Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। প্রতিবাদী মা ।।

নীলা বল :- ঘর ভর্তি আত্মীয়– স্বজনেরা আছেন,” এক মাত্র মেয়ে জয়ার বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে গেছে।সন্ধ্যায় মেয়ের বাবা, কাকা, জ্যাঠারা মিলে মেয়ের বউ ভাতে যাওয়ার লিস্ট বানাতে বসেছেন, পরের দিন মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে কে, কারা যাবে এই নিয়ে নাম নিয়ে লেখা শুরু।

মেয়ের শ্বশুর মহাশয় গতকাল ছেলের বিয়ে সেরে ফিরে যাওয়ার সময় ঐ বাড়িতে যাওয়ার নেমন্তন্ন কার্ড দিয়ে জয়ার মা– বাবা অন্যান্য অনেক কে বার, বার যাওয়ার কথা বলে গেছেন।”
তা সত্তে ও মেয়ের মায়ের নাম লিস্টে নেই।

কেবল মা নয় জয়ার জ্যেঠিমার নাম টা ও নেই।
তাতে কি? জ্যাঠিমা যেতে ও চান না,” নিজের মেয়ের বিয়েতেও যান নি।ওনি একান্নবর্তি পরিবারে দেখে এসেছেন,” মেয়ের মায়েদের নাকি মেয়ের বউ ভাতে যেতে নেই, এইটাই সব সময়ই শুনে এসেছেন।সুধা ( মেয়ের মা) বড় জাকে বলে, দিদি তোমাকে ও কিন্তু কালকে যেতে হবে।যেই না বলা ব্যাস জয়ার জ্যাঠা মহাশয় একটু জোর আওয়াজে বলেন ,” তুমি যে কি বল?” মেয়ের মা, জ্যাঠিরা যায় না।


সুধা এবার চুপ করে থাকতে পারে না, বরাবরের মতন এইবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করে।দাদা কে বলেছে মেয়ের মা যায় না? এই রকম কোন নিয়ম আছে বলে তো মনে হয় না।কেন গেলে কি হয় বলুন?” তার বর পাশ থেকে বলে চুপ কর সুধা।সুধা বলে এইসব নিয়ম আমি মানব না বলে দিলাম আমি আগামী কাল মেয়ের বউ ভাতে যাবো।

সুধার দেয়র বলে,” মেজ বৌদি আসলে দিদি আর বোনের বিয়েতে ও কখনো মা, জ্যাঠিরা যেতেন না।যেতেন না নাকি যেতে দেওয়া হোতো না?” সবাই চলে গেলে বাড়ি পাহারা কে দেবে, তাই তো মা, জ্যাঠিরা পাহারাদারের মতন থাকতেন,” তাদের মুখ খোলার কোন জো ছিল না।কিন্তু মেয়ের জন্ম দিলাম আমি, তার দেখাশুনা, পড়াশুনা পাশে বসিয়ে আমিই করালাম। আর এখন মেয়ের বাড়িতে সব কিছু দেখার দায়িত্ব ও আমার আছে।সুধা দেখছে তাদের জায়েদের ও যাওয়ার খুব ইচ্ছা আছে।তাই ও জোর গলায় বলে কেবল আমি নয় আমরা তিন জা ও যাবো, তোমরা ঘর পাহারা দেওয়ার লোক রেখে যাবে।

সুধার বর মনে, মনে ভাবে সুধার কথাও ফেলে দেওয়ার মতন নয়।কারণ ও বিয়ের আগে থেকে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করত, মেয়ে তারপর ছেলে হওয়ার পর ওদের মানুষ করার জন্য ছেলে- মেয়েদের সমস্ত দায়িত্ব এমন কি কোন মাষ্টার রাখে নি এত বড় করে আজকে এইসব কথা আর মানাবে না।মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, তারপর বিয়ে দিয়েছে, এটা ও ওর দায়িত্ব। কিন্তু কি করব প্রথম থেকে বড়দের কথা মতন চলে এসেছি,” এখন দাদাকে মানাব কি করে জানি না।”

সব কাজ এত সুন্দরভাবে হয়েছে, কালকে তাহলে কি হবে? এই নিয়ে সুধার বরের রাতে কিছুতেই ঘুম আসে না।গতকাল ও বিয়ের কারণে ভালো ঘুম হয় নি।দশ পাঁচ ভাবতে , ভাবতে কখন যেন চোখ লেগে গেছে জানে না।

সুধা ও বর কোন প্রতিবাদ না করে চুপ থাকায়, রাগ করে ধারে পাশে ঘেঁসে নি।সে তো যাবেই যত বাঁধাই আসুক এইটাই জানে। ভোরে উঠে স্নান সেরে পূজার ঘরে ঢুকলে, তার বর অমিত একবার উঁকি মেরে হাঁফ ভাব দেখে গেছে।তার মনটা ও বিষণ্ণ,” সেও তো চাই সুধা যাক।

হঠাৎ ফোনের রিং বাজতেই সুধা দেখে মেয়ের ফোন।মামণি তোমরা সবাই ভালো তো? বাবা কই? শ্বাশুড়ি মা কথা বলবেন বলছেন।” আচ্ছা দিচ্ছি একটু ধর।দেয়রকে দেখতে পেয়ে সুধা বলে ও ছোড়দা তোমার মেজদাকে ফোনটা দাও, জয়ার শ্বাশুড়ি মা কথা বলবেন।

জয়ার শাশুড়ি জয়ার বাবাকে বলেছেন,” দাদা আমি ছেলের বিয়েতে যেতে পারে নি,” কারণ নাতির বিয়েতে পাশে বসে যাবেন বলে আমার মা এসেছিলেন,” কিন্তু মায়ের শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় মা– মেয়ে কেহ যেতে পারে নি।আপনারা সবাই কিন্তু আসবেন।জয়ার মাকে নিশ্চয় আসতে বলবেন।


জয়ার বাবার যেন আনন্দ আর ধরে না!” জয়ার শ্বাশুড়ি মাকে বলেন,” আচ্ছা দিদি আপনি যদি একটু আমার বড়দাকে বলেন, যাওয়ার কথাটা খুব উপকৃত হব।কারণ এখন উনি আমাদের বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ,” ওনার কথাই আমাদের শেষ কথা।হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি, ফোনটা ওনাকে দিন।

বড়দা ও একদম হাসি মুখে বলছেন,” হ্যাঁ সবাইকে নিয়ে যাবো একদম চিন্তা করবেন না।

সুধার ছোট দেয়র, বৌদিকে এসে বলে, বৌদি তোমার মতন সব ঘরে একজন প্রতিবাদী মহিলা হলে আর কিছু চাই না, সব কাজ হয়ে যায়। কেন বলছি জানো বৌদি?” কালকে রাতেই বড়দা আমাকে খগেনকে খবর দিতে বলেছিল, আমরা সবাই বৌভাতের গেলে যেন, খগেন এ বাড়িতে এসে থাকে।সুধা খুব খুশি এখন কোন ঝামেলা ছাড়াই সবাইকে নিয়ে মেয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাবে।

বাস ভাড়া করা হয়েছিল ঘন্টা দুয়েক লাগবে পৌঁছাতে।বাসের ভিতর নাচ, গান নিয়ে সবাই মস্ত।
বড় জা সুধাকে বলেন,” ঐ বাড়িতে কিছু খেও না।মেয়ের মা খাই না।আচ্ছা ঠিক আছে, এখন আনন্দ করতে, করতে চল দেখি।
মেয়ে জয়ার কাছে গিয়ে কত গল্প মায়ের। খুব সুন্দর লাগছে মেয়েকে! এবার এল খাবার ডাক। প্রথমে জল খাবার হয়েছিল।সুধা একটু কফি নিয়েছিল।এবার সবাই খেতে যাচ্ছে, কিন্তু সুধা মেয়ের পাশে বসে আছে।


মেয়ের শ্বাশুড়ি মা এসে নিয়ে গেলেন,” দিদি আসুন ডিনার করবেন।না দিদি আমি খাব না।কেন ভাই! কেন খাবেন না খেলে কি হবে বলুন, আপনি না খেলে আমাদের ভালো লাগবে না, চলুন চলুন।মেয়ে ও বলছে মা খেয়ে নাও, অনেক রাত হচ্ছে, অনেক দূরে তোমাদের যেতে হবে।অগত্যা গেলেন।

সেখানে গিয়ে দেখেন এ মাথা থেকে ও মাথা খাবারের নানা রকমের নিরামিষ, আমিষ নানা রকমের মেনুতে স্টল সাজানো আছে।
ননদরা ডাকছে ও বৌদি এদিকে আসো, চিতল মাছের মুইঠ্যা নাও, কেহ বলে পনির, কেহ আবার মটন ইত্যাদি। সুধা মনে , মনে ভাবে আসতে পেরেছি এইটাই আমার পাওনা।খাওয়া– দাওয়াতো চলতেই থাকবে।আর কিছু চাই না মেয়ে টা যেন সারা জীবন এই রকম হাসি মুখে সবার সাথে থাক।


মুখ বন্ধ না রেখে চাওয়া– পাওয়াগুলি নিজেদের আদায় করতে হয়। কত কিছুর পরিবর্তন হয়েছে, এইসব ব্যাপারগুলো অনায়াসে পরিবর্তন করা উচিত।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read