Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাদপুরের মা মানসা সাক্ষাৎ কল্পতরু ।

প্রদীপ কুমার মাইতি :- আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ইংরেজ আমলে হাওড়া থেকে আপ খড়গপুর রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়। খড়গপুর ষ্টেশান ঢোকার আগেই জকপুর আর মাদপুর ষ্টেশানের মাঝে গাছ আর ঘাসের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে শুরু হয় রেল লাইন পাতার কাজ। ঘাসের জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় প্রথম বার আবির্ভাব হয় মা মনসার স্তূপ। যেহুতু রেল লাইন এর কাজ এটার ওপরেই হবে তাই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ভেঙে ফেলার আগের রাতেই মা স্বপ্নে এটা না ভেঙে ফেলার আদেশ দেয় কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের।

শ্রমিকরা এটা সাহেব রেল ইঞ্জিনিয়ারকে বললে প্রথমে উনি বিশেষ পাত্তা না দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আর এর পরেই শুরু হয় এই ইউনিটের প্রত্যেকের অস্বাভাবিক রকমের শরীর খারাপ। কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকে, আবার নতুন লোক নিয়ে কাজ করে রেল কর্তৃপক্ষ। এবারেও ফলাফল সেই একই। কাজ কোনো ভাবেই এগোনো যায় না এই জায়গায়। তাই বাধ্য হয়েই লাইন সোজাসুজি এই রাস্তায় না করে, একটু দূর দিয়ে কার্ভ করে পাতা হয় রেলের পাত। ফলে সস্থানে বিরাজ করতে থাকে মা মনসার স্তূপ টি। এর বেশ কয়েক দশক পর এখানে একটি জমিদার বাড়ি গড়ে ওঠে। জমিদারের অনেক গরু ছিল।

তিনি দেখা শোনার জন্য লোক রাখেন। একসময় হটাৎ জমিদার লক্ষ্য করেন তার গরুগুলির দুধের পরিমাণ হটাৎ করে কমে গেছে। তাই তিনি দেখাশোনার লোকটিকে কি ব্যাপার হচ্ছে সেটা অনুসন্ধান করতে বলেন। জমিদারের নির্দেশমতো, লোকটি খুঁজে বার করেন যে, জঙ্গলের একটি বিশেষ জায়গায় জমিদারের গরু গুলি যায় এবং সেখানে একাধিক সাপ গরুর দুধের বোঁটা থেকে দুধ চুষে খাচ্ছে। আর এখানে স্তূপের মত কিছু একটা বিরাজ করছে। এরপর এই খবর গিয়ে পৌঁছায় জমিদার এর কাছে। জমিদার নিজে এসে পুরো ব্যাপার টা দেখেন। তারপর এক রাতে জমিদার স্বপ্নদেশ পায় যে, উনি মা মনসা দেবী, তাকে যেনো পূজিত করা হয়। স্বপ্নাদেশ পেয়ে জমিদার এখানের যাওয়া আসার রাস্তা তৈরি করেন, জঙ্গল পরিষ্কার করেন। এখানে একটি বেদী বানিয়ে মায়ের পুজো শুরু করেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে মন্দির তৈরি করতে গিয়ে। চারিদিক ঘেরার পর যখন ওপরের অংশ ঘেরা শুরু হয়, বিনা মেঘে হটাৎ বজ্রপাত হয়ে মৃত্যু হয় মিস্ত্রিদের। সেই জন্য বর্তমান সময়েও এই মন্দিরের ছাদ বলে কিছু নেই। ওপরের অংশ একদম ফাকা। মন্দির কর্তৃপক্ষ যখনই ছাদ করতে যায়, নেমে আসে বিপর্যয়। অলৌকিক ভাবে বাজ পড়ে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে, মা মনসা দেবীর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।

আস্তে আস্তে জন সমাগম বাড়ে, চলতে থাকে মা মনসার পুজো। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এখানের মা মনসা দেবীর মাহাত্ম্য, দূর দূরান্ত থেকেও শুরু হয় মানুষের আগমন।হাওড়া থেকে আপ খড়গপুর আসার পথে মাদপুর জকপুর ষ্টেশনের মাঝেই রেল লাইনের পাশেই চোখে পড়ে মন্দিরটি।

ট্রেন থেকেই মায়ের উদ্দেশ্যে করা কোনো মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় অনেকেই অর্থ দান করে। বর্তমানে মন্দিরে জনসমাগম হয় খুব বেশি, শুধু জেলার মানুষ নয়। বিভিন্ন জেলার দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ।নিত্য পূজিত হলেও বিশেষ করে শনি ও মঙ্গলবার ভীড় হয় এই মন্দিরে। সবাই বিশ্বাস করে এই মনসা ভীষণ ভাবে জাগ্রত। কেউ মন থেকে কিছু চাইলে তার চাওয়া পূরণ হয়।

এখানে নিজেদের পূজো নিজেদেরকেই দিতে হয় ভক্তি ভরে। ব্রাম্ভন থাকে না। বছরে একদিন ঘটা করে পূজিত হয় মা মনসা। ওই দিন ব্রাম্ভন পূজিত করে দেবী মা মনসাকে। অন্যথায় সারাবছর নিজের পূজো নিজেকেই দিতে হয়। মন প্রান দিয়ে, ভক্তি ভরে আপনি যদি মায়ের কাছে কোনো মানত করেন, মন্দিরে এসে পূজো দিয়ে বলে যান। তা পূরন হবেই। এই বিশ্বাস নিয়ে অগনিত মানুষের ভীড়ে প্রতিনিয়ত পূজিত হয় মা মনসা।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read