ফুলরেণু গুহের জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলী
১৯১১ সালের ১৩ আগস্ট, কলকাতায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং সামাজিক কর্মী অবলাবালা দত্তের পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন ফুলরেণু দেবী । ফুলরেণু দেবী কয়েক বছর কলকাতার গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল এবং ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যাবসা করেছিলেন। পরে তিনি আসামের একটি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন।পরবর্তীকালে, তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ এবং অবশেষে বিখ্যাত ভারতীয় দার্শনিক তথা স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে এমএ করেন।
১৯৪৫ সালের ১জুলাই, ফুলরেণু দেবী বিখ্যাত ভারতীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ বীরেশচন্দ্র গুহর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।তবে বরিশালে থাকাকালীন ডঃ বীরেশচন্দ্র গুহর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিলো।দুজনেই সেই সময়ে জঙ্গিবাদ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী যুগান্তর পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বাড়ায় ফুলরেণু দেবীকে তাঁর বাবা-মা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য লন্ডনের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ-এ প্রেরণ করেছিলেন। সেখানে তিনি কমিউনিজমের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং গ্রেট ব্রিটেনের তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা বেন ব্র্যাডলির সাথে দেখা করার পরে, ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যান্ড সিলোন শিক্ষার্থীদের প্রাগ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন।
তিনি ১৯৩৮ সালের জুন মাসে কলকাতায় ফেরত আসেন এবং ভারতে কর্মরত সাম্যবাদীদের জন্য গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ৩,০০০ টাকা নিয়ে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
১৯৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দান করেন এবং বীরেশকে কারাবরণ করতে হয় ।
১৯৪৩ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি আজাদ হিন্দ ত্রাণ কমিটির মহিলা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে দেশভাগের পরের সর্বাগ্রবর্তী প্রয়োজন অবশ্যই পুনর্যোজন, পুনর্গঠন, পুনরুজ্জীবন এবং বাস্তুচ্যুতদের বিশেষত নারী ও শিশুদের সহায়তা করা। স্বাধীনতার পরে ফুলরেণু গুহ নিজেকে সম্পূর্ণরূপে দেশ গঠনে নিবেদিত করেছিলেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এই নেত্রী পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭০ সাল অবধি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন । তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রণালয়ে সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভারতের মহিলাদের অবস্থা সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত শিশু কল্যাণে ভারতীয় কাউন্সিলেরও প্রধান ছিলেন।
তিনি ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের কাঁথি আসন থেকে লোক্সভার সাংদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রাপ্ত হন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শিক্ষাবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী ,রাজনীতিবিদ,সমাজ কর্মী ফুলরেণু গুহর কর্মগাথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরন করে এখন সংবাদ পরিবার,তাঁকে জানায় শতকোটি প্রনাম