Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নারী উন্নয়নে ঊনবিংশ শতাব্দীতে “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার” এর স্রষ্টা সরলা দেবীকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।


সরলা চৌধুরী হলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বিশিষ্ট বাঙালি বুদ্ধিজীবী।

১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জানকীনাথ ঘোষাল এবং বাংলার প্রথম মহিলা ঔপন্যাসিক ও  রবীন্দ্রনাথের  অগ্রজা  স্বর্ণকুমারী দেবীর সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন সরলা দেবী। পিতার বিলাত প্রবাসকালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তার শৈশব কাটে। বেথুন স্কুলে ভর্তি হয়ে কবি কামিনী রায়, লেডি অবলা বসু প্রমূখের সাথী হন। ১৮৮৬ সালে এন্ট্রান্স ও ১৮৯০ সালে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ‘পদ্মাবতী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।

সংস্কৃত, ফার্সী ও ফরাসী ভাষায় তাঁর ভাল দখল ছিল |স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে |   তাঁর কর্মযজ্ঞের পরিধি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে ছিল  | একবার জাতীয়
কংগ্রেসের সভায় বন্দেমাতরম গানটি, ‘সাতকোটির’ জায়গায় ‘তিরিশ কোটি’ করে গানটি পরিবেশন করেন তিনি |

তিনি মহিশূরে ‘মহারাণী বালিকা বিদ্যালয়ে’ পড়িয়েছেন | পাঞ্জাবে পর্দার অন্তরালে থাকা মহিলাদের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলায় ব্রতী ছিলেন | তাঁরই প্রচেষ্টায় ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’ নামে একটি সংস্থা গড়ে উঠেছিলো | ভারতীয় নারীদের উন্নয়নের স্বার্থে স্ত্রীশিক্ষা সহ অন্যান্য বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করে এই সংগঠন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শাখা বিস্তার করে।

১৯০৫ সালে বিবাহসূত্রে আবধ্য হন আইনজীবি রামভূজ দত্ত চৌধুরীর সাথে, জিনি ‘পাঞ্জাব আর্য সমাজের’ নেতা ও লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘হিন্দুস্তান’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন |

স্বামীর কারাবাস কালে তিনিই ‘হিন্দুস্তান’ পত্রিকা প্রকাশনার ভার গ্রহণ করেন এবং এই পত্রিকার ইংরেজী সংস্করণ বার
করেন | এ ছাড়া যে সব প্রকাশনার সম্পাদনায় তিনি সাহায্য করতেন তার মধ্যে আছে ভারতী, নববর্ষের স্বপ্ন, জীবনের ঝরাপাতা, ভারত
স্ত্রী মহামণ্ডল ইত্যাদি |

কলকাতায় তিনি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তকে স্বদেশী আন্দোলনে সাহায্য করেছেন | তিনি ভারত স্ত্রী শিক্ষা সদন গঠন করে মেয়েদের নানান
অস্ত্রবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেবার বন্দোবস্ত করেছিলেন | দেশী কুটির শিল্পের জন্য স্হাপন করেছিলেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ | তাঁর, বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে, বাংলার যুবসমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’ ও ‘বীরাষ্টমী ব্রত উৎসবের’
সূচনা করা | তাঁর জন্য তাঁকে মাতুল রবীন্দ্রনাথ সহ অনেকেরই বিরাভাজন হতে হয় | বাংলার ইতিহাসে যশোররাজ প্রতাপাদিত্য একজন
হৃদয়হীন বলে কুখ্যাত হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সরলা দেবী রাজার, মোগল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের সিক্কা চালাবার সাহস ও
বীরত্বকে বাংলার যুবক যুবতীদের কাছে তুলে ধরেছিলেন |

মোহনদাস গান্ধী, লোকমান্য তিলক, অতুল প্রসাদ সেন সহ বহু উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল |

বলাবাহুল্য, স্বদেশপ্রেম নিয়ে তিনি বহু কবিতা রচনা করে গিয়েছেন |১৯৪৫ সালের ১৮ আগষ্ট এই মহিয়সীর প্রয়ান হয়|স্বদেশ প্রেমী,সমাজ সংস্কারক,শিক্ষাবিদ,বুদ্ধিজীবি সরলাদেবী চৌধুরীকে এখন সংবাদ পরিবার জানায় শতকোটি প্রণাম

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read