কেকা মিত্র :-‘অঙ্গন বেলঘরিয়া’র নতুন নাটক ‘মৌনবাঁশরী’ পৌরাণিক কাহিনী আশ্রিত নাটক থিয়েটারের পাশাপাশি সভ্যতা, সংস্কৃতি ও সমাজকে যুগের পর যুগ ধরে সমৃদ্ধ করে চলেছে। সেই রকম একটি গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে নাটক “মৌনবাশঁরী” ।
২৬ আগস্ট বরানগর রবীন্দ্রভবন মঞ্চে মঞ্চস্থ করল ‘অঙ্গন বেলঘরিয়া’।
নাটকটি একটি বিয়োগাম্ত প্রেমের নাটক। প্রকৃতিপ্রেমি, সঙ্গীতের পূজারী, দেবতপুত্র অর্ফিউস আর সাধারণ মেষপালক গোষ্ঠীর গ্রাম্য মেয়ে ইউরিদিসের – এর মধ্যে গড়ে ওঠে নর-নারীর চিরন্তন শাশ্বত প্রেম। কিন্ত জাত-পাত ও বিরুদ্ধগোষ্ঠীর দুই নরনারীর প্রেমকে গোষ্ঠীঅধিপতি ভ্যাসিলিউসের সহযোগিতায় মেষপালকদের নেতা আরিস্তেউস চিরতরে শেষ করার লক্ষে হত্যা করে ইউরিদিসকে।
ইউরিদিসের এই অকাল মৃত্যু অর্ফিউসের মনে জন্ম দেয় যে সমবেত প্রতিবাদ ছাড়া এই জঘন্য কাজকে সমাজ থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।
নাট্যকার সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বর্তমান সময়ের একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়কে এই নাটকের মধ্য দিয়ে সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন। ক্ষমতাশালীরা কিভাবে একটি শ্বাশত প্রেমকে জাতপাত আর গোষ্ঠীর দোহায় দিয়ে ঘৃন্য চক্রান্তের মাধ্যমে নস্যাৎ করে সেটিকে যেমন সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছেন তেমন তার বিরুদ্ধে সমবেত প্রতিবাদের বার্তাকেও বলিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বলা যায় আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাভ-জেহাদের যে ঘটনা এখনো ঘটে চলেছে তার বিরুদ্ধে অঙ্গন বেলঘরিয়ার বলিষ্ঠ প্রতিবাদ এই নাটক।
অভিনয়ের ক্ষেত্রে সমিত দাসের অর্ফিউস, শুভাশীষ দত্তের আরিস্তেউস ও ইউরিদিসের ভূমিকায় মৌসুমী পালের অনবদ্য অভিনয় এই নাটকের বড় সম্পদ। অন্যান্য চরিত্রে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সুব্রত সরকার, সুরোজিৎ শর্মা, মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা চরিত্রঅনুযায়ী। সৌমেন চক্রবর্তীর আলো, তপন বিশ্বাসের আবহ ও দেবব্রত মাইতির মঞ্চভাবনা নাটকটিকে দর্শকদের কাছে আরো বেশী গ্রহনযোগ্য করে তুলেছে। সবশেষে যার কথা না বললেই নয় তিনি হলেন এই নাটকের পরিচালক ও অভিনেতা অভি সেনগুপ্ত। যার সুচারু পরিচালনা ও বলিষ্ঠ অভিনয়ের গুনে নাটকটি দর্শকদের কাছে আরো বেশী আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে আশা করি এই প্রোযোজনাটি বাংলা থিয়েটারের দর্শকদের দীর্ঘদিন মনে থাকবে।