Select Language

[gtranslate]
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঠাম্মার নীলচে পাথর ।।

সায়ন্তনী দাস ধর ‘-” আর কতকাল জ্বালাবি আমায়? লোকের কাছে তো মুখ দেখাবার জো নেই! কি করে এত খারাপ রেজাল্ট করিস? আমাদের বংশের সকলেই পড়াশোনাতে তুখোড়। তুই কিভাবে এত আলাদা হলি?” তিয়ার পিঠে খান চারেক কিল বসিয়ে তার মা চিৎকার করে বলতে থাকেন।
মেয়েটা অঝোরে কেঁদে চলে। সত্যিই, কেন যে সে পরীক্ষায় ভাল করতে পারে না! পড়তে বসলেই যে অক্ষরগুলো তাকে ভ্যাংচাতে থাকে, লাল চোখ করে তাকায়! পড়তে একটুও ভাললাগে না তার। কি করবে সে?
তিয়ার বাবা রেগে ওঠেন, “হাসপাতালে ওর জন্মের সময় বোধহয় কেউ পাল্টাপাল্টি করে দিয়েছিল! ও আমাদের মেয়েই নয়! আমাদের বংশে এত খারাপ পড়াশোনায় কেউ তো নেই।”
” ফেলে দাও আমাকে তাহলে…” কাঁদতে কাঁদতে ছুটে পালায় তিয়া।
” মেয়েটাকে আর কত বকবে তোমরা? মুখে যা আসে তাই বলছ? এভাবে কি কোন সুরাহা হবে?” ঘরে ঢুকে গম্ভীর গলায় বলেন তিয়ার ঠাম্মা।
পদ্মদীঘির পাড়ে বসেছিল তিয়া, একা। মনের মধ্যে অভিমানের বরফ! কেউ তাকে ভালবাসে না! শুধু পড়াশোনা দিয়েই ভালত্ব বিচার করে সবাই! সে যে বাবা মায়ের সব কথা শোনে, মাকে সব কাজে সাহায্য করে, ঠাম্মার যত্ন করে… এগুলো বুঝি কিছুই নয়? খালি পড়াশোনাটা করতে তার ভাললাগে না! তাতেই সে এত খারাপ? আর… আর বাবা কি যেন বলল? হাসপাতালে পাল্টাপাল্টি? উঃ! আর ভাবতেই পারছে না সে!
” দিদিভাই, কি করছ একা একা?” ঠাম্মা কখন এসে হাজির হয়েছেন, বুঝতেই পারেনি তিয়া!
” দিদিভাই, তোমাকে আজ একটা জিনিস দেব… তার আগে কিছু কথা বলব, মন দিয়ে শোন।” তিয়াকে কাছে টেনে বলতে থাকেন ঠাম্মা, “ছোটবেলায় আমারও পড়াশোনায় একদম মন বসত না। সকলে খালি বকাবকি করত! রাগ করে গুরুজির আশ্রমে চলে গিয়েছিলাম। গুরুজি আমাকে এটি দিয়ে বলেছিলেন, সবসময় আমি যেন এটিকে সামনে রেখে পড়াশোনা করি। তাহলেই কেল্লাফতে! আমি তো এটিকে কক্ষনো কাছছাড়া করতাম না। আর গুরুজির কথামতো চলে ধীরে ধীরে আমার পরীক্ষার ফলও ভাল হতে লাগল। সকলে অবাক হয়ে গেল। কখনও একে আমি কাছছাড়া করিনি। আজ তোমায় দিলাম, দিদিভাই। যত্ন করে সবসময় কাছে রেখো আর একে সামনে বসিয়ে পড়াশোনা কোরো। এর কথা কাউকে বোলো না, তাহলেই এর গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। ” এই বলে অদ্ভুত একটি নীলচে পাথর ঠাম্মা তিয়ার হাতে দেন।
তিয়া অবাক হয়ে দেখে পাথরটাকে।
এক বছর পর…
পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা গেল তিয়া দারুণ করেছে। বাড়ির সকলে আনন্দে মাতোয়ারা। তিয়া এসে জড়িয়ে ধরে ঠাম্মাকে।
” সারাজীবন এমনই মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, নইলে এই পাথরের গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। তোমার পরবর্তী প্রজন্ম যদি ভাল করে পড়াশোনা না করে, তাদের হাতেও একে তুলে দিতে হবে তো!”
” আমি এখন থেকে মন দিয়েই পড়ব, ঠাম্মা। আমি কথা দিলাম।” তিয়ার কথা শুনে নিশ্চিন্ত হন ঠাম্মা, বাচ্চাদের বোঝানোর জন্য কতরকমের ছল যে করতে হয়!

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read