ইন্দ্রজিৎ আইচ :- ঐতিহ্য, আধুনিকতা, পরম্পরা। উত্তর কলকাতার বিখ্যাত বনেদি বাড়ি হরকুঠির রায় বন্দোপাধ্যায় এর বাড়ির পুজো ৩৩২ বছরে পদার্পণ করলো।সেই উপলক্ষে
দুর্গা পুজো মায়ের চক্ষুদান পর্ব এবং নানা ধরনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো সম্প্রতি।
বনেদি বাড়ির পুজো মানেই সাবেকিআনা সেই সঙ্গে পুরোনো রীতি নীতি এবং অতীতের ঐতিহ্য বজায় রেখে মাতৃ আরাধনা। উত্তর কলকাতার
পাথুরিয়াঘাটা র হরকুঠির রায় বন্দোপাধ্যায় এর বাড়ীর পুজো মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। এই বাড়ির দালানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বাড়ির
১২ তম প্রজন্ম র উত্তরাধিকারী
অর্চিষ্মান রায় বন্দোপাধ্যায় বলেন আমাদের এই বাড়ি উত্তর কলকাতার এক সেরা ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এই বাড়িতে এক সময় এসেছেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, বামাক্ষেপা, তৈলঙ্গস্বামী থেকে বহু বিখ্যাত মানুষ। আমাদের ৩৩২ বছরের এই বাড়ির পুজোর মায়ের চক্ষু দান করলেন কৃষ্ণ নগরের প্রতিমা শিল্পী তাপস পাল। এই চক্ষুদান পর্বের পাশাপাশি ছিলো নানা ধরনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। ছিলো অহেঞ্জিতা ঘোষ এর ছোটো ছবি আমন্ত্রণ এর ছবি লঞ্চ, ফটোগ্রাফার রাজীব দে র সাদা কালো নানা ছবির প্রদর্শনী ও বনেদি বাড়ির আড্ডা। এই আড্ডায় যোগ দিয়ে ছিলো কলকাতার ১৪ টি বনেদি বাড়ির পুজোর কর্মকর্তারা। এই আড্ডায় ছিলেন ডাক্তার পার্থসারথি মুখার্জী। অন্যান্য দিন উপস্থিত ছিলেন সন্তুর বাদক পন্ডিত তরুণ ভট্টাচার্য এবং রবীন্দ্রতীর্থ র প্রাক্তন সচিব অনুপ মতিলাল। এই হরকুঠির রায় বন্দোপাধ্যায় এর পুজোকে স্বারক দিয়ে সন্মানিত করে বঙ্গচর্চা শারদ সন্মানের পক্ষ থেকে মহসম টেগোর।
উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার দেব লাহিড়ী ও এই সমগ্র অনুষ্ঠানের আয়োজক সুনেত্রা বোস। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অনুব্রত বন্দোপাধ্যায়। আসলে
পাথুরিয়াঘাটার রায়- ব্যানার্জি বাড়ির পুজোর একটা ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস এই বাংলার অনেক মানুষের অজানা।
দেবাদিদেব মহাদেবের নামে বাড়ির নাম রাখা হয় হর কুটির। এই বাড়ির নামকরণ করেন হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার রায় ব্যানার্জি বাড়ির দুর্গা পুজো শুরু করেন তিনিই, রবীন্দ্র সরণীর পাশেই চারদিক ঘেরা বাড়ির ঠাকুরদালানেই এই মাতৃ আরাধনা অনুষ্ঠিত হয়। এবার এই পুজোকে কেন্দ্র করে পরিবারের সব সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন ইতি মধ্যেই আসতে শুরু করেছেন। এবছর থেকে পুজোতে শুরু হয়েছে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিদিন থাকছে আগমনী গান সহ আগমনীর আড্ডা, পাশাপাশি শাস্ত্রীয় কন্ঠ ও যন্ত্র সংগীত, ভজন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের নিয়ে এ বারি প্রথম আয়োজন করা হয় সাদা কালো আলোকচিত্রের প্রতিযোগিতা। পুরস্কার পেয়েছে এমন ছবি ছাড়াও বাছাই ভালো ছবিগুলি নিয়ে রয়েছে সাধারণের জন্যে প্রদর্শনী।বাংলার দূর্গা পুজো নিয়ে গবেষকদের আলোচনা ও ধুনুচি নাচসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান এই হরকুঠির রায় বন্দোপাধ্যায় বাড়ীর পুজোর দিন গুলোয় অভিনব ভাবে আয়োজিত হবে। নতুন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবারের তরুণ প্রজন্মরা আয়োজন করেছেন ফুড, আর্ট, মিউজিক এন্ড লাইফ স্টাইল এক্সিবিসন।সব মিলিয়ে দশ দিনের পুজো হল উত্তর কলকাতার হরকুঠির রায় বন্দোপাধ্যায় বাড়ির শারদোৎসবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
অগুণিত মানুষ দেশ বিদেশ থেকে এই ঐতিহ্যবাহি পুজো দেখতে আসেন।