কেকা মিত্র :- বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার এসে পড়লো চলচ্চিত্র উৎসব। আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। শীতের আমেজে উৎসব মুখরিত কলকাতা। সারা বছর চলচ্চিত্র প্রেমীরা ভিড় জমায় নন্দন রবীন্দ্র সদন চত্বরে।আগামী ৪ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত হবে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।এই উৎসবের উদ্বোধন হবে এবার আলিপুর ধনধান্যে প্রেক্ষাগৃহে।’গল্প হলেও সত্যি’ ছবির প্রদর্শনী দিয়ে শুরু হবে এ বারের এই উৎসব। গত শুক্রবার রবীন্দ্র সদনে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন এই বছর ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতা বিভাগে মোট ২,৪৫৯টি ছবির মনোনয়ন জমা পড়েছিলো। প্রতিযোগিতায় মনোনীত হয়েছে ৪২টি পূর্ণ দৈর্ঘের ফিচার ছবি, ৩০টি স্বল্প দৈর্ঘের ছবি ও তথ্যচিত্র। এ ছাড়াও ১০৩টি ছবি দেখানো হবে, যা কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি।এবার ২৯টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এ বারের ফোকাস দেশ ফ্রান্স। রাজ্যের বিদ্যুত মন্ত্রী এবং উৎসব উপদেষ্টা অরূপ বিশ্বাস জানালেন ‘কিফ’-এ বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে কুমার সাহানি, অ্যালায়েন ডেলন, অনুপকুমার মুখোপাধ্যায়, গৌতম হালদার, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী ও মনোজ মিত্রকে। শুক্রবার রবীন্দ্র সদনে সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, ফেস্টিভ্যালের চেয়ারম্যান ও পরিচালক গৌতম ঘোষ, মন্ত্রী বিরবাহা হাসদা, রাজ্যের তথ্য সচিব শান্তনু বসু, ফ্রান্সের রাষ্ট্র দূত নিকোলা ফাশিনো, অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী।
অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী বলেন
১৭৫ ছবি নিয়ে এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
প্রায় আড়াই হাজার সিনেমার আবেদন এসেছিল। তার ভেতর থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ১৭৫টি সিনেমা। ২৯টি দেশের।
এবারের থিম সঙ্গীত রচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গানটি হলো
‘রুপালি পর্দা দেখো ভানুমতির খেল/খুশির পসরা নিয়ে আসছে তুফান মেল।/ এই গান টি গেয়েছেন নচিকেতা চক্রবর্তী।
এবারের উৎসবের মূল স্লোগান ‘বাংলার জানলায় বিশ্বের ছবি’। উৎসবের। ‘মাস্টার ক্রিয়েটিভ কার্ড’-এ অপু আর দুর্গার রেল দেখতে ছুটে চলার ছবি। অন্য ‘ক্রিয়েটিভ’ বোর্ডগুলিতেও ‘সপ্তপদী’, ‘নায়ক’, ‘কাবুলিওয়ালা’র মতো ‘কাল্ট’ হয়ে যাওয়া বাংলা ছবির নানা মুহূর্ত। রবীন্দ্র সদনে এইদিন অনুষ্ঠানে -সূচি, থিম গান-সহ এগুলিরও উদ্বোধন হল।এছাড়া
আসন্ন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের লোগো উদ্বোধন হল। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা বিভাগগুলির পুরস্কার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ট্রফির আবরণও উন্মোচন হল।
সাংবাদিক সম্মেলনে চলচ্চিত্র উৎসবের সভাপতি গৌতম ঘোষ বলেন নতুন ছবি ‘পরিক্রমা’র এশিয়ান প্রিমিয়ারও হবে এই উৎসবেই।
উৎসবের উদ্বোধন হবে আগামী ৪ ডিসেম্বর বুধবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে, বিকেল চারটেয়।থাকবেন রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সহ টলিউড ও বলিউড এবং হলিউড এর নানা পরিচালক থেকে অভিনেতা এবং অভিনেত্রীরা। উদ্বোধনী ছবি এবার থাকছে তপন সিংহের ‘গল্প হলেও সত্যি’। এ বছর তপন সিংহের : জন্মশতবর্ষ। সেই উপলক্ষে উৎসবে থাকছে সিনেমার একটি বিশেষ বিভাগ, একটি আলোচনা এবং প্রদর্শনী। উৎসবে একই ভাবে পালন করা হবে অরুন্ধতী দেবী, হরিসাধন দাশগুপ্ত, মালন ব্র্যান্ডো এবং মার্শেদ্রো মাত্মোইয়ানির জন্মশতবর্ষও। থাকছে এঁদের ছবির প্রদর্শন এবং এঁদের জীবন ও কাজ ঘিরে প্রদর্শনী। স্পেশ্যাল ট্রিবিউট থাকছে সদ্য-প্রয়াত কুমার সাহানি, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, গৌতম হালদার, অনুপ মুখোপাধ্যায় ও মনোজ মিত্রের কাজ নিয়ে। এর মধ্যে উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর ‘চোখ’ ছবিটি দেখানো হবে রাধা স্টুডিওতে ৩৫ মিলিমিটারের মূল ফর্ম্যাটে। বিরবাহা হাসদা বলেন
মোট ১৯টি প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে উৎসবের সিনেমা। তার মধ্যে মূল উৎসব-চত্বরের নন্দন ১, ২, ৩ এবং শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সদন যেমন আছে, তেমনই থাকছে নজরুলতীর্থ ১৩২, নবীনা, নিউ এম্পায়ার, রাখা স্টুডিও, অজন্তা, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, মেনকা, স্টার, কোয়েস্ট মল, সাউথ সিটি, মেট্রো, মনি স্কোয়্যার ও গ্লোব সিনেমা।।এবার প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ থাকছে ছটি। ১০টি ছবি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগ, ১২টি ছবি নিয়ে ভারতীয় বিভাগ, ৭টি ছবির বাংলা প্যানোরামা। এ ছাড়াও থাকছে ১০টি ছবির তথ্যচিত্র বিভাগ ও ২০টি ছবির ছোট ছবির বিভাগ। এই সব কাটি বিভাগের সেরা ছবি পাবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ট্রফি এবং অর্থমূল্য। এদিন মঞ্চে এই ট্রফির আবরণ উন্মোচন হয়। এ ছাড়া নেটপ্যাক পুরস্কারের জন্য লড়াই হবে ১টি এশীয় ছবির মধ্যে। ১১ ডিসেম্বর সব বিভাগের সেরা ছবিদের নাম ঘোষণা করা হবে রবীন্দ্র সদন মঞ্চ থেকে উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে। ওই দিন হাজির থাকবেন তপন সিংহের সিনেমার জীবিত শিল্পী
ও কলাকুশলীরা। এবারের উৎসবের ‘ফোকাস’ দেশ হল ফ্রান্স। সেখানকার গ্রুপদী ও সাম্প্রতিক মিলিয়ে মোট ২১টি ছবি দেখানো হবে। এর মধ্যে বিশেষ জোর থাকছে নারী পরিচালকদের ছবি ও পরিবেশ-সংক্রান্ত সিনেমার ওপর। প্রতিদিন সন্ধেয় একতারা মঞ্চে বসবে সিনেমার নানা বিষয়ের ওপর আড্ডা। এ ছাড়াও থাকছে নানা সেমিনার। তার ভেতর থাকছে ‘সিনেমার প্রযুক্তি কি সিনেমার ধারণায় বদল আনছে’ বা ‘এ দেশে জাতীয় সিনেমা কোল্টা’-র মতো চায়ের কাপে তুফান-তোলা বিষয়। সদ্য- প্রয়াত পরিচালক গৌতম হালদারের সঙ্গে কাজ করার স্মৃতিচারণ করতে আসছেন বিদ্যা বালন। পরিচালক জবুর প্যাটেলের সাক্ষাৎকার নেবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতায় এবার বলবেন পরিচালক আর বালকি। থাকছে কুমার সাহানি আর তপন সিংহের সিনে-জগৎ নিয়ে দুটি আলোচনা। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে মেধার বাড়তি ছোঁয়া আনতেই ফিল্ম চর্চার এত বিস্তৃত আয়োজন, জানালেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব শান্তনু বসু। সব মিলিয়ে জমে উঠবে ৪ থেকে ১১ মোট ৮ দিনের ৩০ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ২০২৪।