তমলুক মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ সোয়াদিঘী নিকাশী খাল অবশেষে নভেম্বরের শেষ থেকে সংস্কারের কাজে হাত দিতে চলেছে সেচ দপ্তর। আজ এ বিষয়ে জেলা শাসক দপ্তরের মিটিং হলে সেচ দপ্তর, ঠিকাদার সংস্থা সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাঝি, সেচ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত সরকার,এসডিও (পাঁশকুড়া-এক ও তমলুক), মহকুমা শাসক(তমলুক),সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও প্রমূখেরা। ইতিমধ্যে গত ২৩ অক্টোবর সেচ দপ্তরের তমলুক সাব্ ডিভিশনের এস ডি ও সৈনাভ সিনহা এক নির্দেশিকা মারফত নভেম্বর মাস থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন। এ জন্য খালের উৎস ও নদী মুখের কাছে আড়াআড়িভাবে দুটি ক্রস বাঁধ দেওয়া হবে। এজন্য খালের জলকে নির্ভর করে যে সমস্ত কৃষকরা বোরো মরশুমের চাষ করে থাকেন,তাদের বোরো চাষ বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। খাল সংস্কার করবে খনিজ দপ্তরের একটি সংস্থা ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল(W B M D T C L) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নেওয়া এক এজেন্সি ‘পালিত ব্রিক ফিল্ড’। যারা মূলতঃ খাল সংস্কারের পর মাটি ও বালি বিক্রি করেই খাল সংস্কার করবে। শুধু তাই নয়,এজেন্সি রয়্যালিটি বাবদ কিছু টাকাও দেবে সরকারকে। তবে সেচ দপ্তরের নজরদারিতেই খাল সংস্কারের কাজ হবে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। জলবন্দী এলাকার জলনিকাশীর পর আগামী ২০ নভেম্বর জেলা শাসক খাল পরিদর্শন করার পর কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পায়রাটুঙী খালটি ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই টেন্ডার প্রক্রিয়া করে কাজ শুরু করবে। আজকের প্রশাসনিক সভায় তমলুক মহকুমার সোয়াদিঘী,গঙ্গাখালি,পায়রাটুঙী,দেনান,দেহাটী,কামিনা,জয়গোপাল, জঁফুলি সহ মোট ১৩ টি খাল আগামী বর্ষার পূর্বেই সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই খাল সংস্কারের দাবীতে দলমত নির্বিশেষে গড়ে ওঠা আন্দোলনকারীদের সংগঠন “সোয়াদিঘী খাল সংস্কার সমিতি” ও “পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি”র পক্ষে মধুসূদন বেরা ও নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন,২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সোয়াদিঘী খালটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় চলতি বর্ষায় তমলুক মহকুমার কোলাঘাট,পাঁশকুড়া,শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের প্রায় শতাধিক মৌজা দু মাসের বেশী সময় ধরে জলবন্দী হয়ে রয়েছে। কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে পাঁশকুড়ার বন্যার জল এই খাল দিয়েই রূপনারায়ণে বের হচ্ছে। ওই এলাকার অনেক গ্রামের রাস্তাগুলি আজো জলের তলায়। দীর্ঘদিন ওই জল জমে থাকায় আগাছা পচে ওই জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,জলবন্দী এলাকার জল বের করার দাবিতে উপরোক্ত সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে ৩ অক্টোবর জেলা সেচ ও প্রশাসনিক দপ্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর ৭ ই অক্টোবর জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি খালের নোনাকুড়ি থেকে রামতারক পর্যন্ত অংশটি পরিদর্শন করেন। তারপর সেচ দপ্তর ওই অংশে জেসিবি মেশিন নামিয়ে নিকাশীতে বাধা সৃষ্টিকারী অংশগুলিতে জমে থাকা মাটি ও আবর্জনা তুলে পরিষ্কার করে। এরপর গত ১৪ অক্টোবর জেলা শাসক দপ্তরে ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পর্যালোচনা মিটিং হয়। ওই মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন ১৫ অক্টোঃ অতিরিক্ত জেলা শাসক(উন্নয়ন)নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় সমগ্র খালটি কোথাও নৌকা,কোথাও পায়ে হেঁটে বা কোথাও টোটোতে চেপে পরিদর্শন করেন। অন্যদিকে ২৭ অক্টোবর সোয়াদিঘী লকগেটের গিয়ার ও ফ্ল্যাপ সাটার বৈদ্যুতিকরণের বিষয়ে সেচ দপ্তরের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ইঞ্জিনিয়াররাও লকগেট পরিদর্শন করে গিয়েছে।
নারায়ণবাবু ও মধুসূদনবাবু এক বিবৃতিতে বলেন, জনসাধারণের দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সেচ দপ্তর গুরুত্বপূর্ণ সোয়াদিঘী খালটি সংস্কারে হাত দিতে চলেছেন। এজন্য ভুক্তভোগী জনসাধারণকে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন। আমরা চাই, দপ্তরের সিডিউল অনুসারে এজেন্সি আগামী বর্ষার পূর্বেই খালটি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার করুক।