যাপক অরুন কুমার দাস, প্রাক্তন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ, পার্টির জেলা কমিটির সদস্য সব্যসাচী জানা, সুরঞ্জন গিরি। নেতৃত্ব প্রণব পন্ডা, ভবানী বেরা, রুদ্র মাইতি ,বিশ্বনাথ রায় , কাঁথি এরিয়া কমিটির সম্পাদক দীপক প্রধান, মানিক জানা যুবনেতা অর্ণব মাইতি, দেশপ্রাণ এরিয়া কমিটির সম্পাদক তাপস মিশ্র, সনজিৎ রঞ্জন দাস,নীলকন্ঠ দলাই, সহ অন্যান্য নেতৃত্ব । সিআইটিইউ অফিসে রক্ত পতাকা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান জয়দেব পন্ডা । পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক প্রণব করন , পশ্চিম এরিয়া সম্পাদক হিমাদ্রি মাইতি কাঁথি বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশীষ পাহাড়ি, প্রাক্তন পৌর প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতি, বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রদীপ কুমার মান্না, সহ বহু মুগ্ধ ব্যক্তি ।এক সময় কাঁথি র প্রাক্তন এরিয়া কমিটির সম্পাদক প্রশান্ত পাত্র তার মৃত্যুর খবর শুনে সকালে তার বাড়িতে এসে মাল্যদান করেন ।একসময় ছাত্র সহযোদ্ধা সুবর্ণপন্ডা অসুস্থ অবস্থায় তার মৃত্যুর খবর পেয়ে শোক প্রকাশ এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ।গভীর শোকাহত অবস্থায় তার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাকে পার্টির জেলা নেতৃত্ব কানাই মুখার্জি তার মরদেহে রক্ত পতাকা দিয়ে তাকে শেষ বিদায় জানান। শ্রদ্ধা জানায় ছাত্র যুব নেতৃত্ব এবং কাঁথি পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সৌমজিৎ দাস, কুনাল দাস।বর্তমান এরিয়া কমিটির সদস্য মন্ডলীসহ পার্টির নেতা এবং বামফ্রন্টের সিপিআই, আরএসপি সহ দলগুলো শেষ শ্রদ্ধা জানান । তার মরদেহ তার বিদ্যালয় কাঁথি হরিসভা হয়ে কাঁথির সিআইটিউ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ,দোকান কর্মচারীদের অফিস , কাঁথি ব্যবসায়ী সমিতির অফিস, সি আই টি ইউ রিজনাল অফিস হয়ে কাঁথি সুকুমার সেনগুপ্ত ভবন পার্টি অফিসে বিকেল পর্যন্ত মরদেহ শায়িত্ব রাখা হয় । বিকেল চারটের পরে তার সব বাহি গাড়ি রওনা দেয় কাপাসদা গ্রামের বাড়ি র উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ৬৭ টি অর্ধনমিত পতাকা বাহি একটি শোক মিছিল গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছায়।
ঘাটুয়া পার্টি অফিস হয়ে তার গ্রামের বাড়ি কাপাসদায় সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মৃত্যু কালের রেখে গেলেন স্ত্রী, এক পুত্র এবং কন্যা সহ একান্ন পরিবারের ভাই-বোনদের গুণমুগ্ধ মানুষজন ও।