Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। সন্দেহের পরিনতি …

অমিত রায় :- হাসপাতাল থেকে অন্তরার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাড়ীতে। এরপর অন্তরার শেষ কৃত্য সম্পন্ন করবার জন্য তার স্বামী সুজিতকে বাড়ীর সবাই খুঁজতে ব্যস্ত আছে। কিন্তু সুজিত বাড়ীর এক কোনায় বসে আছে আর নিজের মন থেকে এখনও মেনে নিতে পারছেনা অন্তরার এভাবে চলে যাওয়াটা। আসলে অন্তরার চলে যাওয়ার কারন জানতে গেলে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। বছর তিন আগে অন্তরার সাথে লেখক সুজিতের ভালোবাসা করে বিয়ে হয়।


সুজিত আর অন্তরার ইচ্ছে ছিলো পাঁচ বছর পর সন্তান নেবে। ওদিকে অন্তরা ছিলো প্রচন্ড সন্দেহ স্বভাবের একজন নারী। অন্তরার এই সন্দেহ প্রবনতা নিয়ে সুজিত সব সময় খুব চিন্তা করতো। যার কারনে নতুন বিয়ের পর হানিমুন সেরে বাড়ী ফেরার পর অন্তরার এই সন্দেহ প্রবনতা আরও বেড়ে যায়। হানিমুনে সুজিত হোটেল রিসিপশনে থাকা এক নারীর সাথে হেসে হেসে কথা বলার জন্য অন্তরা সুজিতের সাথে ওখানে ঝগড়া শুরু করে দেয়। এরপর অনেক কষ্টে সুজিত অন্তরাকে বোঝায় যে ওটা হোটেল ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে সৌজন্যতা বজায় রেখে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সুজিত নিজে একজন লেখক তাই বহু নারী পাঠিকা ছিলো সুজিতের লেখার অনুরাগী। কিন্তু তারা সুজিতের লেখার প্রশংসা করলে অন্তরা বলতো তুমি কতো বড়ো লেখক হয়েছো যে সব মেয়েরা তোমার লেখার প্রশংসা করে! সুজিত তখন বলতো হয়তো আমার লেখা তাদের ভালোলাগে তাই তারা এমন করে তাতে আমার দোষ কি! এরপর বই মেলাতেও সুজিতের লেখা প্রশংসিত হলে এক বই প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান সম্মাননা দিতে সুজিতকে প্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে সুজিত অন্তরাকে নিয়ে যায়। ওখানে যাওয়ার পর স্টেজে উঠে সুজিত সুন্দর বক্তব্য দিয়ে যখন ষ্টেজ ছেড়ে নেমে আসে তখন একজন সুন্দরী পাঠিকা সুজিতের সাথে সেলফি তুলতে থাকে। আর ওই নারীর সাথে সুজিতের সেলফি তোলা দেখে বাড়ীতে ফেরার সময় সারা রাস্তা চুপচাপ থাকে অন্তরা।

এরপর বাড়ীতে ফিরে অন্তরা সুজিতের সাথে তুমুল ঝগড়া শুরু করে দেয়। অন্তরা বলতে থাকে কেন ওই মেয়ে তোমার সাথে ছবি তুললো! তাহলে নিশ্চয়ই তুমি ওই মেয়েকে চেনো না হলে ওখানে থাকা আরো লেখকের মাঝে ওই মেয়ে তোমার সাথেই কেন ছবি তুলবে! সুজিত তখন বলে আমি তাকে চিনিনা। আমি লেখক আমার লেখায় অনেকে খুশী হয়ে ছবি তুলতে চায় এতে আমার দোষ কোথায় বলো! সুজিত অন্তরাকে বলে নিজের ভাবনা পরিবর্তন করো আর জানবে আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি আমার স্ত্রী আর জানবে তুমি আমার প্রথম আর শেষ অনুভূতি। কিন্তু সুজিতের এসব কথায় অন্তরার মন গলেনা। রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়তে দেখে সুজিত অন্তরাকে অনেক বোঝালেও কোন কাজ হয়না।

এরপর সকাল হলে সুজিত অনেক অনুনয় বিনয় করে অন্তরাকে বোঝাতে সক্ষম হয়। এরপর সুজিত এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে অন্তরার এই সন্দেহ প্রবনতা নিয়ে পরামর্শ নেয়। সুজিতের মুখে সব শুনে ডাক্তার সুজিতকে বলে আপনার স্ত্রীর যা হয়েছে সেটাকে হিষ্ট্রিয়া রোগ বলে। এ রোগ হলে নিজের মানুষের উপর কোন কারন ছাড়া সন্দেহ প্রবনতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই খেয়াল রাখবেন আপনার স্ত্রী যেন আপনার কোন ব্যবহারে মনে কোন প্রকার কষ্ট না পায়। আর তা না হলে কিন্তু যখন তখন একটা ভয়ানক বিপদ ঘটে যেতে পারে। ডাক্তারের কথানুযায়ী অন্তরার সন্দেহ প্রবনতার কারনে সুজিত এরপরে কোন নারী পাঠিকার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতোনা। ঘড়ির কাটা অনুসারে অন্তরাকে ফোন করে সুজিত বোঝাতো তার সততা। সুজিত বাইরে থাকলেও সময় করে অন্তরার সাথে রোমান্টিক কথা বলতে থাকে। যাতে অন্তরার মনে তাকে নিয়ে কোন সন্দেহ দানা না বাধে। এমন করে দিন চলছিলো সুজিতের। এরপর একদিন রাতে সুজিত ফোন করে অন্তরাকে বলে আজ আমি রাতে বাড়ীতে আসতে পারবোনা। হঠাৎ আমার লেখালেখির একটা জরুরি কাজে আমি কলকাতায় যাচ্ছি। কাল বাড়ী ফিরবো তাই তুমি সাবধানে থেকো। অন্তরা সুজিতের কথা শুনে চুপ থাকে। এরপর দিন সকালে সুজিত বাড়ী এলে অন্তরা সুজিতের সাথে কথা বলেনা। সুজিত তখন অন্তরাকে কথা না বলার কারন জিজ্ঞেস করলে অন্তরা তখন রেগে গিয়ে বলে তুই যার সাথে রাত কাটিয়ে এসেছিস তার সাথে গিয়ে থাকবি আমার সাথে তুই আর কখনও কথা বলবিনা। অন্তরা তখন সুজিতকে চরিত্রহীন পুরুষ বলে গালিগালাজ করতে থাকে। সুজিত তখন মিষ্টি করে বলে বিশ্বাস করো অন্তরা আমি আমার স্বপ্নের একটি লেখা যা আমি বহুদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম যে কোন নামকরা প্রকাশনী আমার স্বপ্নের লেখাটা প্রকাশ করবে।


আর সেই নামকরা প্রতিষ্ঠানটি আমার লেখাটা প্রকাশ করবে বলে হঠাৎ তারা আমায় কলকাতায় আমন্ত্রন জানায় তাই আমি ওখানে গিয়েছি। কিন্তু তুমি আমায় ভূল ভাবছো। বিশ্বাস করো লক্ষীটি আমি কোন মেয়ের সাথে রাত কাটাইনি। তবুও সুজিতের এসব কথা কানে নেয়না অন্তরা। বরং সুজিতকে বলতে থাকে তুই আমার স্বামী না বরং তুই একটা লম্পট আর দুশ্চরিত্র। মনোরোগ ডাক্তারের সব কথা মাথায় থাকলেও একপর্যায়ে সুজিত নিজে মেজাজ হারিয়ে অন্তরাকে বলে শোন তোকে ভালোবেসে বিয়ে করে আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। কারন তুই একটা মানসিক রোগী। সুজিত বলে তুই যখন আমার কোন কথা বিশ্বাস করিসনা তখন তোর সাথে থাকার চেয়ে অন্য কোন মেয়ের সাথে থাকলে আমি বোধহয় শান্তি পেতাম। আর তোর মতো মানসিক রোগীর সাথে না থেকে ডিভোর্স নিয়ে একা থাকা অনেক ভালো। এই বলে সুজিত দোতলায় নিজের ঘরে চলে যায়। এরপর রাত এগারোটার দিকে সুজিত ঘরে বসে তার নিজের লেখাগুলো দেখছিলো। এমন সময় সুজিত হঠাৎ দেখতে পায় পাশের রান্নাঘর থেকে আগুনের গোলার মতো কি যেন একটা সামনে থেকে চলে গিয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। সুজিত তখন ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে অন্তরা সারা শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে সিড়িতে পড়ে চিৎকার করছে। তখন বিছানা থেকে মোটা একটা কম্বল নিয়ে সুজিত অন্তরাকে চেপে ধরে। এরপর বাড়ীর সবাইকে ডাক দিলে সবাই ওই অবস্হা দেখে অন্তরাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলে অন্তরার শরীরে প্রায় ৮০% পুড়ে গেছে যার কারনে তার অবস্থা ভালোনা। ডাক্তার তখন বলে আপনারা ঈশ্বরকে ডাকতে থাকুন। দু’ঘন্টা পর ডাক্তার সুজিতকে ডেকে বলে অন্তরার অবস্হা তেমন ভালোনা আর অন্তরা আপনাকে দেখতে চাইছে। সুজিত তখন অন্তরার কাছে গিয়ে দেখে অন্তরা পুড়ে একটা ছোট বেগুনের মতো হয়ে গেছে। একদম চেনা যাচ্ছেনা অন্তরাকে। সুজিত তখন অন্তরার সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলে কেন তুমি এমন করলে অন্তরা। আমার রাগটা তুমি দেখলে কিন্তু আমি যে তোমায় খুব ভালোবাসি সেটা কখনও বুঝলেনা। অন্তরা তখন যন্ত্রণার মাঝে সুজিতকে বলতে থাকে আমি ভাবতাম তুমি আমায় আর ভালোবাসোনা বরং অন্য কোন মেয়ে তোমায় আমার থেকে কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি কতো বড় ভূল করেছি তোমায় অবিশ্বাস করে। তাই ঈশ্বর বোধহয় আমায় এমন শাস্তি দিলো। তোমায় ছেড়ে আমি চলে যাচ্ছি তাই পারলে আমায় তুমি ক্ষমা করো। এই বলে অন্তরা সুজিতের দিকে তাকিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। এরপর সুজিত কাঁদতে থাকে আর বলে এখন অন্তরা আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো। আসলে ভালোবাসার মানুষ না থাকলে পৃথিবীটা বড়ো অন্ধকার হয়ে যায়। আর ভালোবাসার প্রধান ভীত হলো বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের ভালোবাসায় যদি একবার সন্দেহ নামের বিষ ঢোকে তাহলে সেই ভালোবাসা পরিনত হয় যন্ত্রনায়। তাই পরিশেষে এটাই প্রার্থনা পৃথিবীর সকল ভালোবাসা হোক বিশ্বাসে ভরা আর সকল প্রেমিক যুগল তাদের ভালোবাসায় আজীবন থাকুক সুখী ও নিরাপদ।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read