#কলকাতা: জন্মের সময়েই মস্তিষ্কে জল জমেছিল। দেড় মাস বয়সে ব্রেনে অস্ত্রোপচার। এরপর ৩ মাস আগে হঠাৎ করে আবার খিঁচুনি।গোটা শরীর জড় পদার্থের মত হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের একদল অকুতোভয় চিকিৎসক প্রথমে অপারেশন এবং তারপর স্নায়ু পুনর্বাসনের মাধ্যমে কোমা থেকে 8 বছরের শিশুকে অনেকটা সুস্থ করে নবজন্ম দিল।
আয়ুষ্মান সরকার, আট বছর বয়স। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া টাউনশিপ এর বাসিন্দা। গুরগাওঁ এর এক বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের আগে প্রথম দিকের ইউ এস জি তে কোনো সমস্যা ধরা না পড়লেও গর্ভাবস্থায় আট মাসের ইউ এস জিতে কনজেনিটাল হাইড্রোসেফালাস বা ব্রেনে জল জমা ধরা পড়ে। এরপর জন্মের দেড় মাসের মাথাতেই চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে মস্তিষ্কের অপারেশন করা হয়। এরপর মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিলেও মোটামুটি ভাবে জীবন চলছিল। হঠাৎ করে গত বছর সরকার পরিবারে দুঃস্বপ্নের ছায়া নেমে আসে। আবারও নতুন করে খিঁচুনি এবং তার সঙ্গে গোটা শরীর অবশ হয়ে পড়ে আয়ুষ্মান এর। হলদিয়া থেকে সরাসরি তাকে নিয়ে আসা হয় মল্লিক বাজার এর ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সাইন্সসে। সেখানেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন চিকিৎসকরা। সেখানে ধরা পড়ে, আবারো আয়ুষ্মান এর ব্রেনে জল জমে গেছে। সেখানেই অস্ত্রোপচার করা হয়। তাতে কোনো সুরাহা তো হলোই না,তার পরেও একপ্রকার কোমাতেই চলে যায় আয়ুষ্মান।
কনজেনিটাল হাইড্রোসেফালাস কি? জন্মের সময় মস্তিষ্কে অত্যধিক পরিমাণে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড জমে যায়। ফলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক ভাবে বিকশিত হতে পারে না, অত্যধিক পরিমাণে জল জমে যাওয়ায় দ্রুত শারীরিক অবনতি দেখা যায় এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অস্ত্রোপচার করতে হয়। একে বলা হয় ‘সান্ট সিস্টেম’। মস্তিষ্কের ভেতরে প্লাস্টিক টিউব ঢুকিয়ে অতিরিক্ত জল বার করে আরেকটি টিউব দিয়ে তা পেটের ভেতরে বা চামড়ার ভিতরে ঢুকানো হয়।
আরও পড়ুন – তরুণ এই রিঙ্কু সিংয়ে মজেছে মন, জানেন আইপিএল খেলে কত সম্পত্তির মালিক
এরপরই শুরু হয় চিকিৎসকদের চ্যালেঞ্জ। দু’মাস ধরে নিবিড় ভাবে নিউরো রিহ্যাব করে এক প্রকার জড় অবস্থা বা কোমা থেকে ছোট্ট আয়ুষ্মান কে অনেকটাই স্বাভাবিক করে তোলেন চিকিৎসকরা। আই এন কে বা ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সাইন্সসে এর নিউরো রিহ্যাব চিকিৎসক সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,” ছোট শিশুটি সম্পূর্ণ কোমায় চলে গিয়েছিল। সত্যিই বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল।খুবই ঝুঁকি ছিল,ছোট্ট আয়ুষ্মান কে সুস্থ করে তোলা। তবে ওর পরিবারও খুবই সহযোগিতা করেছিল। আমাদের গোটা নিউরো রিহ্যাব টিমের সবাই যেভাবে একসাথে ঝাঁপিয়ে এই চিকিৎসায় নেমেছিল,সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আয়ুষ্মান কে অনেকটাই ভালো করে তুলতে পেরেছে। এটাই চিকিৎসক হিসেবে বড়ো তৃপ্তি। “
জন্ম থেকেই লড়াই করে যাচ্ছে গোটা পরিবার। তবুও একমাত্র সন্তানকে বাচাঁনোর জন্য তাদের মধ্যে এবং ইচ্ছাশক্তি ছিল প্রধান সম্বল। তবে ছেলেকে যে এইভাবে ফেরত পাবেন তা স্বপ্নেও ভাবেননি আয়ুষ্মান এর মা। সমস্ত কৃতিত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকদেরকে।আয়ুষ্মান এর মা মধুমিতা সরকার বলেন,” জন্ম থেকেই লড়াই করছি। তবে হাল ছাড়তে নারাজ ছিলাম। আর এখানকার চিকিৎসক,নার্স সহ বাকি কর্মীরা খুবই সহযোগিতা করেছিল। আগামীদিনে হয়তো আরো বড় লড়াই করতে হবে। “
বাড়ি ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় আয়ুষ্মান। চিকিৎসকরা তার কাছে এখন ফ্রেন্ড। দুর্নিবার স্বপ্নালু চোখে আগামী দিনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন রচনা করে যাচ্ছে আয়ুষ্মান। চিকিৎসকদের লড়াই যে তার ছোট্ট মনকেও ছুঁয়ে গেছে,বাড়ি যাওয়ার আগে হাসপাতালের নিউরো রিহ্যাব ইউনিটের সবার চোখেই জল।
ABHIJIT CHANDA
Published by:Debalina Datta
First published:
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Doctor