তপতী বিশ্বাস :- “এখনও মাস পেরোলো না- এরই মধ্যে অফিসে উপস্থিত! ম্যাগো, সাজপোশাক’টা দেখ!”
“যা বলেছিস পৌলী! দেখে কেউ বলবে উনি সদ্য বিধবা হয়েছেন! পঞ্চান্ন বছরেও লিপস্টিকের চটক’টা দেখেছিস!”
“দীপ্তি, লিপস্টিকের রং-টা হেব্বি মাইরি! শেড’টা আমার কাঞ্চিপুরামের সাথে ফাটাফাটি মানাবে…”
“শোকের ছাপ গায়ের থেকে মোছার আগেই তো দেখছি জলে আগুন লাগিয়ে দেবেন এই মহিলা…”
পৌলমীর কথাগুলো কানে যেতেই মুচকি হাসি সৌগত’র ঠোঁটে। পাশের কিউবিকলের কথোপকথনের সবটাই কানে ঢুকছে তার। মুখটা তুলে কাঁচের দেওয়ালের ওপারে আইভী সেনগুপ্তা’র কেবিনের দিকে তাকায় সে। আইভী আপন মনে কাজ করে চলেছেন।
মহিলা নিঃসন্দেহে রূপসী। হাল্কা প্রসাধনীর আড়ালে ব্যক্তিত্বময়ী নারীর ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে তার অবয়বে। শুধু ঠোঁটে লিপস্টিকের চড়া রঙটা একটু চোখে লাগছে, তবে হ্যান্ডলুম শাড়ীর সাথে কালার’টা নো-ডাউট দারুণ মানিয়েছে।
‘নাহ্- আইভী ম্যাডামের রুচির জবাব নেই। পঞ্চান্ন বছর বয়সেও সাতাশ আঠাশের মামণিদের কমপ্লেক্স দিয়ে চলেছেন রীতিমতো।’ আর তারই পরিণাম অফিসে তাকে নিয়ে পিএনপিসি’র বাজার গরম।
অফিসের কানাঘুষো সবই কানে যায় আইভী’র। মনে মনে ভাবেন দিন কয়েক আগে যারা আমার বেশভূষা, চালচলন, কথাবার্তা, আমার দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল, আজ বদলে যাওয়া সময় আর পরিস্থিতির সাথে সে এখন চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ম্যানেজারের কেবিনে ঢুকলেই সহকর্মীদের চোখে মুখে অদ্ভুত কৌতূহল জেগে ওঠে। অফিসে কমবেশি সবার চোখ তাকে অনুসরণ করে- সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার।
আইভী’র মনে হাজার প্রশ্ন।
‘ আজ কৌস্তভের অবর্তমানে আমার সাজপোশাক নিয়ে আলোচনার বাজার গরম, কিন্তু কৌস্তভ নিজেই আমার পছন্দের লিপস্টিক কিনে এনে দিত। লিপস্টিক- দুর্বলতা ছিল আমার আর কৌস্তভের কাছে ছিল ভালোবাসা। ওর পকেটে রুমালের ভাঁজে থাকতো আমার ঠোঁটের রঙ্গিন উষ্ণতার স্পর্শ। আজ সব হারিয়ে গেলেও লিপস্টিক ছাড়ার কথা ভাবতে পারি না।’
অফিসে ঢুকতে আজ একটু দেরি হয়ে গেল আইভী’র। খাদির সাদা শাড়ির সাথে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট জংলা প্রিন্টের কলার দেওয়া ব্লাউজ, হাতখোঁপা আর ঠোঁটে মেরুন কালারের লিপস্টিক যেন ফ্রেমে বাঁধানো এক ক্ল্যাসিক পোট্রেট। অফিসে পিনড্রপ সাইলেন্স!
শোকের ছাপ আজ গায়ে মাখলেও কৌস্তভের ভালোবাসা তার ঠোঁট ছুঁয়ে আছে।
আমরণ থাকবে…