সুস্মিত মিশ্র
৭৫ বর্ষের স্বাধীনতায় ভারতের মানুষ শুধুই খারাপ-ইংরেজদের চেনেন, কিন্তু যে ইংরেজরা তাঁদের উদার আদর্শে বিশ্বাস করেন, অত্যাচারিতের জন্য সাহসে ভর করে নিজের স্বজাতির ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাঁদেরকে কতটা চেনে আজকের ভারত ? যাঁরা সাম্রাজ্যের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাম্রাজ্য-যুগে বসেই তাঁরা কি থেকে যাবেন চীর অন্তরালে ? ১৮৪৭ সালের ১ অক্টোবর এমনই একজন মহীয়সী লন্ডনে, এক মধ্যবিত্ত আইরিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সমাজতান্ত্রিক, ব্রহ্মজ্ঞানী, নারী অধিকার আন্দোলনকারী, লেখিকা, বাগ্মী, এবং আইরিশ ও ভারতীয় স্বায়ত্বশাসনের সমর্থক অ্যানি উড নামের এই নারী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অন্যতম পুরধা।যিনি অ্যানি বেসান্ত নামে পরিচিত।
তার পাঁচ বছর বয়সে, তাদের পরিবারকে প্রায় কপর্দকশূণ্য অবস্থায় রেখে তার বাবা মারা যান। হ্যারো স্কুলে ছেলেদের জন্য একটি বোর্ডিং চালিয়ে তার মা পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। ১৮৬৭ সালে, কুড়ি বছর বয়সে, তিনি ২৬ বছর বয়সী পাদরী ফ্রাঙ্ক বেসান্তকে বিবাহ করেন। তিনি একজন বিলাতী ধর্মপ্রচারক ছিলেন।ভারতবর্ষে এসে তিনি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন ও কাশীতে ‘থিওসফিক্যাল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন ।
এছাড়াও অ্যানি বিখ্যাত সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ।পরবর্তীকালে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে ডি.এল উপাধি দেওয়া হয় ।অ্যানি স্বরচিত গ্রন্থাবলির উপার্জন পরোপকারের কাজে ব্যয় করতেন ।তিনি ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ম্যাডরাস স্ট্যান্ডার্ড’ নামে দৈনিক সংবাদপত্রের মালিকানা কিনে নেন । পরবর্তীতে তা ‘নিউ ইন্ডিয়া’ নামে প্রকাশ করেন ।১৯১৭ সালে এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
আইরিশ পরিচয়ের এই ইংরেজ আদ্যন্ত রাজনৈতিক বোধে প্রাণিত সাম্রাজ্যবিরোধী। ভারতকে নিজের দ্বিতীয় মাতৃভূমি করে নিয়েছিলেন তিনি। নতুন মাতৃভূমির জন্য ভারতীয় কংগ্রেসকে তৈরি করার ব্রতে পুরোপুরিআত্মনিয়োগ করেছিলেন। ‘দ্য ডিপেস্ট, গ্রেভেস্ট রং দ্যাট গ্রেট ব্রিটেন হ্যাজ় ইনফ্লিক্টেড অন আ ওয়ান্স মাইটি অ্যান্ড ইম্পিরিয়াল রেস’-এর বিষয়ে বিশ্বকে অবহিত করার কাজটা নিজের ঘাড়ে নিয়েছিলেন। ভারতের হোমরুল অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, গ্রেফতার হয়েছিলেন।তখন সারা ভারতের রাজনীতি যেন তাঁর সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল, শ্রদ্ধায়, সম্ভ্রমে।১৯১৭ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি হন।
১৯৩৩ সালে ২০ সেপ্টেম্বর ৮৫ বছর বয়সে অ্যানি বেসান্ত পরলোক গমন করেন ।তিনি বিদেশিনী হয়েও মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতার জন্য স্বচেষ্ট ছিলেন।আফসোস, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দীর্ঘদিন ভারত শাসন করেছে, তবে সেই সংগঠনের একজন সভাপতির স্মৃতিরক্ষায় তেমন কিছুই করেননি তারা।দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা বর্ষে আজাদির অমৃত মহোৎসবেও ব্রাত্য থেকে গেলেন তিনি ।
অ্যানি বেসান্ত বলেছিলেন, “ভারতের মানুষ খারাপ-ইংরেজদের চেনেন, কিন্তু যে ইংরেজরা উদার আদর্শে বিশ্বাস করেন, অত্যাচারিতের জন্য সাহসে ভর করে ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন, তাঁদেরকেও ভারতের চেনা দরকার।”
ভারতীয় স্বায়ত্বশাসনের,নারী অধিকার আন্দোলনকারী,সমাজতান্ত্রিক মহীয়সী অ্যানি বেসান্তকে তাঁর প্রয়ান দিবসে শতকোটি প্রনাম জানায় এখন সংবাদ পরিবার