ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ঠাট কাঠামোর প্রণেতা পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ডকের জন্ম হয় ১৮৬০ খৃষ্টাব্দের ১০ আগষ্ট । মুম্বাই-এর বালেশ্বর নামক একটি গ্রামের ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।
অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান ছিলেন তিনি, সুতরাং শিক্ষালাভে তার কোনও অসুবিধা হয়নি। স্কুলে শিক্ষার পাশাপাশি তিনি সঙ্গীতের দিকে আকৃষ্ট হন। ছোটবেলায় মায়ের কাছে ভজন শিখেছিলেন।
বেনারসের সুপ্রসিদ্ধ সেতারী পান্নালাল বাজপেয়ীর শিষ্য বল্লভদাসজীর কাছে সেতার শিক্ষা শুরু করেন। তারপর বিখ্যাত বীণকার আলি হোসেনের শিষ্য গোপালজীর কাছেও সেতার শেখেন। সঙ্গীত শিক্ষার জন্য বোম্বাই এর গায়ন উত্তেজক মন্ডলী নামক সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের সভ্য হন। তারপর রাওজী বুয়া বেলবাগকর এর কাছে শিখতে শুরু করেন ধ্রপদ গান। এই সময়েই মহম্মদ হোসেন ও বিলায়েত হোসেনের কাছে খেয়াল শিক্ষা করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সঙ্গীতে এমন দক্ষতার পরিচয় দেন যে গায়ন উত্তেজক মণ্ডলীর সঙ্গীত পরিচালনার ভার তার ওপরেই অর্পণ করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি যাদের নির্বাচন করতেন, তারাই সেখানে গান গাওয়ার সুযোগ লাভ করত।
ক্রিয়াত্মক সঙ্গীতের পাশাপাশি সঙ্গীতের তাত্ত্বিক বিষয় জানা আবশ্যক, এই ভাবনা থেকে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর গবেষণা শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে নানা ধরনের তথ্যাদি সংগ্রহ করা শুরু করেন। ওকালতি পেশা ত্যাগ করে, তিনি এই সাঙ্গীতিক অভিযান শুরু করেন ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে।
যথার্থ সঙ্গীত শিক্ষা প্রদানের জন্য তিনি বরোদায় একটি সঙ্গীত বিদ্যায়তন চালু করেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বরোদায় এই বিদ্যায়তনটি সরকারি স্বীকৃতি পায়। এই বৎসরই বরোদায় তিনি একটি সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনে সঙ্গীতগুরুদের সাথে আলোচনা করে রাগের শুদ্ধরূপ নির্ধরাণ করার চেষ্টা করেন। এই সময় তাঁর ১২ ঠাটের ধারণা অনেকে গ্রহণ করেন। তবে অনেক সঙ্গীতগুরু এর বিরোধিতাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১২ ঠাটের বিন্যাস প্রতিষ্ঠা পায়। অবশ্য ১২ ঠাটের বিন্যাস যথার্থ কিনা এ নিয়ে এখনও বিতর্ক আছে।
এক কথায় বললে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পণ্ডিত বিষ্ণুনারায়ণ ভাতখন্ড একটি রেনেসাঁ নিয়ে এসেছিলেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগসমূহকে তিনি বর্তমানের প্রচলিত ঠাট কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এর আগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগসমূহের ছিল রাগ , রাগিণী ও পুত্রা ভাগে বিভক্ত।
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের এই মহান গুরুকে তাঁর জন্ম দিবসে এখন সংবাদ পরিবারের শতকোটি প্রণাম