Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চেন্নাই থেকে কলকাতার SSKM! শিশুর জটিল রোগের চিকিৎসায় নজিরের পথে শহরের হাসপাতাল – News18 Bangla

#কলকাতা: এ সত্যিই যেন উলটপুরান। যেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভাল চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যাওয়াটাই উচিত বলে ভাবেন অনেকে। সেখানে তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতালে এসে জটিল হাইপোপ্লাসিয়া রোগে আক্রান্ত ৬ বছরের শিশুর চিকিৎসা হল। এক মাস চিকিৎসা করিয়ে খুশি বাবা মা-ও।

গীতশ্রী চন্দ্র মৌলি, ৬ বছর বয়স। মায়ের কোলে গুটিসুঁটি মেরে থাকে। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো হেসে, খেলে, হেঁটে, দৌড়ানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। কথা বলাও দূর অস্ত। জন্মের দেড় মাস পর খিঁচুনি শুরু হয়। আর তার পরেই ধরা পড়ে এই জটিল হাইপোপ্লাসিয়া রোগ।

কী এই হাইপোগ্লাসিয়া রোগ? সঠিক পরিমাণ কোষের অভাবে নির্দিষ্ট টিস্যু বা অঙ্গের ডেভেলপমেন্ট বা বিকাশ না হওয়া। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবে ঘাড় শক্ত হয় না। হাত, পায়ের বিকাশ হয় না। হাঁটাচলা অসম্ভব। কথা বলতে না পারা, চোখের গুরুতর সমস্যা, মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া এই রোগের লক্ষণ।

যাদবপুরের মেয়ে বৈশাখী চক্রবর্তী নৃত্য শিক্ষিকা। আর সেই পেশার সূত্রেই বেশ কয়েক বছর আগে চেন্নাইতে সঙ্গীত শিক্ষক এস চন্দ্রমৌলির সঙ্গে আলাপ এবং তার পরে বিয়ে। তার পর সেখানেই বসবাস। আর সন্তান জন্মানোর পর লড়াই শুরু। চেন্নাই তো বটেই। দক্ষিণ ভারতের নামী দামি হাসপাতাল থেকে শুরু করে দিল্লি, মুম্বই কোথায় না ছুটে বেড়িয়েছেন বাবা-মা। কিন্তু রোগের উপশম তো দূর অস্ত, বরং মেয়ের অবস্থা আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছিল। এরপর এক প্রকার শেষ চেষ্টা।

ইন্টারনেট দেখে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সন্ধান পান তাঁরা। গত এক মাস ধরে এসএসকেএম-এ চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা উপকার পেয়েছে পরিবার। গীতশ্রীর বাবা এস চন্দ্রমৌলি বলেন, “এই হাসপাতাল আমাদের কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। বাবা হিসেবে চোখে দেখতে পারতাম না, কতটা কষ্ট! কোথায় না গিয়েছি,সর্বত্রই ব্যর্থ। এখন শেষ ভরসা এই এসএসকেএম হাসপাতাল। গত এক মাস ধরে এখানে চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা ফল পেয়েছি। আমাদের আরও অনেকদিন চিকিৎসা করাতে হবে। এখনকার চিকিৎসকরা আমার কাছে ঈশ্বরের দূত।”

গীতশ্রীর মা বৈশাখী চক্রবর্তী এতো লড়াইয়ের মধ্যেই হাসিমুখে চোখের জল চেপে জানান,”কোথায় না চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু কোথাও আশ্বাস পাইনি,মেয়ের ঘাড়ও শক্ত ছিল না। সর্বত্রই কোলে করে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন চিকিৎসা হয়েছে। আমি কলকাতার মেয়ে হয়েও এই পিজি হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের নাম জানতাম না। হঠাৎ করেই কিছুদিন আগে ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে এখানকার সন্ধান পাই। অনেক রোগীই তাদের সেরে ওঠার কথা লিখেছেন। আর তারপর গত একমাস ধরে এটাই আমার ঠিকানা। এক মাসের মধ্যেই আমার মেয়ের ঘাড় শক্ত হয়েছে,আমার মন বলছে, এখানে চিকিৎসা করালে মেয়ে অনেকটাই সুস্থ হবে।”

আরও পড়ুন- কোভিড পরিস্থিতি, বৃষ্টি কাটিয়ে নমাজ পড়তে মসজিদে মানুষের ঢল

অন্যদিকে এসএসকেএম হাসপাতাল এর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজেশ প্রামাণিক জানান, “এই লড়াই অনেকদিন ধরে লড়তে হবে। তবে আমাদের রাজ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের থেকে অনেকটাই উন্নত। দেশের যে কোনো নামী হাসপাতালের থেকে কোনও অংশে কম নয় এখানকার চিকিৎসা পরিষেবা। ৬ বছরের গীতশ্রিকে সুস্থ করে তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তবে এই রোগটা অত্যন্ত জটিল এবং সবথেকে বড় কথা,অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। তবে আমরা হাল ছাড়ব না। আমাদের বিভাগের অন্যান্য পিজিটি থেকে জুনিয়র চিকিৎসক থেকে ফিজিওথেরাপিস্টরা প্রত্যেকে একযোগে এই মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছে।”

সম্প্রতি টেলি মেডিসিন এর ক্ষেত্রে গোটা দেশে অন্ধ্রপ্রদেশের পরই পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। তবে যে মিথ সর্বত্র, যে এই রাজ্যের থেকে দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা অনেক ভাল হয়, যার জন্য অনেকেই ছোটেন সেই সুদূর দক্ষিণ ভারত। ছোট্ট গীতশ্রী চিকিৎসার জন্য তার বাবা-মার এই রাজ্যে ছুটে আসা সেই মিথকে ভাঙতে প্রমাণ করছে।

Published by:Swaralipi Dasgupta

First published:

Tags: Kolkata News, SSKM

Source link

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read