Select Language

[gtranslate]
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দ্বিধান্বিত

দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য:-ডোর বেলের আওয়াজ শুনেই,অদ্রিজা মেয়ে সৌমিকে বলে দেখতো,কে আবার রবিবার দিন,এই সাত সকালে এলো।সৌমি লাফাতে লাফাতে গিয়ে দরজা খুলেই, চেঁচিয়ে বলে উঠলো,মা ,অনি কাকু এসেছে।
অদ্রিজা, গজগজ করে বলে উঠলো, এই এক মানুষ হয়েছে, কোনদিন সময় জ্ঞান হলো না, অবশ্য সময় জ্ঞান কেন, কোন কিছুই বুঝে, উঠতে পারলো না,আর পারবে বলে মনেও হয় না।
অদ্রিজা ড্রয়িংরুমে পৌঁছোতেই দেখে,মেয়ে, সেখানে তার অনি কাকুর সাথে আগডুবাগড়ডুম গল্প শুরু করে দিয়েছে। অদ্রিজাকে দেখেই,অনি গোলাপের তোড়া তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,হ্যাপি বার্থডে, অদ্রিজা। সংসারের চাপে অদ্রিজা দিনটার কথা ভুলতেই বসেছিলো।সৌমি বলে উঠলো মা,অনি কাকু আমাকে কতো বড় চকলেট দিয়েছে দেখো, বলে হাতে ধরা বড় এক প্যাকেট চকলেট দেখায়।
সত্যি বলতে অনিকে দেখলে, অদ্রিজার আজকাল প্রচন্ড রাগ হয়। লোকটা আজ অবধি মুখ ফুটে কোনদিন নিজের মনের কথা বলে উঠতে পারলো না।একই পাড়ায় দুজনে একসাথে বড়ো হয়েছে। কলেজে পড়ার সময় থেকেই পাড়ার এমনকি দুই বাড়ির সবাই, জেনে গেছিলো,অনির,অদ্রিজার উপর দূর্বলতা আছে।অনি, চাকরি পাওয়ার কিছু দিন পর, সম্পর্কটিকে পাকা করার জন্য অনির দুই দিদি ওদের নিয়ে বাড়ির কিছু দূরেই গঙ্গার পাশেই এক পার্কে নিয়ে যায়।ছুতো করে ওদের পার্কে একাকী ছেড়ে দিয়ে দুই দিদি, পার্কের পাশেই এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে। কিন্তু কথাই আছে “যার ছয়ে হয় না তার ছিয়াত্তরে হয় না”।অনি সেই গোত্রের মানুষ।


অনেকক্ষণ দুজনে একাকী পার্কে একসাথে ঘোরে, অনেক কথা হয়, অদ্রিজা অনেক ভাবে হাভেভাবে তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের কথা বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু অনির মুখ থেকে তার সেই পরম প্রত্যশার কথা শুনতে পায় না। শেষমেষ হতাশ হয়ে, অদ্রিজা অনির দিদিদের কাছে ফিরে আসে।দিদিরা সব বুঝতে পারেন। কিন্তু তারা নিরুপায়, তারা খুব ভালো করেই তাদের ভাইটিকে চেনে, সে নিজের মনের কথা কাউকে কিছুতেই বলবে না। যদিও এর জন্য তারা সম্পূর্ণ ভাবে তার ভাইকে দোষ দিতে পারে না। ছোট বেলা থেকেই তারা দেখে এসেছে বাড়িতে বাবার কথাই শেষ কথা, অনির অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ইন্জিনিয়ারিং পড়তে হয়, সত্যি কথা বলতে বাবার জন্যই অনি খোলামেলা হতে পারে না।
যাইহোক এইভাবে বেশ কিছু বছর চলে যায়। এরইমধ্যে কিছুদিনের জন্য চাকরি সূত্রে অনিকে কিছু সময় বাইরে থাকতে হয়। এমনিতেই অদ্রিজা কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না, এরপর অনি কিছু দিন চোখের আড়াল হতে ও আরও অস্থির হয়ে উঠে।
অদ্রিজা কিছুদিন অপেক্ষাও করে,এরপর তার বাবার পরিচিত এক বন্ধুর ছেলে সৌভিকের সাথে দেখাশুনা করে অদ্রিজার বিয়ে হয়ে যায়।
ইতিমধ্যে সৌভিক বাজার থেকে চলে এসেছে, অনিককে দেখেই বলে জানতাম আজকে আপনি আসবেন,দেখো অদ্রিজা ভালো ইলিশ পেয়েছি নিয়ে এলাম, অনি বাবু, আজ , কোন কিন্তু শুনবো না,আজ আপনাকে আমাদের সাথে দুপুরের খাওয়া খেয়ে যেতে হবে,কি অদ্রিজা ঠিক তো, বলে অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। অদ্রিজা এই অবস্থায় কি বলবে?অনি, প্রথমটা না না করে শেষে রাজি হয়ে যায়।
বিকেলে,অনির চলে যাওয়া, ব্যালকোনি থেকে দেখতে দেখতে অদ্রিজার চোখ ছলছল করে উঠে, মানুষটা একটা কথা একটু মুখ ফুটে বলতে পারলো না, এদিকে নিজে বিয়েও করলো না।
কখন এসে, সৌভিক অদ্রিজার পাশে এসে দাঁড়ায়, বলে, অনিবাবুর উপর রাগ করো না, এরকম কিছু মানুষ আছে ,জানো,যারা মনের কথা মনের ভেতরেই চেপে রেখে কষ্ট পাবে , তবুও সেই কথা কাউকে বলবে না, তোমার অনিবাবুও সেই রকম একটা মানুষ।

সৌজন্যে – প্রতিলিপি

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read