Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। মিলন ।।

গৌতম নারায়ণ দেব:- মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই সায়নীর মোবাইলটা বেজে উঠল।
সায়নী “হ্যালো” বলতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল, “হ্যাঁ, আমি নির্মাল্য মজুমদারের অ্যাসিস্ট্যান্ট, জয়ন্ত বোস বলছি। নমস্কার। আগামীকাল স্যার আপনাকে একটু দেখা করতে বলেছেন। আপনি কি আসতে পারবেন?”

-” কেন বলুন তো?”

-” তা তো ম্যাম বলতে পারব না।”

-“কিন্তু, আমায় কোথায় দেখা করতে হবে আর কখনই বা?”
-“স্যারের চেম্বারেই আপনি সরাসরি চলে আসুন। আপনি তো জানেনই ,ফার্স্ট ফ্লোরের ১০৯ নম্বর ঘর। হ্যাঁ,বেলা এগারোটা নাগাদ আসলেই হবে।”

একটু ভেবে নিয়ে সায়নী জানিয়ে দিল,”ঠিক আছে। যাব। তবে বিকেলের দিকে হলে হয়তো যেতেই পারতাম না।”

ফোনটা রাখতেই শিবানীদেবী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,”কে করেছিলো রে?”

-“ওই কোর্ট থেকে। স্যারের অ্যাসিস্ট্যান্ট। কাল আমাকে স্যার একটু দেখা করতে বলেছেন।”

“কী জন্যে আবার কে জানে?” এইভাবে একটা উদ্বেগ প্রকাশ করে সায়নীর মা অন্য ঘরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ বাদে অবশ্য তিনি ফিরেও এলেন। তখন নিজের মনেই বলতে লাগলেন,”অঙ্কুর তো ছেলেটা খারাপ ছিল না। আট বছর ধরে প্রেমের পরে বিয়ে। আর সেই বিয়ে কিনা ছ’টা মাসও টিকলো না।”

মায়ের মুখ থেকে তির্যকভাবে বেরিয়ে আসা এই কথাটা শোনার পরেই সায়নী একরকম গর্জে উঠল।
” মা, তুমি কি তবে বলতে চাইছ সবটাই আমার দোষ?”

-“না, তোর দোষের কথা বলছি না। আমি বলতে চাইছি, নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা বা অ্যাডজাস্টমেন্ট আরো একটু কি করা যেত না এরকম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। অঙ্কুরের দোষের মধ্যে তো ছিল শুধু তোকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া। তাও সেটা অফিসের ব্যস্ততার কারণে। হ্যাঁ,মানছি তোর খারাপ লাগত। খারাপ লাগারই কথা। আলাপ-আলোচনা করে যদি অন্য কোন উপায় বার করা যেত,তবে সেটা কি ভালো হত না?”

সায়নীর মনটা যেন মনে হল একটু নরমই হয়ে গেল এই কথাগুলো শোনার পর। একটু যেন অনুতপ্তও । শুধু বলল,”যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে,মা। মিউচুয়াল ডিভোর্সের আইনি প্রক্রিয়াও এখন শেষ। আলোচনার কোন স্কোপও নেই এই মুহূর্তে। তাই ওটা নিয়ে আর বেশী চিন্তা না করাই ভালো।”
এই বলতে বলতেই সায়নীর গলাটাও যেন ধরে আসল। হয়তো প্রেম পর্যায়ের কিছু স্মৃতি ওর মনের মধ্যে ভিড় করে আসছিল সেই মুহূর্তে। দু-ফোঁটা জলও ঝরে পড়ল ওর চোখ দুটো থেকে,নিঃশব্দে।

যাই হোক, পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নির্মাল্যবাবুর চেম্বারে সায়নী যথারীতি উপস্থিত হল। এবং বিস্ময়করভাবে ওর চোখে পড়ল অঙ্কুরও চলে এসেছে সেখানে। সায়নীর এফ আই আরের ভিত্তিতে গ্রেফতারি এড়াতেই অঙ্কুর কোর্টে আপিল করেছিল এবং স্যারের সাথে সেই সব বিষয় নিয়েই ও কথা বলছিল। সায়নী ঘরে ঢোকা মাত্রই স্যার ওকে বসতে অনুরোধ করলেন এবং তারপরই বললেন,” সত্যি আমি খুব খুশী হয়েছি আপনাদের দুজনের এই সময়জ্ঞানে। আজকাল যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাপারটা খুব একটা দেখা যায় না, সেখানে আপনারা দুজনেই সময়ের আগেই চলে এসেছেন।”
বিচারক মহোদয়ের থেকে এই প্রশংসা শুনে সায়নী একটু মুচকি হাসল।
কফি খেতে খেতেই নির্মাল্যবাবু শুরু করলেন ওনার কথাবার্তা।
“আচ্ছা,অঙ্কুরবাবু,আপনি বিয়েতে শ্বশুরবাড়ির দেওয়া সমস্ত জিনিসপত্র এখনও ফেরৎ দেননি কেন? অন্তত এরকমই অভিযোগ তো সায়নীদেবী করেছেন আপনার বিরুদ্ধে। তাই তো,সায়নীদেবী?”

-“হ্যাঁ”,আস্তে করে সায়নী জানাল।

আর অভিযোগের উত্তরে অঙ্কুর তখন বলল,”দেখুন, কথাটা পুরোটা ঠিক নয়।”

-“ওহ, তাহলে কিছুটা ঠিক?”

-“না, আসলে বেশীরভাগটাই তো আগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। সামান্য যা কিছু বাকী ছিল,সেগুলোও পরে পাঠিয়েছিলাম। তখন ওরা বাড়িতে কেউই ছিল না বলে সেগুলো ফেরৎ এসেছিল। হ্যাঁ, এটা ঠিকই, পরে আর তা পাঠানো হয়নি।”

এরপর হঠাৎ করেই ওদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে নির্মাল্যবাবু বলে উঠলেন,”শুনুন, আপনাদের কেস হিস্ট্রি পড়ে যেটা বুঝলাম,নিতান্তই ইম্পালসিভ ছিল আপনাদের ডিসিশন। সম্পূর্ণ আবেগের বশেই সায়নীদেবী এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন আর ইগোর কারণে অঙ্কুরবাবু তাতে সায় দিয়েছিলেন। আচ্ছা,একটা কথা বলুন তো। আপনারা দুজনে কি ফের মিলতে পারেন না? যথেষ্ট শিক্ষিত আপনারা। আর আপনাদের বিচ্ছেদের কারণটাও গুরুতর কিছু নয়। দেখুন না,একটু চেষ্টা করে। যদি ভাঙা সম্পর্কটা আবার জোড়া লাগানো যায়। কী বলেন,অঙ্কুরবাবু?”

অঙ্কুর বোধ হয় মানসিক দিক দিয়ে প্রস্তুতই ছিল। নইলে অত তাড়াতাড়ি এই প্রস্তাবের উত্তরে ওর পক্ষে কীভাবে বলা সম্ভব হল,তাও আবার হাসতে হাসতে,” খুবই উত্তম আপনার এই প্রস্তাব। সত্যিই তো, অনেক দিন হয়ে গেল দুজনের সেই জমিয়ে আড্ডা দেওয়াটা আর হয়ে ওঠেনি।”

সম্মতি-সূচক অঙ্কুরের এই উত্তরটা শুনে সায়নীও যখন ওর সহমতের হাসিটা হাসলো, নির্মাল্যবাবু ওনার সহকারীকে তক্ষুণি ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে নির্দেশ দিলেন,”শিগগিরি এনাদের জন্য মন্দারমণিতে আগামী দুই দিনের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা করুন।”

শেষে অঙ্কুর আর সায়নীর সাথে করমর্দন করে তিনি বললেন,” আপনাদের পুনরায় ঘরে ফেরাতে পেরে আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে,সত্যিই তা বলে বোঝাতে পারব না। ভাঙাটা তো অনেক সহজ, কিন্তু গড়তে কজন পারে,বলুন?
ঠিক আছে,আজ এখানেই থাক। আপনারা আগে ঘুরে আসুন। পরে প্রয়োজনীয় সব আইনি প্রক্রিয়া করা যাবে খন।”

[বাস্তব অবলম্বনে]

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read