Select Language

[gtranslate]
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

।। ভুলের মাশুল ।।

রমা মোহান্ত :- প্রাইভেট কোম্পানীর মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করি । অফিসের কাজের প্রয়োজনে এদিকে সেদিকে প্রায় ই যেতে হয়। ট্রেনের জার্নি তে বোর নিশ্চয়ই হতে হয়, কিন্তু কি আর করা ! চাকরি ইজ চাকরি ! তবে মাঝে মাঝে বেশ মজার ঘটনার সাক্ষী ও হতে হয় । যেমন হয়েছিল সেবার।
সকালের ব্ল্যাক ডায়মন্ড এ ধানবাদ যাচ্ছি জরুরী কাজে। আমার সীট এর পাশে জানলার দিকটা ও সামনের সীটের পুরোটা দখল করে কয়েক জন নানা বয়সের মহিলা সেদিন আমার সহযাত্রীনি । এর মধ্যে দুটি আট দশ বছরের ছেলে মেয়ে এবং পুরুষ বলতে একমাত্র সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা একটি ছেলে । ছেলেটির মুখে যথেষ্ট গাম্ভীর্য ধরে রাখার চেষ্টা। বোধহয় এঁদের পুরুষ অভিভাবকের রোল টি যথাযথ পালন করার চেষ্টাতেই ছেলেমেয়ে দুটি ছটফট করায় কসে ধমক ও দিল । দেখে বেশ মজা লাগছিল । গাড়ি চলা শুরু হতেই মহিলাদের গল্প ও শুরু হলো। এক জায়গায় বসা, তাই প্রায় সব কথাই কানে আসছে। কথা বার্তা শুনে ও লট বহরের বহর দেখে বুঝতে বাকী থাকে না যে এঁরা নিকট আত্মীয়ের বিয়েতে অংশ গ্ৰহণ অন্তে ফিরছেন। সবাই খুব হাসি খুশি , আর সেটাই স্বাভাবিক । সদ্য কেনা ম্যাগাজিন খানায় মন দিয়েছিলাম কানে এলো , ” মামীমা, ব্যথার ওষুধ টা খেয়ে উপকার হলো কিছু ?”
—” আর মা, এই বয়সের বাত কি আর ওই ওষুধে সারে ? শুধু একটু ব্যথার উপশম। হ্যাঁ বৌমা, তোমার হাতে যে চ্যাঙারিটা ছিল, সেটা কোথায় রাখলে ?”
—“ওই যে বাঙ্কে, ওই সামনের দিকটা য় রেখেছি । ওতে কি আছে মামীমা ?”
—” আর বলো কেন, বেয়ান জোর করে লুচি , তরকারি, মিষ্টি একগাদা বেঁধে দিলেন। বললেন, বাচ্চারা আছে, সকালে কেউ খেতে চাইল না, ট্রেনে খিদে পাবে নিশ্চয়ই। এতো করে বারণ করলাম কিছুতেই শুনলেন না। একবার বলে দেখো যদি খায় কেউ !”
—” কাকিমা মানুষ ভীষণ ভালো, তাই না মামীমা ?” বৌমা টি মামী শাশুড়ির সঙ্গে কথার ছেদ টেনে সম বয়সী মহিলা টি ও অল্প বয়সী মেয়ে দুটির সঙ্গে আবার আগের গল্পের সূত্রে ফিরে গেলেন।
–” সত্যি বিনু ঠাকুরঝি, এত আনন্দ করা অনেক দিন মনে থাকবে। আজকাল আর তেমন জমজমাট আগের মতো বিয়ে বাড়ী কটা হয় বলো ? রিসেপশনে সেই এক ক্যাটারিং এর ব্যবস্থা !
এক ধরনের খাবার খেয়ে খেয়ে মুখ পচে যাওয়ার অবস্থা ! এমন ভিয়েন বসিয়ে, ঠাকুর দিয়ে রান্না বান্না আর কোথায় হয় বলো ?”
—” যা বলেছো !’
‌ মামীমা ও মেয়েরা সবাই একটু নীচু স্বরে
নিজেদের মধ্যে জমিয়ে গল্প গাছা শুরু করায়
আমি ও আমার হাতের পত্রিকায় চোখ রাখলাম।

পড়ায় বেশ মনোযোগ দিয়ে ছিলাম । হঠাৎ
–“গরম চা,কফি,কফি -!”আওয়াজ শুনে আমি ম্যাগাজিন বন্ধ করে কফি নিলাম। আমার সহযাত্রীনি রাও কেউ চা , কেউ কফি নিলেন। বৌমা টি ছেলে মেয়েদের লুচি তরকারি খাবার জন্য সাধলেন,অল্প বয়সী ছেলেটিকে ও। কেউ ই তাতে রাজি হলো না। তারা তখন সদ্য কেনা ক্যাডবেরি আর চিপসে মন দিয়েছে । মামীমা বললেন ,
–” আমি তো জানি, বাইরে বেরিয়ে এদের ঘরের খাবার কারুর ই মুখে রুচবে না। এখন গরম সিঙ্গাড়া আসুক , তখন দেখো !” বিনু বললেন,
–” লুচি মিষ্টি না হয় থাকবে , কিন্তু তরকারি টা তো পচে যাবে ।গরম অবস্থাতেই বাঁধা হয়েছে !”
–“কিছু করার নেই ।” কম বয়সী মেয়ে দুটির সম্মিলিত খিল খিল হাসি ।
বর্ধমানে একজন কম বয়সী সুদর্শন ও সুবেশ ভদ্রলোক উঠলেন। ট্রেনে আজ খুব ভীড় । বসার জায়গা না পেয়ে আমাদের সীটের পাশেই দাঁড়ালেন। হাতে একটা ছোট এ্যাটাচি এবং মিষ্টির চ্যাঙাড়ি । গাড়ি ছাড়ার পর দেখলাম, শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে ভদ্রলোকের হাতের দুটো জিনিস সামলাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে । বললাম,
–” জায়গা পেলেন না বসার কোথাও ? যাবেন কোথায় ?”
–” দুর্গাপুর । কোথায় ই আজ জায়গা নেই। এমনি তে ঠিক আছে, দুর্গাপুর আর কত সময় ! কিন্তু এই হাতের এগুলো নিয়ে ই মুস্কিল ! আপনাদের ওখানে যদি একটু জায়গা হতো …!” ভদ্রলোক আমার সামনের ব্যাঙ্কের দিকে ইশারা করলেন । আমার সহযাত্রীনি দের আমার ই সঙ্গের ভেবেছেন বোধহয়। আমি ভুল ভাঙ্গিয়ে ওনাকে বললাম ,
–” জায়গা তো বেশি দেখছি না ওখানে, তবে ওই ঝুড়িটার পাশে আপনার টাও একটু সরিয়ে নড়িয়ে রাখলে , চেষ্টা করে মনে হয়
এঁটে যাবে , তাই না ?আর এটাচিটা এই আমার সীটের পাশে নীচে নিজের পায়ের সাপোর্টে রাখুন।”
ভদ্রলোক আমার কথা মতো তাই করে একটু স্বস্তি পেয়ে আমার দিকে চেয়ে হাসলেন । আমি অনেক- ক্ষণ বোবা হয়ে আছি, তাই এবার ভদ্রলোক এর সঙ্গে আলাপ জুড়লাম ,–” দুর্গাপুরে বাড়ি ?”
-” না , দাদার শ্বশুড় বাড়ি। বৌদি কে আনতে যাচ্ছি।
—” তাই কুটুম বাড়ি তে বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা ?” আমি হাসলাম মজা করে। ভদ্রলোক ও এক মুখ হাসলেন। বললেন, –” হ্যাঁ, বাবা অর্ডার দিয়ে বানিয়েছেন বেয়ানের জন্য। মানে বৌদির মা র জন্য ।উনি খুব পছন্দ করেন কিনা !”
আমার সঙ্গে কথা বললেও ভদ্রলোকের নজর কিন্তু ওদিকে । এটা বয়েসের ধর্ম ।কম বয়সী মেয়ে দুটিও বেশ সুন্দরী স্বীকার করতে ই হবে। আমি মনে মনে হাসলাম । মেয়ে দুটি অবশ্য এর মধ্যে ই জানলার ধারটিতে বেশ একটু পাশ কেটে মুখ ঘুরিয়ে বসেছে। গলার স্বর ও এখন সবার বেশ চাপা । বর্ধমানে অনেক যাত্রী ওঠায় ঠাসা ভীরের মধ্যে র না না শব্দ ,ও নানা কথা বার্তা র মিলিত শব্দে ওদের নীচু স্বরে র কথা বার্তা হাসি ঢাকা পড়েছে অনেক টাই এখন। বই পড়ায় আমি মন দিলাম ।
পড়তে পড়তে বেশ মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম।
তবু খেয়াল হলো, সামনে ষ্টেশন আসছে ।
বই পড়তে পড়তেই বুঝলাম গাড়ির গতি কমে আসছে। বুঝলাম দুর্গাপুর আসছে। হঠাৎ
–“না না, ঠিক আছে–ঠিক আছে, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, আমি ই নিয়ে নিচ্ছি । থ্যাঙ্কয়ু -থ্যাঙ্ক ইয়ু –!” আমার ঘাড়ের উপর চাপ ও পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের কন্ঠস্বরে সচকিত হয়ে চোখ তুলে চাইলাম। ভদ্রলোক প্রায় হুমড়ি খেয়ে ব্যাঙ্কের
উপর থেকে মিষ্টির চ্যাঙাড়ি টা এক ঝটকায় নামিয়ে নিলেন । নিতে অসুবিধা হচ্ছে দেখেই হয়তো –,
সামনের মেয়েটি সাহায্য করতে উঠেছিল । এবার নিজের জায়গায় বসে পড়ল। গাড়ি দুর্গাপুর স্টেশনে সবে দাঁড়িয়েছে । ভদ্রলোক বেশ নায়কোচিত স্টাইল এ এগিয়ে গিয়ে সবার পাশ কাটিয়ে দুর্গাপুর স্টেশনে লাফিয়ে নামলেন ও জানলা দিয়ে উঁকি মেরে আমাকে হাত নেড়ে সহাস্যবদনে বললেন,—
” দাদা, আসছি !” আমি ও হাত নাড়লাম ।
কিন্তু মনে সন্দেহ থেকেই গেল , উদ্দেশ্য কি শুধু মাত্র আমিই ? নাকি …??
আশ্চর্যের কিছু নেই। মেয়ে দুটি বেশ সুন্দরী কিনা …!
দুর্গাপুরের পর থেকে ক্রমেই ভীড় হাল্কা হয়েছে। ওঁদের গল্পের স্টক ও ফুরিয়ে এসেছে রাস্তা
শেষ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে । সেটা ই স্বাভাবিক। কিন্তু তখন ও আমার বোঝার বাকি ছিল, কিছু শঙ্কটের গল্প ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে আসছে । আসানসোলে পৌঁছবার আগে থেকেই আমার সহযাত্রীনিদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। অনেক ছোট বড় লট বহর ওঁদের
সঙ্গে , তো তাই সে সব আগে থেকে
নামিয়ে দরজার কাছে জরো করছেন সবাই মিলে ।
আমিও ভদ্রতার কারণে একটু হাত লাগালাম সাহায্য করতে। ওঁরা ধন্যবাদ ও জানালেন।সবাই
নামবেন আসানসোলে। শুধু বৌমার গন্তব্য ধানবাদ । আমার ও গন্তব্য ধানবাদ ।
ট্রেন স্টেশনে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে খুচরো
জিনিসগুলো যে যার হাতে তুলে প্রস্তুত হচ্ছেন বাদ বাকী মাল পত্র সব কুলির মাথায় যাবে,সে সব কথা ও নিজেদের মধ্যে ই আলোচনা ও
হচ্ছে, ঠিক সেই সময় হঠাৎ বিনুর নিজের হাতের চ্যাঙাড়ি টার দিকে চোখ পড়তেই সেটা উঁচু করে
তুলে ধরে বলে উঠলেন , ” মা , এটা বোধহয়
আমাদের নয় । ভদ্রলোকের সঙ্গে পাল্টে যায় নি তো ? এক জায়গায় তে ই তো ছিল ?”
–” সে কি রে ?” আঁতকে উঠলেন বয়স্কা মহিলা।
–” যা সর্বনাশ ! ছেলেটা নিজের জিনিস দেখে নেয়নি ? একটু ফাঁক করে দ্যাখতো কি আছে । আমাদের তো লুচি তরকারি, মিষ্টি ছিল–!”
–” ওমা ! কোথায় লুচি , এতো সীতা ভোগ, মিহি- দানাতে ঠাসা ঝুড়ি !!”
–” কান্ড দ্যাখো ,- এবার কি হবে ?” মেয়ে দুটি খিল খিলিয়ে হেসে প্রায় গড়িয়ে পড়লো।
হাসি ছাপিয়ে উত্তর দিল, –“কি হবে আর ?
এ সীতাভোগ–আমাদের ভোগে লাগবে ? যাদের ভাগ্যে যা …!!” সবাই হাসছে সমস্বরে । আশপাশের যাত্রীরা যারা গায়ে গায়ে বা ব্যাপার টা অনুধাবন করতে পেরেছেন তারাও মুচকি হেসে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন । আর আমার মুখে তো হাসিই ! আমার হাসি গোপন করার কথা মনেও আসেনি। কারণ, আমি তো মানস নেত্রে আরেক দৃশ্য দেখছি তখন ।
বৌদির মায়ের হাতে হয়তো এতক্ষণে ঝুড়ি টা তুলে
তুলে দিয়ে ছেলেটি বলছে , ” বাবার অর্ডার দিয়ে করানো, বিশেষ করে আপনার জন্য পাঠিয়েছেন ।” তারপর ঝুড়ি খোলার পর..?
এঁরা তো আমার মত সব টুকু জানেন না !! না জানলে ও, হাসাহাসি –ঠেলাঠেলি, নামতে দেরী হয়ে যাওয়া আর শেষে হুড়োহুড়ি র এক শেষ । বৌমা ওদিকে জানলায় মুখ বাড়িয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে জানাতে হঠাৎ ঠিক গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে ই,—
চেঁচিয়ে উঠলেন, “এই নারু, আমার টিকিট কই রে …?
আমার টিকিট দিলি না ? দে দে শিগগিরি দে । গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে যে !” অল্প বয়সী ছেলেটি,নারু ছুটে এসে চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়েই মহিলার হাতে কোন ক্রমে টিকিট টা ধরিয়ে দিল । বৌমা হাতের ব্যাগে টিকিট রেখে হাঁফ ছাড়লেন ।
আমি আবার হাতের ম্যাগাজিন এ চোখ রাখলাম।

গাড়ি ধানবাদ পৌঁছাল। স্বাভাবিক সৌজন্যে বৌমার ব্যাগটা আমিই নামিয়ে দিলাম এবং এরজন্য ধন্যবাদ অন্তে উনি এগিয়ে গেলেন। আমি স্টেশনে নেমে একজন পরিচিত লোকের দেখা পেয়ে মিনিট পাঁচেক কথা বার্তা বলে যখন গেটে র কাছে এসেছি পাশে একটা জটলা মতো মনে হলো। কাজের কথা মাথায় ঘুরছে এখন, ওদিকে আমার নজর দেবার কথা নয়,দিইওনি । তবু পরিচিত নারী কন্ঠ এসে কানে লাগল,–” আপ কো কেয়া হামকো দেখ কর ম্যাড লাগতা হ্যায় ? টিকিট যব কাটা তব ফুল বিনা হাফ কাটে গা কি? আর ধানবাদ না আসানসোলে র লেগা ?বোলতা হ্যায় না ভুল হুয়া ?”বৌমার কন্ঠ নির্ভুল ভাবে। এবার উঁকি মারতেই হলো । বৌমা বিরক্ত ও অসহায় ভাবে সামনে র টিকিট চেকারকে বোঝাবার চেষ্টা করছেন। চেকার ভদ্রলোক টিকিট টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবার দেখে ভ্রু কুঁচকে মুখের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত মুখে প্রশ্ন করলেন,” “আপকো উমর ক্যায়া ?আপ য়্যায়সা টিকিট সেই আনা যানা–!” অসহিষ্ণু নারী কন্ঠে বাধা দিয়ে এবার সাদা বাংলা ,-” আহ্ ! আবার সেই একই কথা ! আচ্ছা জ্বালায় পড়লাম ত ! শুনিয়ে বোলা না হামারা ভাসুরঝি কা সাদি থা।সব আত্মীয় মিলে একসাথে আতা থা ।ও লোক আসানসোল মে নামা ।ভাসুর ব্যাটা ভুল সে এই টিকিট হামকো দিয়া। হাম ভি ভুল সে দেখা নেই ।” চেকার ভদ্রলোক ভ্রূ তুলে চোখ পিটপিট করে চিন্তা করার চেষ্টা করলেন যেন । তারপর নিজের মনেই ও আওরালেন ,-“ইতনা সারা ভুল …!! আমি এগিয়ে গেছি এবার । বৌমার আমার দিকে চোখ পড়তেই যেন হাতে চাঁদ পেলেন। বললেন,–” আরে–আপনি ! আমাকে বাঁচালেন ! দেখুন না, কি বিপদ, ভুল করে নারু একটা হাফ টিকিট দিয়ে গেছে আমাকে । আপনি দেখলেন তো তখন নামার সময় হুড়োহুড়ি টা ?আমি ও বোকার মতো টিকিট টা দেখিনি । এখন কি বিপদ ! এঁকে একটু বুঝিয়ে বলুন না ?হাফ টিকিট এর ভাড়া টা বাদ দিয়ে বাদ বাকি ভাড়াটা নিয়ে যদি ছাড়ত-বাবা,
বাড়ি গিয়ে বাঁচি ।” আমাকে দেখে যারা ভিড় করেছিল,সরে যাচ্ছে , আমাকে ওঁর সঙ্গে র লোক ভেবে । চেকার ভদ্রলোক আমার দিকে একবার চেয়ে দেখে হঠাৎ টিকিট টা ওকে ফেরৎ দিয়ে ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানালেন ,–” কোই বাত নেহি, আপ যাইয়ে ।” ভদ্রমহিলা টিকিট হাতে আমার দিকে একটা কৃতজ্ঞ দৃষ্টিপাত করেই তাড়াতাড়ি পা বাড়ালেন আর এক মুহূর্তও দেরী না করে । আমি ভদ্রলোককে ওদের ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলে ওকে একটু ধন্যবাদ জানাবার জন্য বলতে গেলাম ,
–” শুনিয়ে ভাই সাব –!” ভদ্রলোক হাতের টুপিটা মাথায় দিতে দিতে গম্ভীরভাবে বললেন , স্পষ্ট উচ্চারণে ,–“সাদা বাংলা য় বলুন ।” আমি বললাম অবাক হয়ে,–” আপনি বাঙালি ? তবে যে এতক্ষণ..!!”
অনাবিল হাসিতে মুখ ভরিয়ে তিনি বললেন,” না
হলে কি এমন অবিস্মরণীয় ডায়লগ শুনতে পেতেন ? ছোট ভুলের একটু ছোট্টো সাজাও হওয়ার তো দরকার ছিল, তাই না ..?”
হাসতে হাসতে উনি এগিয়ে গেলেন । আমি সারাটা যাত্রা পথের কথা মনে করে একা একাই হাসতে থাকলাম । আমাকেও সে সময় একা ওই ভাবে হাসতে দেখলে অন্য যে কেউ ম্যাড ভাবতো ! সেদিন টা আজও আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। এখনও সেদিনের কথা মনে পড়লেই না হেসে পারি না ।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read