পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি -১ ব্লকের পাঁচ নম্বর মহিষাগট অঞ্চলের টগরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও রেশন ডিলার সুকুমার দাস(৪৮) মঙ্গলবার এগারোটার তার রেশন দোকানে সময় গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করে।
ঘটনা প্রকাশ বাস্তবে সামগ্রী না দিয়ে ভুয়ো স্টক অনলাইনে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য ফিজিক্যালি স্টক পারমিট করেনি। , আগামী মাসের বরাদ্দকৃত মাল এই মাসের জমা নিয়ে এ মাসের মাল বিতরণ করার কথাবার্তা হয়েছিল ডিস্ট্রিবিউটারের সঙ্গে। সেইমতো ডিস্ট্রিবিউটর পিছাবনী এস কে ইউ এস সোসাইটি সকালে মাল দেওয়ার কথা ছিল।
পূর্ব ঘোষিত দুয়ারে রেশন ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন ডিলার। ডিস্ট্রিবিউটারের কাছ থেকে সরাসরি মাল দুয়ারে রেশন ক্যাম্পে চলে আসার কথা ছিল। সময় মত ডিস্ট্রিবিউটার মাল না পাঠানোর জন্য গ্রাহকদের মাল দিতে পারেনি রেশন ডিলার সুকুমারবাবু। যার কারনে গ্রাহকরা রেশন নিতে এসে ফিরে যাওয়ায় ডিলারকে অস্রাব্য গালিগালাজ ও হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। গো ডাউন কর্তৃপক্ষ সময় মতন মাল ডেলিভারি দেয় নি।
উপস্থিত সমস্ত গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে অস্রাব গালিগালাজ। মারধর করার উপক্রম এর সম্মুখীন হতে হয় ডিলারকে।
ডিলার সুকুমার দাস বাড়িতে টিফিন করতে আসবার নাম করে রেশন দোকানে এসে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে। পরিবারের লোকেরা দেখতে পেয়ে ফাঁসি থেকে নামিয়ে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসক ১২:১৫ মিনিটে ঘোষণা করেন সুকুমার বাবু মারা গেছেন।
সুইসাইড নোট থেকে জানাগেছে বকেয়া দুমাসের কমিশন বিল আটকে থাকা এবং ভূয়ো মালের স্টকের জন্য আত্মঘাতী হয়েছে।এই ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাঁথি মহকুমা শাখার সম্পাদক মদনমোহন দাস অধিকারী। তিনি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন ভূয়ো স্টক অন্যভাবে সংশোধন করে দেওয়া হবে বলে স্টকিস্ট এবং খাদ্য দপ্তর জানিয়েছিল। মদন বাবুর প্রশ্ন তুলেছেন ভুল যদি হয়ে থাকে সংশোধন কেন সঙ্গে সঙ্গে হবে না। তিনি অভিযোগ করেন একাধিক ডিলার এই ধরনের প্যাঁচের শিকার হয়েছেন। এই ব্যাপারে খাদ্য দপ্তরে বহুবার ব্যক্তিগত এবং সংগঠনগতভাবে অভিযোগ জানিয়েও কোন সুফল হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন ২০২১এবং ২০২২ সালে করণা কালে ৩৫% রেশন কার্ডে আধার লিঙ্ক ছিল না যার কারনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট করে রেশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। খাদ্য দপ্তরের নির্দেশ ছিল সকলকে রেশন দিতে হবে। যার কারণে এই ৩৫ শতাংশ রেশন কার্ডের রেশন সামগ্রী অনলাইনে দেখানো সম্ভব হয়নি। ডিলারদের এই ৩৫ শতাংশ রেশন সামগ্রী অর্থাৎ প্রায় ১৫০ কুইন্টাল ঘাটতি থেকে গেছে। সেই ঘাটতি কোনভাবে মেটানোর চেষ্টা করেনি খাদ্য দপ্তর। যার কারনে বহু ডিলারকে জমি বাড়ি বিক্রি করে এই ঘাটতি পূরণ করতে হয়েছে।
সুকুমার বাবুর ক্ষেত্রে হয়ে উঠেনি। যে কারণে তিনি তার সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন খাদ্য দপ্তরের গাফিলতির কারণে আত্মঘাতী হতে হলো। এছাড়াও মদনবাবু অভিযোগ করেন এক একজন ডিলারের কমিশন তিন থেকে চার মাস বাকি আছে। এর ফলে ডিলাররা সমস্যায় পড়ছেন। ডিলার এর কাছে মাল না থাকলেও ইপসে বিল বেরিয়ে আসছে । আগে সিস্টেম ছিল মাল স্টক না থাকলে বিল বেরোবে না। দপ্তর সেই ব্যবস্থাকে তুলে দিয়েছে। যার কারণে ডিলাররা বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের কাছে বাকি রাখছে মাল। এছাড়াও ই কাঁটার বহু সমস্যা থাকছে। ইন্টারনেট পরিষেবা খুব ধীরগতি হওয়ায় গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একদিনে ২০০ পরিবারকে মাল দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ১০০ পরিবারকেও মাল দেওয়া সম্ভব হয়না। গ্রাহকরা বিরক্ত হয়ে রেশন ডিলারদের অস্রাব্য গালিগালাজ করে। এছাড়াও যে আটা সরবরাহ করা হচ্ছে তা পশু খাদ্যের যোগ্য নয়।এই ব্যাপারে বহুবার অভিযোগ জানিও কোন কাজ হয়নি। এক্ষেত্রেও রেশন ডিলার কে কথা শুনতে হয়। যখন তখন গ্রাহকের কার্ডের লিংক ফেল হয়ে যায়। যার কারনে ডিলারকে দোষারোপ করে গ্রাহকেরা। এই সমস্ত ব্যবস্থা খাদ্য দপ্তর কোনরকম সংশোধন করার চেষ্টা করছে না। এই ব্যাপারে দীর্ঘ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সংগঠন। মঙ্গলবার কাঁথি থানা সুইসাইড নোট নিতে অস্বীকার করেছিল বলে অভিযোগ। পরে সংগঠনগতভাবে দাবি জানানোতে,কাঁথি থানার আইসি অভিযোগ এবং সুইসাইড নোট নিতে বাধ্য হয়েছে। মদন বাবু বলেন এর জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা লড়বো। এই বিষয়ে জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তমাল তরু দাস মহাপাত্র বলেন যে কোন মৃত্যুই দুঃখের। এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। বিভাগের গাফিলতি যদি থাকে তাহলে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অভিযোগ করতে পারতেন। তার জন্য মৃত্যুবরণ করা কোন যুক্তি নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। যদি ডিস্ট্রিবিউটার এর কোন গাফিলতি থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকৃত বিষয়টি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে।