পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে জলে তোড়ে কার্যত প্লাবিত । জলের প্রচন্ড চাপে পাঁশকুড়ার একাধিক ওয়ার্ডের একাধিক বাড়ি যার ফলে ভেঙে গিয়েছে বলে জানা গেছে ।
পরিস্থতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এলাকায় উদ্ধার কাজে নেমেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ব্লক ও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে আসার কাজ চলছে। একাধিক রাস্তা বর্তমানে কংসাবতী নদীর জলের তলায়।
কয়েকদিনের একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছিল জল। এবার ব্যারেজের ছাড়া জলের তোড়ে ভেঙে পড়ল কংসাবতী নদীর বাঁধ। বুধবার ভোরের দিকে পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮নং ওয়ার্ড এলাকায় আচমকাই নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল বিস্তীর্ণ এলাকা। এর জেরে চরম বিপর্যস্ত পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে তমলুক পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক পেরিয়ে এই জল বয়ে চলেছে স্টেশন চত্বরের দিকে। এই মুহূর্তের খবর, প্রচন্ড গতিতে জল ঢুকতে থাকায় নদীবাঁধে কোনও প্রতিরোধের বন্দোবস্ত করা যায়নি। এলাকাবাসীদের দাবী, প্রশাসন আরও সচেতন হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বিস্তীর্ণ নদীবাঁধের একাধিক দুর্বল এলাকা চিহ্নিত করে রাতভর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ চলার পরেও এমন ঘটনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জোরদার ততপরতা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোর প্রায় ৪টে নাগাদ পাঁশকুড়ার জড়দা এলাকায় কংসাবতী নদীবাঁধ ভেঙে পড়ে। এর জেরে হুহু করে জল ঢুকতে শুরু করেছে এলাকায়। এর আগে একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তারই মাঝে কংসাবতীর বাঁধ ভেঙে পড়ায় দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কংসাবতীর বাঁধ ভেঙে এই মুহূর্তে পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮নং ১৫নং ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাঁপাডালি, গড়পুরুষোত্তমপুর, বালিডাংরি এলাকা। পাঁশকুড়া স্টেশনের আশেপাশের এলাকাতেও দেদার জল ঢুকতে শুরু করেছে। এর জেরে পুরসভার পাশাপাশি পঞ্চায়েত এলাকাগুলিও ব্যাপক হারে প্রভাবিত হয়েছে। পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক সেক ইব্রাহিম আলি জানিয়েছেন, “গতকাল থেকেই কংসাবতীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। ভোরের অন্ধকারে নদীবাঁধ ভাঙনের ফলে বহু মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে আতংকিত বহু মানুষ বাড়ি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু নদীবাঁধে ছুড়ে এসেছেন। একটা ভয়াবহ আতংকের মধ্যে মানুষ বাস করছে”।
তিনি জানান, “এই মুহূর্তে যে গতিতে জল ঢুকতে তাতে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে”। তাঁর আরও দাবী, “এই মুহূর্তে এলাকায় প্রশাসনের কোনও লোকজনকে দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের কাছে অনুরোধ, দ্রুত নদীবাঁধ সংস্কার করে এলাকাবাসীদের এই জল যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা করুন”।
যদিও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবার কংসাবতী ব্যারেজ থেকে ৪৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় মঙ্গলবার নদীর জল বিপদসীমার ওপর থেকে বইছিল। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেচদফতরের তমলুকের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত সরকারের নেতৃত্বে রাতভর পাঁশকুড়া সংলগ্ন কংসাবতীর বাঁধের একাধিক জায়গায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ চলেছে। জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজিও পাঁশকুড়ার গড়পুরুষোত্তমপুর, ডোমঘাট এলাকায় কংসাবতীর বাঁধ মেরামতির কাজ পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার রাতভর নদীবাঁধে যে জায়গাগুলিতে ফাঁকফোকর দিয়ে এলাকায় জল ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সেখানে মেরামতির কাজ হয়েছে। তারপরেও একটি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে এই বাঁধ সংস্কারে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।