ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নারীর সমানাধিকারের লড়াইয়ের তিনি অন্যতম রূপকার,নেতৃত্ব দিয়েছেন নারী কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে।নারী কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ শুরু করেন, প্রতিষ্ঠা করেন একাধিক আশ্রমও।তিনি অনুরূপা দেবী
১৮৮২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সেপ্টেম্বর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলে মাতুলালয়ে অনুরূপা দেবী জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও লেখক এবং মা দয়াসুন্দরী।। সাহিত্যিক ও সমাজ-সংস্কারক ভূদেব মুখোপাধ্যায় ছিলেন অনুরূপা দেবীর ঠাকুরদা এবং বঙ্গীয় নাট্যশালার প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তার দাদামশাই।
মাত্র দশ বছর বয়সে উত্তরপাড়ার শিখরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে হয় অনুরূপা দেবীর। বিহারের মুজফ্ফরপুরে শুরু হয় সংসার জীবন। দুটি সন্তান হয়, একটি পুত্র এবং একটি কন্যা। শিখরনাথ অবসরে পড়তেন দেশ-বিদেশের সাহিত্য; সাহিত্য নিয়ে আলোচনা খুব পছন্দ করতেন। স্ত্রীকেও লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন।
দিদি ইন্দিরা দেবীর অনুপ্রেরণায় অনুরূপা দেবী সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। প্রথম কবিতা রচনা করেছিলেন ঋজুপাঠ অবলম্বনে।‘রাণী দেবী’ ছদ্মনামে গল্প লিখে কুন্তলীন পুরস্কার জিতে নেন অনুরূপা দেবী। ১৩১১ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘টিলকুঠি’ প্রকাশিত হয় নবনুর পত্রিকায়। ১৩১৯ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পোষ্যপুত্র’ উপন্যাসের মাধ্যমেই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। এর পর একের পর এক উপন্যাস লিখেছেন— ‘মন্ত্রশক্তি’, ‘মা’, ‘মহানিশা’, ‘জ্যোতিহারা’, ‘বাগদত্তা’, ‘পথের সাথী’, ‘উত্তরায়ণ’। মোট তেত্রিশটি গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।১৯৪৯ খ্রীষ্টাব্দে নারী নিয়ে তাঁর রচিত ‘সাহিত্যে নারী’ বইটি নারী রচিত সাহিত্য-আলোচনার পথপ্রদর্শক। কবিতা লেখার হাতও ছিল চমৎকার।
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি পণপ্রথা, বহুবিবাহের বিরুদ্ধেও জনমত গড়ে তুলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ কন্যা মাধুরীলতার সঙ্গে একযোগে মুজফ্ফরপুরে ‘চ্যাপম্যান গার্লস স্কুল’ নামের ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্ত ছিলেন কলকাতা ও কাশীর কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয়ের সঙ্গেও। ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন যে নারীদেরও আছে, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন অনেক আগেই। নারী কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন একাধিক আশ্রম। ১৯৩০-এ মহিলা সমবায়ও তৈরি হয় তাঁর দক্ষতায়। সরব হয়েছিলেন ১৯৪৬-এর হিন্দু কোড বিল আন্দোলনেও।
১৯৩৪-এ মুজফ্ফরপুরের ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় তাঁর কন্যার। ভূমিকম্পে তিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সব-হারানো মানুষের কান্না মোছাতে তৈরি করেছিলেন ‘কল্যাণব্রত সঙ্ঘ’।১৯৫৮ সালের ১৯ এপ্রিল রানিগঞ্জেই তাঁর প্রয়ান হয়।
সাহিত্যিক-সমাজ সংস্কারক মহীয়সি নারী অনুরূপা দেবীকে জন্মদিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে এখন সংবাদ পরিবার