Select Language

[gtranslate]
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঘানন্দ

বাঘা নামে একটি নেড়ি কুকুর মঠে থাকত। স্বামী বিবেকানন্দ খুব ভালোবাসতেন কুকুরটিকে। স্বামীজীর ঘরের বাইরে পাপোশে ঘুমাতো। ব্রহ্মচারী অভয়কে দিয়ে স্বামীজী প্রতিদিন বাজার থেকে দুধ, মাছের ছাঁট আনাতেন। নিজে রান্না করে খাওয়াতেন। নির্দেশ ছিল কেউ যেন কুকুরটাকে মাংস না খাওয়ায়। মাংস খেলে হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। স্বামীজী মঠ থেকে বাইরে গেলে কুকুরটি উন্মাদের মত আচরণ করত। যাকে দেখত তেড়ে কামড়াতে আসত। একবার স্বামীজী মাস তিনেকের জন্য মঠে নেই। বাঘার উৎপাত বেড়ে গেল। শেষে একদিন ঠাকুরের ভোগে মুখ দিয়ে ফেলায় মঠের সন্ন্যাসীরা তাকে নির্বাসন দিলেন। স্বামীজী কয়েকদিন পর মঠে ফিরে শুনলেন সবাই মিলে বাঘাকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার ওপারে দক্ষিণেশ্বরে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। এদিকে মঠ বাঘাকে ছাড়লেও বাঘা কিন্তু মঠকে ছাড়বার পাত্র নয়। সে তক্কে তক্কে থাকে। সাধুরা তাকে গঙ্গা পার করে দিয়ে ফিরে গেলে বাঘাও কিছুদিন বাদে একটি ফিরতি নৌকায় উঠে বসল। মাঝিরা তাকে নামাতে গেলে সে দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসে। অবশেষে নৌকার অন্য যাত্রীরা মাঝিদেরকে বলল, ”কুকুরটা যখন কোনও ক্ষতি করছেনা, চুপ করেই বসে আছে, তখন নিয়েই চল ওকে।” বাঘা এভাবে ফিরে এসে সারারাত বেলুড় মঠের আশেপাশেই লুকিয়ে রইল। বাঘা জানত স্বামীজী ভোর হবার আগেই স্নানঘরে আসেন। বাঘা সেখানে লুকিয়ে স্বামীজীর জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। স্বামীজী এলে বাঘা তাঁর পায়ে মুখ ঘষতে ঘষতে কুঁই কুঁই করে কাঁদতে লাগল। স্বামীজী বাঘাকে নিয়ে বেরিয়ে এসে মঠের সকলকে ডেকে বললেন, ”বাঘাকে আর এভাবে যেন কেউ তাড়িয়ে না দেয়। ও চিরদিন মঠেই থাকবে।”
তখন বাঘার আনন্দ দেখে কে! লেজ নাড়তে নাড়তে গর্বের সঙ্গে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাঘা ভৌ ভৌ করে আনন্দ করতে লাগল।
বাঘার মাথায় হাত বুলিয়ে স্বামীজী বললেন, “আমি না থাকলে অমন পাগলামি করিস কেন তুই? আমি কি আর চিরকাল থাকব?”
স্বামীজীর শিষ্য সদানন্দজী মহারাজ মস্করা করে একদিন বললেন, “ওকেও দীক্ষা দিয়ে সাধু বানান মহারাজ। নাম দিন বাঘানন্দ।”
স্বামীজী বললেন, “ওরে ধর্ম কুকুরের বেশে যুধিষ্ঠিরকে পথ দেখিয়েছিলেন জানিস। বাঘাও হয়ত সেরকম কেউ। আমার কি সাধ্যি আছে ওকে দীক্ষা দেওয়ার।”

স্বামীজীর মৃত্যুর পর বাঘা তিন দিন কিছু খায়নি। করুণ মুখে স্বামীজীর ঘরের পাপোশটির উপর শুয়ে থাকত। বছর খানেক পর বাঘার মৃত্যু হয়। মঠের সাধুরা সকালে স্বামীজীর ঘর পরিষ্কার করতে এসে দেখেন ঘরের চৌকাঠ আগলে বাঘা মরে পড়ে আছে। বাঘার মৃতদেহটাকে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হল। সেদিন সন্ধ্যায় দেখা গেল ভাঁটার টানে বাঘার নশ্বর দেহটি আবার মঠভূমিতে ফিরে এসেছে। তখন বাঘার দেহ সসম্মানে মঠের জমিতেই সমাহিত করা হয়েছিল। স্বামীজীকে যেখানে দাহ করা হয় তার অনতিদূরেই বাঘার সমাধিবেদী।

সৌজন্যে – শ্রীরামকৃষ্ণায়তে নমঃ

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read