পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার নারায়ণদাঁড়িতে বৃহস্পতিবার জলে নেমে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জলবন্দী মানুষদের মাঝে গিয়ে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে জেলা শাসককে কড়া নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিলেন, “দুর্গতদের যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে দিতে হবে। সেই সঙ্গে যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তাঁদের থাকা ও খাওয়ার দায়িত্ব রাজ্য বহন করবে”।
ডিভিসির ছাড়া জলে বাংলার একের পর এক জেলা প্লাবিত হওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বুধবারই বন্যা দুর্গত এলাকাগুলি ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমেই তিনি হুগলির পুরশুড়ায় যান। সেখান থেকে হুগলি জেলার একাধিক এলাকা ঘুরে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসেন। এরপর রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরে কাটিয়ে সকাল হতেই চলে আসেন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। এরপর তিনি হাওড়ার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চলে যান।
পাঁশকুড়ায় বন্যা দূর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিয়ে অভিযোগের বিষয়েও কঠোর বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “রাজ্য সরকার যথেষ্ট পরিমানে ত্রাণ, টাকা পাঠিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে কোনও মানুষের অভিযোগ যেন নবান্ন পর্যন্ত না যায়। জল প্লাবিত এই মানুষদের সমস্ত রকম সমস্যা দেখার দায়িত্ব সরাসরি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, “কোনও অভিযোগ এলে তার জন্য জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকেই জবাব দিতে হবে”।
এফিন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে জানান, “যত দ্রুত সম্ভব দুর্গত এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে ত্রান শিবিরে নিয়ে আসুন। যতদিন পর্যন্ত না তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন ততদিন রাজ্য সরকার এদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করবে”।
দুর্গত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভাব অভিযোগ শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। এলাকাবাসীরা উদ্ধার কাজ নিয়ে ক্ষোভ জানান। প্রয়োজনীয় পানীয় জল, ত্রাণ নিয়েও তাঁরা অভিযোগ জানান। সেই সঙ্গে নতুন করে এলাকা প্লাবিত হওয়ার বিষয়টিও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনেন। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে জানান, “দ্রুত পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন”।
এর পাশাপাশি দুর্গত মানুষদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আশ্বস্ত করে জানান, “যার যার বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা দ্রুত তৈরি করে জেলা শাসক আমাকে দেবেন। যাদের চাষের ক্ষতি হয়েছে তাঁরা কোনও চিন্তা করবেন না। রাজ্য সরকার আপনাদের সমস্ত রকম ক্ষতিপূরণ করবে”।
একই সাথে এদিনও বন্যা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, “আজ যে জায়গায় জল ঢুকেছে সেগুলি সকালেও শুকনো ছিল। এত করে বলার পরেও জল ছাড়া বন্ধ করছে না ডিভিসি”।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ জানিয়ে বলেন, “পাঁশকুড়ার পাশাপাশি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা প্রভৃতি এলাকার বহু জায়গা আজ নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন”।