বাবা মা-র অষ্টম সন্তানের মধ্যে তিনি সপ্তম সন্তান। এক অর্থোডক্স পরিবারে জন্ম। পরিবারে ছেলেদের শিক্ষার জন্য তৈরি করা হত। যাতে তারা বড় হয়ে কাজ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর মেয়েদের শুধুই বিয়ের জন্য বড় হওয়া !
এই মেয়ে সেই প্রথা ভেঙে নতুন এক স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। তাঁর বাসনা পড়াশোনা করবে বড় হবেন। সমাজে ছাপ রাখবেন নিজের কাজের,সেই স্বপ্ন সফল হয়েছিল।
আন্না মোদায়িল মনি । ভারতের প্রখ্যাত মহিলা আবহবিদ আন্না মণি ১৯১৮ সালে ২৩ আগষ্ট কেরলের পরমকুড়ি, রমনাথপুরমে এক প্রাচীন সিরিয়ান খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা একজন পুরকৌশল বিশেষজ্ঞ এবং অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন।
আট বছর বয়সের মধ্যে, তিনি মালয়লী ভাষার প্রায় সব বই তাদের পাবলিক গ্রন্থাগারে পড়ে নিয়েছিলেন এবং, বারো বছর বয়সের মধ্যে, ইংরেজি সব বই তার পড়া হয়ে গেছিল। তার অষ্টম জন্মদিনে, তার পরিবারের প্রথামত উপহার, হীরার কানের দুল তিনি নিতে অস্বীকার করেছিলেন, পরিবর্তে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার একটি সেট তিনি চেয়েছিলেন। বইয়ের বিশ্ব তার নতুন ধারনাগুলিকে খুলে দেয় এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের গভীরে গভীরভাবে আলোকিত করে।
পড়াশোনা করতে করতেই গান্ধীজীর ভৈকম সত্যাগ্রহ আন্দোলন দেখে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। সারা জাবন খদ্দরের কাপড় পরে অতিবাহিত করেছিলেন। পড়াশোনায় তুখড় এই নারী সৌর জগত ও জলবায়ুর ওপর অনেক গবেষণা প্রবন্ধ লেখেন।
যা সে-সময়ে খুব প্রশংসিত হয়েছিল। পড়াশোনায় গভীর অনুরাগী এই বিজ্ঞানী আজীবন বিজ্ঞানের সাধনা করে গেছেন।
শুনলে অবাক হতে হয়, প্রথম জীবনে তিনি চেয়েছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী হবেন, কিন্তু তাঁর পথ অন্য দিকে প্রবাহিত হয়ে গেল।
চেন্নাই থেকে পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে বিএসসি অনার্স করেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি নোবেলজয়ী সি.ভি রমণের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। হিরের অপটিক্যাল বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করেন।
তবে ধীরে ধীরে, আবহাওয়াবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। ১৯৪৫ সালে আন্না লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে যান। সেখানে আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্রাদি ব্যবহারে স্পেশালাইজেশন করেন। দেশে ফিরে আবহাওয়াবিদ হিসাবে কাজে মনোনিবেশ করেন।
১৯৪৮ সালে ভারত ফিরে আসার পর, তিনি পুনের আবহাওয়া বিভাগে যোগ দেন। তিনি আবহাওয়া যন্ত্র বিষয়ে অনেক গবেষণামূলক কাগজপত্র প্রকাশ করেন। অধিকাংশ সময়ে তার দায়িত্ব থাকত, ব্রিটেন থেকে আমদানি করা আবহাওয়া যন্ত্রগুলি সাজিয়ে রাখা। ১৯৫৩ সালের মধ্যে, তিনি বিভাগের প্রধান হয়ে যান।
আন্না মনি চেয়েছিলেন ভারত যাতে আবহাওয়া যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়। তিনি প্রায় ১০০ টি বিভিন্ন আবহাওয়া যন্ত্রের আঁকাগুলির মানকে মানানসই করেছেন। ১৯৫৭-৫৮ সাল থেকে তিনি সৌর বিকিরণ পরিমাপের জন্য কিছু স্টেশনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করেন। ব্যাঙ্গালোরে, তিনি বায়ু গতি এবং সৌর শক্তির পরিমাপের উদ্দেশ্যে যন্ত্র তৈরি করে একটি ছোট কর্মশালা স্থাপন করেছিলেন। তিনি ওজোন পরিমাপ করার জন্য যন্ত্রপাতি উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। তাকে আন্তর্জাতিক ওজোন এসোসিয়েশনের সদস্য করা হয়। তিনি একটি আবহাওয়া মানমন্দির স্থাপন করেন এবং থুম্বা রকেট লঞ্চিংয়ে একটি যন্ত্রের স্তম্ভ বসান।
ভারতীয় বিজ্ঞানী একাডেমি, আমেরিকান মিটিওরোলর্জিকাল সোসাইটি, ইন্টারন্যাশনাল সৌর শক্তি সমিতি, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিশেন ফর মিটিওরোলজি প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৭ সালে পেয়েছিলেন আইএনএসএ রমানাথন পদক।
ভারতের প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী আন্না মানিকে তার ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল একটি ডুডল তৈরি করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। ২০০১ সালের ১৬ অগস্ট আবহাওয়াবিদ এই বিজ্ঞানীর প্রয়াণ ঘটে।
‘ভারতের ওয়েদার উইমেন’, আন্না মণিকে তাঁর প্রয়ান দিবসে এখন সংবাদ পরিবার জানায় শতকোটি প্রণাম