বৈশাখী দেবনাথ :- বছর পঁয়ষট্টির আলোকবাবু বিপত্নীক হয়ে একমাত্র মেয়ের জোরাজুরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তার বাড়ি এসে উঠেছেন। স্ত্রী গত হওয়ার পর শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আলোকবাবু কৃষি দপ্তরে চাকরি করতেন। এখন যা পেনশন পান তা দিয়ে তাঁর খুব ভালোভাবেই চলে যায়।তাছাড়া গ্রামে তাঁর বসত বাড়ি ছাড়াও অল্প চাষের জমিও আছে। জামাই অরিন্দম রাজ্য সরকারী দপ্তরে চাকরি করে। আর আছে একমাত্র আদরের নাতি রুপু, সে ক্লাস ফাইভে পড়ে।রুপুকে তিনি বড় ভালোবাসেন, তাঁর সাথেই রুপুর যত ভাব। বেশ ভালোই দিন কাটছিল আলোকবাবুর।
এদিকে সমস্যা হলো মেয়ের বাড়ি মাত্র দুটো ঘর। তাই থাকার একটা সমস্যা হচ্ছিল । দোতলায় দুটো রুম করার জন্য মেয়ে আলোকবাবুর থেকে কিছু টাকা চায়। উনিও আর কোন দ্বিরুক্তি না করে ব্যাংকে জমানো প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মেয়ের হাতে তুলে দেন। কিছুদিন পর মেয়ে এসে বলে যে, যেহেতু ওরা আর গ্রামে গিয়ে থাকবেনা তাই ওখানকার জমি – বাড়ি সব বিক্রি করে দেওয়াই ভালো। আলোকবাবু মেয়ের পরামর্শে ওখানকার জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দেন।
এরপর বিভিন্ন অজুহাতে মেয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিতেই থাকে। একটা সময় পরে ব্যাংকের টাকা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকে। আলোকবাবু ভাবছিলেন আজ হোক বা কাল ওনার সব কিছু তো মেয়েই পাবে, তাই আর মনে কোন দ্বিধা রাখেননি।
রাত প্রায় বারোটা বাজে, একটা চাপা আওয়াজে আলোকবাবুর ঘুম ভেঙে গেল তীব্র অস্বস্তিতে। জানালা খুলে নিচে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলেননা। দরজা খুলে বেরোতেই শব্দটা স্পষ্ট হল। মেয়ের ঘর থেকেই আসছে শব্দটা। কাছে যেতেই শোনেন মেয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে বেশ উত্তজিত স্বরে।
সে বলছে তার বাবার জন্য নাকি মাসে মাসে প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। বাবার জন্যই রুপু উচ্ছন্নে যাচ্ছে দিনদিন। পড়াশুনো ছেড়ে সারা দিন দাদুর সাথে খেলে সে। তার বাবার জন্য তারা কোথাও বেড়াতে যেতেও পারেনা।
এসব অভিযোগ শুনে আলোকবাবুর মাথাটা টলে উঠলো। কি শুনলেন তিনি এসব? মেয়ের সুখের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিলেন তিনি। নাতি রুপুর সাথে খেলা ধুলার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম করে দুইবেলা পড়াতেন, যাতে রুপু ভালো রেজাল্ট করে।
তখনই মনস্থ করে ফেললেন যত শীঘ্র হয় তিনি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবেন। তাঁর জন্য রুপুর ক্ষতি হোক এটা তিনি চান না। রুপুকে ছেড়ে থাকতে তাঁর যতই কষ্ট হোক না কেন তবুও তাঁকে পারতেই হবে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত থেকে তাঁকে আর কেউ টলাতে পারবেনা।