পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলের কাজ সুষ্ঠ ভাবে চালাতে রাজ্যের শাসক দল তৃনমূল একে তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ ক্রেছে। সেই দুই সাংগঠনিক জেলাত সাংগঠনিক পদাধিকারীদের রদবদলের পাশাপাশি ব্লক ও পুরসভা এলাকায় দলের পদাধিকারীদেরও রদবদল হতে চলেছে বলে তৃনমূলের বিভিন্ন মহলের দাবি।
জানা গেছে আসন্ন বিধানসভা ভোটকে লক্ষ্য রেখে পূর্ব মেদিনীপুরে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্লক ও জেলা স্তরে পদাধিকারী রদবদলের জন্য তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব পদক্ষেপ শুরু করেছেন। দলীয় সূত্রের খবর, তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাংগঠনিক পদাধিকারীদের রদবদলের পাশাপাশি ব্লক ও পুরসভা এলাকায় দলের পদাধিকারীদেরও রদবদল হবে। এর পরে দুই সাংগঠনিক জেলায় ব্লক স্তরে সাংগঠনিক সভা হবে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ব্লক ও পুরসভা এলাকায় সাংগঠনিক সভায় দলের কমিটিতে রদবদল হবে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে বর্তমানে জেলা ও ব্লক কমিটির সদস্য-পদাধিকারী হিসেবে থাকা নেতাদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, খারাপ ভাবমূর্তিযুক্ত, বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা ‘গদ্দার’ নেতাদের সম্পর্কে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
তবে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতির পদে বিকাশ চন্দ্র বেজের নামে গুঞ্জন শুরু হয়েছে খোদ তৃণমূলের অন্দরমহলে। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই বিকাশ চন্দ্র বেজকে জেলার সাংগঠনিক সভাপতি হিসেবেই দেখতে চান। তাই বিকাশবাবুর নামটা জেলা সভাপতি হিসেবে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বর্তমান জেলা আইএনটিটিইউসি’র সভাপতি ও কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বেজ জানিয়েছেন, দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে তা গুরুত্ব সহকারে পালন করবো। কিন্তু আমি একজন দলের একনিষ্ঠ কর্মী। আমরা বামফ্রন্ট আমল থেকেই সক্রিয়ভাবে তৃণমূল করে আসছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেতা। আমরা তো সামান্য কর্মী মাত্র। পদ নিয়ে কি যায় আসে। আমরা ২৪ ঘন্টাই মানুষের কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।
প্রসঙ্গত,
পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদে রদবদল হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে। তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ থেকে বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্রকে সরিয়ে নয়া সভাপতি করা হয়েছিল অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চেয়ারম্যান পদে আনা হয় চিত্তরঞ্জন মাইতিকে। একই ভাবে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে এগরার বিধায়ক তরুণ মাইতিকে সরিয়ে আনা হয়েছিল পীযূষকান্তি পণ্ডাকে, আর জেলা চেয়ারম্যান করা হয়েছিল তরুণ মাইতিকে। তবে দুই সাংগঠনিক জেলায় নতুন করে জেলা কমিটি বা ব্লক কমিটি গঠন করা হয়নি। জেলা ও ব্লক কমিটির সদস্য-সহ বিভিন্ন পদে গত প্রায় তিন বছর তেমন বদলও ঘটেনি।
দলীয় সূত্রের খবর, চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের জয় হলেও তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল বিজেপির কাছে হেরেছে। ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে জেলার ১৬ টি বিধানসভার মধ্যে ১৫ টিতে এগিয়ে বিজেপি। এই হারের কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি দলের একাংশ নেতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দলীয় সূত্রের খবর, পরামর্শদাতা সংস্থা ও দলের আন্দরের রিপোর্টের ভিত্তিতে নিস্ক্রিয় ও ভাবমূর্তি খারাপ থাকা নেতৃত্বদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। দলীয় সূত্রের খবর, হলদিয়া পুরসভা, তমলুক পুরসভা, শহিদ মাতঙ্গিনী, নন্দীগ্রাম-২, নন্দকুমার, হলদিয়া, সুতাহাটা, এগরা ১ এবং ২ ব্লক-সহ জেলার যে সব ব্লক ও পুরসভা এলাকায় দলের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল, সেখানে নতুন কমিটি গঠনে বিশেষ ভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রের খবর, আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ-খুন- কাণ্ডে রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ও সাধারণ মানুষ পথে নামার প্রভাব নিয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।