অতসী দাস :- “কিগো, হল তোমার?”
“বললাম তো এত তাড়াতাড়ি হবে না। রমাদির যেতে এখনো দেরি আছে।”
“কত দেরি? এরপর তো আবার মিষ্টু এসে যাবে স্কুল থেকে।”
“উফ! আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? এমন পাগলামি কেন কর বলতো?”
“যারা এরকম পাগলামি পায় না তারা জানে এর কি কষ্ট। তুমি পাচ্ছো তো মূল্য দিচ্ছ না।”
“আচ্ছা খুব হয়েছে, এখন যাও তো রান্নাঘর থেকে, রমাদি দেখলে হাসবে।”
“ওসব আমি জানিনা। তুমি তাড়াতাড়ি কাজ মেটাও।”
“আচ্ছা দেখছি।”
অফিস ট্যুর থেকে বাড়ি ফিরলেই এমন পাগলামি করে প্রসাদ। এমন করে যেন মনে হয় কত কাল বউকে দেখেনি, বউয়ের সাথে সময় কাটাইনি। যতক্ষণ না পর্যন্ত রুমকি তার সাথে ঘরে ঢুকে দরজা দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার শান্তি নেই। এভাবেই পিছু পিছু ঘুরবে রুমকির। স্বামীর এমন উৎপাতে মাঝে মাঝে বিরক্ত হলেও বেশিরভাগ সময়েই আনন্দ পায় রুমকি। বিয়ের পনেরো বছর পরেও তার প্রতি স্বামীর এমন আকর্ষণ তার গর্বের একটা কারণ।
কয়েক বছর আগেও মিষ্টু যখন ছোট ছিল তখন যখন তখন স্বামীর সাথে ঘরে দরজা দিতে অসুবিধা হতো না তার। স্কুল থেকে ফিরলেই মিষ্টু ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু এখন মিষ্টু বড় হয়েছে। ক্লাস ফাইভে পড়ছে। স্কুল থেকে এসে আর ঘুমাতে চায় না। সেই জন্য প্রসাদ তার পিছু পিছু ঘুরছে যাতে মিষ্টু আসার আগেই মনের বাসনা পূর্ণ করতে পারে। না হলে সেই রাতে মিষ্টুর ঘুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রমাদির যেতে যেতে আজ চারটে বেজে গেছে। আর মিষ্টুও স্কুল থেকে বাড়ি চলে এসেছে। ফলত আজ প্রসাদের মেজাজটা গেছে একটু বিগড়ে। শারীরিক উত্তেজনা থেকে মন ঘোরাতে টিভি খুলে বসেছে সে। কিন্তু একি আর টিভিতে ভোলার জিনিস? অস্থির লাগছে সারাদিন। রাত নটা বাজতেই প্রসাদ রুমকি কে ডেকে বলল,
“আজ শরীরটা ভালো নেই। রাতে তাড়াতাড়ি খেতে দিয়ে দিও।”
প্রসাদের এমন মনোভাবের সঙ্গে রুমকি বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। যে বারই বাড়ি ফিরে সহবাসের সুযোগ পায় না সেই বারই সন্ধ্যে হতেই তার শরীরটা খারাপ হতে শুরু করে। তারপর তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরে। কিন্তু মিষ্টু ঘুমিয়ে পড়ার পর তার সে শরীর খারাপ কোথায় উধাও হয়ে যায়। তখন তার সাথে আর দুরন্ত ঝড়ের সাথে কোন পার্থক্য থাকে না। তাই আজ প্রসাদের কথায় একটু হেসে ঘাড় নাড়ে রুমকি।
রাতের খাওয়া সেরে সাড়ে দশটার মধ্যে শুয়ে পড়েছে সবাই। সারাদিনের পরিশ্রমে রুমকি সবে ঘুমিয়ে পড়েছে। এমন সময় প্রসাদের আদুরে স্পর্শে ঘুম ভেঙে যায় তার। প্রসাদের আহবানে শারা দেয়ার আগে মিষ্টু ঘুমিয়েছে কিনা তা তার গায়ে হাত দিয়ে নিশ্চিত করে সে। তারপর আস্তে আস্তে ঘুরে শোয় স্বামীর দিকে। গোটা দিনের তৃষ্ণা এখন প্রাণ ভরে মেটাতে থাকে প্রসাদ।
ওদিকে মিষ্টুর ঘুম ভেঙে যায় কোনো এক নিষিদ্ধ অনুভূতির ডাকে। পাশে শুয়ে থাকা মানুষ দুটো কি করছে বুঝে উঠতে পারে না ১১ বছরের মেয়েটা। কিন্তু মন বলে, এটা তার দেখা উচিত নয়। তার চোখ খোলা উচিত নয়। উঠে বসে কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। শুধু চুপ করে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকা উচিত। এদিকে বুকের ভেতরটা তার কাঁপছে পাশের মানুষ দুটোর ক্রমাগত নড়াচড়া আর বড় বড় নিঃশ্বাসের শব্দে। কি যেন নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঘটে চলছে তার পাশেই। কিছুটা বা সে আন্দাজ করতে পারছে কিছুটা আবার পারছে না। এমনটা যে আজ প্রথম তা নয়। এর আগেও হয়েছে দুবার। আসল ঘটনাটা যে কি তা সে জানতে পারেনি কারো কাছ থেকে। কার থেকেই বা জানবে? জানার কৌতূহল থাকলেও জিজ্ঞাসা করার মতন সাহস হয়নি, কারণ মন বলেছে এ বিষয়টা ঠিক তার জানার মত নয়। খুব গোপন একটা কিছু। কিন্তু কি এর উত্তর তার জানা নেই।
দিন পনেরো কেটে গেছে। এরমধ্যে আরো দুদিন এমন নিষিদ্ধ অনুভূতির আনাগোনা হয়েছে মিষ্টুর মনে। ইদানিং বেশ কিছুটা বুঝতেও শিখেছে সে। এখন আর আগের মতো পুরোটাই তার অজানা নয়। অন্ধকারেও সে অনুভব করতে পেরেছে চুমু বাবা-মা শুধু তাকেই দেয় না একে অপরকেও দেয়। আর সেই চুমুটা একটু আলাদা রকমই। চোখে না দেখলেও বেশ অনুভব করতে পারে পাশে শুয়ে থাকা মানুষ দুটো নিজেদের জামা কাপড় খোলাপরা করে। কেনই বা খোলে আর কেনই বা পরে সবই তার কাছে ধোঁয়াশা। মনে মনে ভাবে মিষ্টু ক্লাসের সুনীতি তার খুব ভালো বন্ধু। মন খুলে কথা একমাত্র তার সাথেই বলে সে। সুযোগ বুঝে একদিন তাকেই জিজ্ঞেস করতে হবে এই সবের অর্থ।
প্রায় তিন দিন হলো প্রসাদ চলে গেছে অফিস ট্যুরে। হঠাৎ সন্ধ্যাবেলা সুনীতির মা ফোন করেছে রুমকি কে।
“কিগো, ভালো আছো?”
“হ্যাঁ গো, তোমার খবর কি? অনেকদিন তো হলো আমাদের এখানে আসো না। একদিন সুনীতি কে নিয়ে এসো না।”
“যাব গো। আসলে একটা কথা তোমাকে বলবো বলে ফোন করেছিলাম।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলোনা।”
এরপর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে সুনীতির মা। তারপর আস্তে আস্তে বলে,
“তুমি যেন কিছু মনে করো না। আজ স্কুল থেকে ফিরে সুনীতি সবে খেতে বসেছে এমন সময় মিষ্টু ফোন করেছিল। ফোনটা স্পিকারে দেয়া ছিল। মিষ্টু খুব ফিসফিস করে সুনীতি কে জিজ্ঞাসা করছিল,
তোর বাবা তোর মাকে চুমু দেয়?
সুনীতি বলে,
হ্যাঁ রোজ অফিসে যাবার সময় বাবা আমাকে আর মাকে দুজনকেই চুমু দেয়।
তখন মিষ্টু বললো,
সে তো আমার বাবাও দেয়। কিন্তু এই চুমু সেই চুমু নয়।
তাহলে কি চুমু?
ওই যে অন্ধকারে জামা কাপড় খুলে..
এইটুকু শোনার পরেই আমি সুনীতির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মিষ্টু কে বললাম, মিষ্টু সুনীতি এখন খেতে বসেছে। আর খেতে খেতে কথা বলা ঠিক নয়। ও বরং খেয়ে উঠে তোমাকে ফোন করবে। তুমিও একটু রেস্ট করো।”
সুনীতির মায়ের মুখ থেকে কথাগুলো শুনতে শুনতে পুরো শরীরটা অবশ হয়ে আসছিল রুমকির। কোথা থেকে জানল মিষ্টু এসব! তাহলে কি রাতে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে সে! তাদের একান্ত গোপন মুহূর্তগুলো সবই বোঝে সে!
ওদিক থেকে সুনীতির মায়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
“শোনো রুমকি, আমার মনে হয় তোমার আর প্রসাদের মেয়ের সামনে একটু সাবধানে চলা উচিত। ওরা তো এখনো অনেকটাই ছোট, এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা হওয়ার মতন বয়স ওদের হয়নি। আবার একেবারেই যে কোন কিছু বোঝেনা সেটাও নয়। এই বয়সটাই বড় ভয়ঙ্কর। আমার মনে হয় তোমাদের বিষয়টা খুব গুরুত্ব দিয়ে হ্যান্ডেল করা উচিত। দেখো কি করতে পারো। আমার মনে হল বিষয়টা তোমাকে জানানো উচিত তাই বললাম। কিছু মনে করো না যেন।”
শুধুমাত্র একটা ‘হুম’ বলে ফোনটা রেখে দিলে রুমকি। এখন হাজার চিন্তা ঘোরাঘুরি করছে মাথার ভেতর। মিষ্টু যে অনেক কিছুই জেনেছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন কিভাবে ওকে বোঝাবে, কতটাই বা ওকে বোঝানো উচিত, এ ব্যাপারে একেবারেই ধারণা নেই তার। এখনই প্রসাদ কে ফোন করতে হবে। সব কিছু জানাতে হবে ওকে। এখনই মিস্টুকে কিছু বলা যাবে না। ভবিষ্যতে আর এমন হবে না। এবার থেকে সংযত হতে হবে তাদের। বাচ্চা বড় হলে মা বাবাকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়_ একথা ভুলেই গেছিল তারা। প্রসাদ ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু মিষ্টুকে কি ভাবে বোঝাবে তা মাথায় আসেনা তার। বোনকে ফোন করবে বলে মনে মনে ঠিক করে রুমকি। বোন তো সাইকোলজির টিচার যদি কিছু পরামর্শ দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে বেরোনোর পথ খুঁজতে থাকে রুমকি।