হলদিয়া থেকে পেট্রপণ্য ও ভোজ্যতেল বোঝাই করে ভিন রাজ্যে যাওয়ার পথে ফের পর দু’টি ট্রাক মাঝরাস্তায় উধাও হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। হলদিয়ার দুর্গাচক ও ভবানীপুর থানায় দু’টি আলাদা অভিযোগ দায়ের করেছে ট্রান্সপোর্ট সংস্থাগুলি। পেট্রপণ্য নিয়ে একটি ট্রাক যাচ্ছিল আসামের গৌহাটিতে এবং অন্যটি মহারাষ্ট্রের পুনে। দু’টি ট্রাকে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি পণ্য বোঝাই ছিল। গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক ভোজ্য তেলের ট্রাক উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এবার সেই তালিকায় নতুন করে পেট রেজিনের মতো পেট্রপণ্য যুক্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিল্পমহল। একসময় হলদিয়া পেট্রকেম থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক ভিন রাজ্যে যাওয়ার সময় মাঝপথে দামি প্লাস্টিক দানা উধাও হয়ে যেত। সেই ঘটনা বন্ধ হয়ে গেলেও বেড়েছে ভোজ্য তেলের ট্রাক হাইজ্যাকিং। ফের পেট্রপণ্য বোঝাই ট্রাক উধাও হওয়ার ঘটনায় নতুন চক্র সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছে পুলিস। ট্রাক হাইজ্যাকিংয়ের তদন্ত করতে গিয়ে হলদিয়ার পুলিস প্রশাসনের কার্যত নাজেহাল অবস্থা। শিল্প সংস্থাগুলির অভিযোগ, পুলিস সিংহভাগ হাইজ্যাকিংয়ের ঘটনার কিনারা করতে পারেনি। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়ার ইন্দোরামা ধানসিরি পেট্রকেম(আইভিএল ধানসিরি) থেকে ৩৫ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার পেট রেজিন বোঝাই একটি ট্রাক গৌহাটি যাওয়ার পথে মাঝরাস্তায় উধাও হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেছে একটি ট্রান্সপোর্ট সংস্থা। ওই ট্রাকে প্রায় ৩৫ টন পেট রেজিন জ্যাম্বো ব্যাগে বোঝাই ছিল। গত ২০ অক্টোবর হলদিয়ার আইভিএল কারখানায় লোডিং হয়েছিল। ওই পণ্য পাঠানো হচ্ছিল গৌহাটির বরুণ ব্রেভারিজের কাছে। ওই ট্রান্সপোর্ট সংস্থা জানিয়েছে, হাওড়ার ধুলাগড়ের কাছে পৌঁছে ২২ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ট্রাক ড্রাইভার বার বার ফোন করতে থাকে। পরে ডানকুনির কাছে পৌঁছে সে জানায় গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে।
২৫ অক্টোবর রাত ৩টে নাগাদ ফোন করে ড্রাইভার জানায় ট্রাক সারানো হয়ে গিয়েছে। ওই সময় ট্রাক ডানকুনি টোল প্লাজা পার হচ্ছিল। ট্রান্সপোর্ট সংস্থার সন্দেহ হওয়ায় তারা টোল প্লাজায় তাদের প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে বলে জানিয়ে ট্রাক ড্রাইভারকে অপেক্ষা করতে বলে। অভিযোগ, তারপরই ওই ট্রাক ড্রাইভার ও ট্রাকের মালিক সকলেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এরপর পুলিসের দ্বারস্থ হয়েছে ট্রান্সপোর্ট সংস্থা। এদিকে, ভবানীপুর থানা এলাকার ভোজ্য তেল সংস্থা ইমামি এগ্রোটেক থেকে পণ্য নিয়ে পুনে যাওয়ার পথে ট্রাক উধাও হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ট্রান্সপোর্ট সংস্থা এবং শিল্প সংস্থাও। পুলিস জানিয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোজ্য তেল বোঝাই একটি ট্রাক হলদিয়া থেকে পুনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। এক্সপ্রেস রোড ওয়েজ নামে দিল্লির একটি ট্রান্সপোর্ট সংস্থা ওই দায়িত্বে ছিল। ওই সংস্থাটি হাওড়ার সন্ধ্যা লজিস্টিকস নামে একটি সংস্থার কাছ থেকে ট্রাক ভাড়ায় নিয়েছিল। ১৩ দিন পরও ট্রাক গন্তব্যে না পৌঁছনোয় সন্দেহ হয় এক্সপ্রেস রোডওয়েজ সংস্থার। এক মাসের বেশি সময় ধরে খোঁজ খবরের পর শেষে তারা ভবানীপুর থানার পুলিসের দ্বারস্থ হয়েছে। অভিযোগ, হাওড়ার যে ব্রোকাররা ট্রাক সরবরাহ করেছিল তাদের ড্রাইভার ও ট্রাক ওনারের হদিস মেলেনি। তদন্তকারী পুলিস আধিকারিকরা জানিয়েছেন, হলদিয়া ও হাওড়ায় ট্রাক সরবরাহকারী একটি দালাল চক্র দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। ট্রাকের নম্বর প্লেট পাল্টে তারা ট্রাক ছিনতাই ও পণ্য উধাও করে দিচ্ছে।