Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

☘️ কেমন ছিলো স্বামী বিবেকানন্দের জীবনের শেষ সময়টা..? ☘️

| #অজানা_বিবেকানন্দ |

দিলীপ ঘোষ

স্বামীজির মহাপ্রয়াণ হয় ৩৯ বছর বয়েসে ১৯০২ সালে। বেলুড় মঠে তখন রাত ৯ টা ১০ মিনিট। তখন বেলুড় মঠে বা তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে বিদ‍্যুৎ ছিল না। কিন্তু টেলিফোন ছিল তবুও কোন সংবাদমাধ্যম আসেনি এবং পরের দিন বাঙ্গলাদেশের কোন কাগজেই বিবেকানন্দের মৃত্যূ সংবাদ প্রকাশিত হয়নি,এমন কি কোন রাষ্ট্রনেতা বা কোন বিখ্যাত বাঙ্গালী কোন শোকজ্ঞাপনও করেননি।

ভাবতে পারেন..?

স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর স্বল্প জীবনে অপমান, অবহেলা বহু পেয়েছেন, উপেক্ষিত হয়েছেন বার বার। পিতার মৃত্যুর পর স্বজ্ঞাতির সঙ্গে কোর্ট কাছারী করতে হয়েছে তাঁকে। বহু বার হাজিরা দিয়েছেন কাঠগড়ায়।

নিদারুণ দরিদ্রের সংসারে সকালে উঠে অফিস পাড়া ঘুরে ঘুরে চাকরির খোঁজে বেরুতেন। দিনের পর দিন মা কে বলতেন মা আজ রাতে বন্ধুর বাড়িতে খেতে যাবো। প্রায় দিন দেখতেন সংসারে চাল,ডাল,নুন ,তেল কিছুই নেই কিন্তু ভাই ও বোন নিয়ে ৫ টা পেটের খাবার কি ভাবে জুটবে ? মুদির দোকানে ধার করে মাকে এক- দুই দিনের চাল ডাল দিয়ে … মা কে বলতেন আমার রান্না কোরো না.. মা ! দিন দুই বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে কিন্তু.. কোথায় নিমন্ত্রণ ? আনাহার আর অর্ধপেটে থাকতেন তৎ কালীন নরেন্দ্র..

ভাবা যায় !!

চরম দারিদ্রের মধ্যে সারা জীবনটাই টেনে নিয়ে গেছেন। ২৩ বছর বয়েসে শিক্ষকের চাকরি পেলেন মেট্রোপলিটন স্কুলে। যাঁর প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যাসাগর মশাই আর হেডমাস্টার বিদ্যাসাগরের জামাতা। জামাতা পছন্দ করতেন না নরেন্দ্রনাথ দত্তকে .. শ্বশুরকে বলে…“ খারাপ পড়ানোর অপরাধে ” বিদ‍্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিলেন বিবেকানন্দকে। অথছ, যাঁর জ্ঞান, বুদ্ধি, ব্যুৎপত্তি তর্কাতীত, অন্তত সেই সময়েও।

আবার বেকার বিবেকানন্দ। বিদেশেও তাঁর নামে এক বাঙ্গালি গুরু প্রচার করেন .. বিবেকানন্দ বেশ কয়েকটি বৌ ও দশ-বারো ছেলে পুলের পিতা ও এক আস্ত ভন্ড ও জুয়াখোর।

দেশে ও বিদেশে অর্ধপেটে বা অভুক্ত থেকেছেন দিন থেকে দিনান্তে…

চিঠিতে লিখেছিলেন :

“কতবার দিনের পর দিন অনাহারে কাটিয়েছি। মনে হয়েছে আজই হয়ত মরে যাবো … জয় ব্রহ্ম বলে উঠে দাঁড়িয়েছি …. বলেছি …আমার ভয় নেই, নেই মৃত্যূ, নেই ক্ষুধা, আমি পিপাসা বিহীন। জগতের কি ক্ষমতা আমাকে ধ্বংস করে ?”

অসুস্থ বিবেকানন্দ বিশ্ব জয় করে কলকাতায় এলে তাঁর সংবর্ধনা দিতে বা সংবর্ধনা সভা তে আসতে রাজি হয় নি অনেক বিখ্যাত বাঙ্গালী ( নাম গুলি অব্যক্ত রইল) শেষে প্যারিচাঁদ মিত্র রাজি হলেও … তিনি বলেছিলেন .. ব্রাহ্মণ নয় বিবেকানন্দ। ও কায়েত… তাই সন্ন্যাসী হতে পারে না ,আমি ওকে brother বিবেকানন্দ বলে মঞ্চে সম্বোধন করবো।
১৮৯৮, বিদেশের কাগজে তাঁর বাণী ও ভাষণ পড়ে আমেরিকানরা অভিভূত আর বাঙ্গালীরা !

সেই বছরই অক্টোবরে অসুস্থ স্বামীজি কলকাতার বিখ্যাত ডক্টর রসিকলাল দত্তকে দেখাতে যান,(চেম্বার- ২ সদর স্ট্রিট। কলকাতা যাদুঘরে পাশের রাস্তা )। রুগী বিবেকানন্দ কে দেখে সেই সময় ৪০ টাকা ও ঔষুধের জন্যে ১০ টাকা মানে আজ ২০২২ এর হিসাবে প্রায় ১৬০০০ টাকা নিলেন বিবিধ রোগে আক্রান্ত বিশ্বজয়ী দরিদ্র সন্ন্যাসীর কাছ থেকে … বেলুড় মঠের জন্যে তোলা অর্থ থেকে স্বামী ব্রহ্মনন্দ এই টাকা বিখ্যাত বাঙ্গালী ডক্টর রসিকলাল কে দিয়েছিলেন।

আরও আছে …

বিবেকানন্দের মৃত্যুর কোন ফটো নেই। এমনকি বীরপুরুষের কোন ডেথ সার্টিফিকেটও নেই কিন্তু সে সময় বালি-বেলুড় মিউনিসিপালিটি ছিলো।

আর এই municipality বেলুড় মঠে প্রমোদ কর বা amusement tax ধার্য করেছিলো।

বলা হয়েছিল ওটা ছেলে ছোকরাদের আড্ডার ঠেক আর সাধারণ মানুষ বিবেকানন্দকে ব্যঙ্গ করে মঠকে বলতো .. “বিচিত্র আনন্দ” বা “বিবি- কা আনন্দ”। ( মহিলা /বধূ / … নিয়ে আনন্দ ধাম)। এই ছিলো তৎকালীন মুষ্টিমেয় বাঙ্গালীদের মনোবৃত্তি।

সাধে কি শেষ সময় বলে গিয়েছিলেন — “একমাত্র আর একজন বিবেকানন্দই বুঝেতে পারবে যে এই বিবেকানন্দ কি করে গেল।”

আজ আমরা যে বিবেকানন্দকে কে নিয়ে এত মাতামাতি করছি, সেই বিবেকানন্দ কেই নিজের জীবদ্দশাতেই সহ্য করতে হয়েছিলো এত বঞ্চনা এত অপমান। ভালোই হয়তো করেছিলেন স্বামীজী এত তারাতারি এই পৃথিবীকে ত্যাগ করে.. নইলে হয়তো আজকের এইসব লোকদেখানো শ্রদ্ধা দেখে বলতেন ‘আদিখ্যেতা সব..’

♦️তথ্যসূত্রঃ শংকরের অচেনা অজানা বিবেকানন্দ

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read