ইন্দ্রজিৎ আইচ :- মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, মনিপাল হসপিটাল গ্রুপের একটি অংশ, ভারতীয় জাদুঘরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে একটি মেগা সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিয়েশন) ট্রেনিং প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয় ঐতিহাসিক ভারতীয় জাদুঘরের চাতালে। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হল একটি সিপিআর (CPR) কমিউনিটি তৈরি করার। এই সিপিআর (CPR) ট্রেনিং সেশন শুরু হয় সকাল এগারোটা থেকে, সুপারভাইস করেন ডঃ ইন্দ্রনীল দাস, ইমার্জেন্সী বিভাগ, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল এবং অ্যালুমনাস আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরশিপ লিডারশিপ প্রোগ্রাম ( আইভিএলপি)। এই সেশন গুলোয় আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভলেন্টিয়ার পেয়েছি যেমন সেন্ট জেভিয়ার্স হাই স্কুল, হাওড়া, ডগলাস মেমোরিয়াল স্কুল, সেন্ট সেবাস্তিয়ান স্কুল, অ্যানেক্স কলেজ, আদিত্য একাডেমি সিনিয়র সেকেন্ডারি, দমদম, আদিত্য একাডেমি সেকেন্ডারি, বারাসাত এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা – সাপগাছি হিউম্যানিটি ফর ইউ এন্ড মি (হাম)। এই ইভেন্টে মাননীয় অতিথি হিসেবে ছিলেন নাকাগাওয়া কৈচি, জাপানি কনসাল জেনারেল ।
ডঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার, মনিপাল হসপিটাল (পূর্ব), বলেন” ভারতের ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেক রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রায় ৪০০ মিনিট পর হসপিটাল এসে পৌঁছান, বিশেষ করে উপসর্গ দেখা যাওয়ার পর। বলাই বাহুল্য, এই সময়সীমা ৩০ মিনিটের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলেন যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ১৮ মিনিটের মধ্যে যদি কোন সাহায্য না পাওয়া যায়, তাহলে যেই ক্ষতি হয়েছে, তা নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই সিপিআর (CPR) ট্রেনিং খুব জরুরি যা দরকারী সাহায্য করতে পারে যতক্ষণ না স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট অফিস এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বছরভর সিপিআর (CPR) ট্রেনিং সেশন দিয়েছি এবং আমরা চালিয়ে যেতে চাই এই প্রক্রিয়া। আমরা চাই যে যাদের আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি, তারা যেন তাদের কাছের মানুষদের আবার ট্রেনিং দেয়। এভাবে আমাদের আশপাশে সিপিআর (CPR) স্মার্ট সিটিজেন তৈরি হবে। আজ আমরা খুবই খুশি যে ভারতীয় জাদুঘরের মত ঐতিহ্যশালী একটি জায়গায় সিপিআর (CPR) ট্রেনিং দিতে পেরেছি এবং তাদের কাছে অসম্ভব কৃতজ্ঞ তাদের সাহায্যের জন্য। আজ যেই রেসপন্স বা প্রতিক্রিয়া আমরা পেয়েছি, তাতে সত্যি অভিভূত এবং সামনের দিনে আরো এরকম একসাথে কাজ করার ইচ্ছে থাকবে।”
জীবন বাঁচানোর শিক্ষা নিয়ে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, মনিপাল হসপিটাল গ্রুপের অন্তর্গত, কলকাতায় ইতিমধ্যেই ২০০০ এর উপরের মানুষকে ট্রেনিং দিয়েছে। ভারতীয় জাদুঘরের অসাধারণ সুন্দর চাতালে, যেখানে ইতিহাস ও আশা রয়েছে একাধারে, দুর্দান্ত পটভূমি হিসেবে কাজ করেছে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এক লক্ষ্যে। ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই মুভমেন্টে যোগদান করেছেন, সবাইকে সি পি আর (CPR) রেডি করা হয়েছে এবং ইমার্জেন্সী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী, ডিরেক্টর, ভারতীয় জাদুঘর, বলেন,” এই পর্যাস আমাদের দীর্ঘদিনের ভাবনার ফল। মেডিকার সাথে যৌথ ভাবে এগিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের এখানে কর্মরত সকলকে সিপিআর (CPR) ট্রেনিং দিয়েছি। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হল স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রক্ষা ও সচেতনতার দিকটি তুলে ধরা। আমরা জানি যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে দেরি হলে স্বাস্থ্যের দিক থেকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সাহায্য হৃদরোগে আক্রান্ত বা অ্যাক্সিডেন্ট এর ক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। আজ, সব মিলিয়ে দশটি প্রতিষ্ঠান হাতে হাত মিলিয়ে এই ট্রেনিং প্রোগ্রাম করতে সাহায্য করেছে। তারা যোগদান করায় আমরা সত্যি আপ্লুত। যেহেতু ছাত্রছাত্রীরা আজ এই সিপিআর (CPR) ট্রেনিং পেয়েছে, তারা বাড়িতে কোন আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম। আমরা মেডিকার সাথে এই ক্ষেত্রে এক যোগে কাজ করতে পেরে খুবই খুশি। আমরা আশা রাখছি যে সামনের দিনে এরকম আরও অনেক প্রোগ্রাম করতে পারব।”
এই পুরো প্রোগ্রাম নিয়ে বলতে গিয়ে ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য, ডেপুটি ডিরেক্টর, ভারতীয় জাদুঘর, কলকাতা ( সংস্কৃতি মন্ত্রক, ভারত সরকার), বলেন,” ভারতের সবচেয়ে পুরনো আর সবচেয়ে বড় জাদুঘর, ভারতীয় জাদুঘর, কলকাতা অনন্য সংস্কৃতির দিক থেকে আবার সাধারণ সচেতনতার দিক থেকেও। আমাদের দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করা এবং সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা যেরকম আমরা করে চলেছি, সেই ভাবেই আমরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে বিভিন্ন দক্ষতা ও জ্ঞানের দিকটি তুলে ধরছি। এই বছরেই এর আগে আমরা মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের সাথে যৌথভাবে একটি বিএলএস (BLS) ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছিলাম আমাদের সকল স্টাফের জন্য, যা ভীষণ ভাবে সফল হয়েছিল। সেই সাফল্যের ধারা এগিয়ে রেখেই আজকের সিপিআর (CPR) ট্রেনিং প্রোগ্রাম ভীষণ ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এই প্রোগ্রাম আবারও তুলে ধরে আমরা কিভাবে এই ধরনের অনুষ্ঠানকে তুলে ধরি এবং সাধারণ মানুষকে জীবন বাঁচানোর মত দক্ষতা মূলক কাজের ক্ষেত্রে পারদর্শী করে তুলি।”
পঞ্চাশের কম বয়স, অথচ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে, এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে অনেকটাই বেড়েছে। তিরিশের বা চল্লিশের ঘরে সেলিব্রিটিদের মধ্যে এই রকম ঘটনা সচেতনতা এনেছে কিছুটা এবং পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকার দিকটি আরো প্রকট হয়েছে। ক্লিনিকাল স্পেশালিস্টদের কথা অনুসারে, সিপিআর (CPR) সঠিক ভাবে করা মৃত্যুহার কমাতে সক্ষম হতে পারে। তাই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে একটি ক্রিটিক্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা সত্যি খুব প্রয়োজনীয়।