কুলদীপ নায়ার একজন ভারতীয় প্রথিতযশা প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।
১৯২৩ সালের ১৪ আগষ্ট অবিভক্ত পঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কুলদীপ নায়ার। তার পিতার নাম গুরুবাক সিং এবং মাতার নাম পূরাণ দেভী। শিখ ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের এই পরিবারটির মাতৃ ভাষা উর্দ্দু। শৈশবে তিনি গান্ধা সিং হাই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন,তারপর মারী কলেজে। বিএ করার পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটির মেডিল স্কুল অব জার্নালিজম থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া তিনি আইন অধ্যয়ন করেন।
১৯৪৭-এ ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কুলদীপ পাকিস্তান ত্যাগ করেন ও ভারতে স্থায়ী হয়ে যান। শিয়ালকোট থেকে তিনি আসেন দিল্লিতে। মাতৃভূমি ত্যাগের অশ্রুবহ ঘটনা তাকে চিরকাল তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে।
তার প্রথম চাকরি দিল্লীর দৈনিক আনজাম পত্রিকায় রিপোর্টার হিসাবে। দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় কাজ করেছেন দীর্ঘকাল। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তাকে লন্ডনে ভারতের হাইকমিশনার নিয়োগ করা হয়। ১৯৯৭-এর আগস্টে তিনি রাজ্যসভার সদস্য নির্ব্বাচিত হন। ২০০৭ থেকে তিনি উর্দ্দু ভাষায় পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকা জং এবং ওয়াক্ত-এ কলাম লিখছেন।
কুলদীপ নায়ার মনে প্রাণে চাইতেন উপমহাদেশের দেশগুলোর মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। নিজের লেখাতেও তার এই আন্তর্জাতিকতাবাদী চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ধর্মভিত্তিক পরিচয় ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধীর সমালোচনা করে জেলেও যান তিনি। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দাবিতে সর্বদাই সচল ছিল তার কলম।
কুলদীপ নায়ারের বিখ্যাত লেখা ‘বিটুইন দ্য লাইনস’ অনুবাদ হয়েছে অনেকগুলি ভাষায়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাষায় অন্তত ৮০টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা।
দ্য স্টেটসম্যান ছাড়াও তিনি কাজ করেছেন ডেকান হেরাল্ড, দ্য ডেইলি স্টার, দ্য সানডে গার্ডিয়ান, দ্য নিউজ, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পাকিস্তান, ডন পাকিস্তান, প্রভা সাক্ষী-সহ আরও অনেক সংবাদপত্রে।
২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট ভোরে দিল্লির একটি হাসপাতালে প্রবীণ এই সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেন।
মুক্ত সংবাদমাধ্যমের দাবিতে তার লড়াইয়ের জন্য ২০০৩ সালে অ্যাস্টর পুরস্কার পান তিনি। শেষ জীবনেও ভারতের জেলে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিক ও পাকিস্তানের জেলে বন্দি ভারতীয় নাগরিকদের মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি।ব্রিটিশ ও স্বাধীন ভারতের ৮০ বৎসরের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তার গ্রন্থমালা ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ। কুলদীপ নায়ারের লেখনী একাধারে গণতন্ত্র, তথ্য অধিকার ও মানবাধিকারের অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে সক্রিয় রয়েছে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিরোধে সর্ব্বদাই তিনি দৃঢ় হাতে কলম ধরেছেন।
আজ দেশ জুড়ে সংবাদ মাধ্যমে অবক্ষয়ের যুগে কুলদীপ নায়ারের মত দৃঢ়চেতা,সাদাকে সাদা বলার সাহস রাখা মেরুদন্ড যুক্ত সাংবাদিকদের খুব অভাব।দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদ জগতের অন্যতম মহান সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারকে এখন সংবাদ পরিবার জানায় সশ্রদ্ধ প্রণাম