Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

‘বিধাতার হাতেগড়া অভিনেতা’ অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফিকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।

সমকালীন সময়ের সমালোচকদের কাছে তিনি ‘বিধাতার হাতেগড়া অভিনেতা’। অত্যাচারী ইংরেজের চরিত্রে তাঁর অভিনয় দেখে জুতা ছুঁড়ে মেরেছিলেন খোদ বিদ্যাসাগর ! অসম্ভব প্রতিভাধর হয়েও ইতিহাসের অতল অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফি। নাট্যজগতে “মুস্তোফী সাহেব” নামে পরিচিত ছিলেন।

১৮৫০ সালের ২৫ জানুয়ারি কলকাতার বাগবাজারে তাঁর জন্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকলেও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর প্রগাঢ় পান্ডিত্য ছিল। পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ির সঙ্গে আত্মীয়তাসূত্রে তাদের প্রতিষ্ঠিত নাট্যমঞ্চে অর্ধেন্দুশেখরের অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। সতেরো বছর বয়সে ১৮৬৭ সালের ২ নভেম্বর তিনি কিছু কিছু বুঝি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন।

সাধারণ রঙ্গালয়ের যাত্রা শুরু হয় দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক দিয়ে। এ নাটকে অর্ধেন্দুশেখর একসঙ্গে গোলোক বসু, সাবিত্রী ও উড সাহেব এ তিন পুরুষ ও স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করে নজির সৃষ্টি করেন। বিশেষত উড চরিত্রে তিনি বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেন।

১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর উত্তর কলকাতায় ঘড়িয়াল বাড়িতে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে।দর্শকাসনে বাংলার তৎকালীন খ্যাতনামা ব্যাক্তিরা উপস্থিত,সেই তালিকায় আছেন খোদ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর।অত্যাচারী নীলকর উড সাহেবের চরিত্রে অভিনয় করছেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফি।সেই চরিত্রে অর্ধেন্দুশেখরের অত্যাচারের সাবলীল অভিনয় দেখে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেন নি বিদ্যাসাগর।মঞ্চের সেই অভিনেতাকে সত্যি কারের অত্যাচারী নীলকর উড সাহেব মনে করে জুতা ছুঁড়ে মারেন !! সাহেবি কায়দায় নির্ভুল  ইংরেজি উচ্চারণ, চলাফেরা, আদব-কায়দা ও অভিব্যক্তিতে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না।

সমকালীন সময়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষের অসম্ভব জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ভিন্ন ধারায় অভিনয় করে দর্শকদের কাছে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফি সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। গিরিশ ঘোষ অভিনয় করতেন সুরেলা কণ্ঠে, আর অর্ধেন্দু অভিনয় করতেন দৃপ্তকণ্ঠে। তিনি গুরুগম্ভীর, হাস্যরসাত্মক ও ইংরেজ সব ধরনের চরিত্র সমান দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। গিরিশচন্দ্রের মতে অর্ধেন্দুর অভিনয় ছিল অননুকরণীয়।  অমৃতলাল বসু তাঁকে ‘বিধাতার হাতেগড়া অভিনেতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

অর্ধেন্দুশেখর আরও যেসব চরিত্রে অভিনয় করে অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন সেগুলি: নবীন তপস্বিনী-তে জলধর, দুর্গেশনন্দিনী-তে বিদ্যাদিগ্গজ, সিরাজদ্দৌলায় ড্রেক, মীরকাশিমে হলওয়েল, হে ও মেজর অ্যাডাম্স, প্রফুল্লে রমেশ, রিজিয়ায় ঘাতক, প্রতাপাদিত্যে রডা ইত্যাদি। তিনি নাট্যশিক্ষক হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।বিনার ঝনকার নামে তিনি একটি বইও লিখেছিলেন।

১৯০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় কলকাতায় প্রয়াত হন অর্ধেন্দুশেখর ।সেই সাথে বাংলা নাট্য শিল্পে একটা যুগের অবসান ঘটে।কালের অতল গভীরে ঢাকা পড়ে যান এই মহান নাট্যভিনেতা।এখন সংবাদ পরিবার আপনাকে জানায় শতকোটি প্রণাম

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read