দেবাশীষ চক্রবর্তী-
শ্রীরামকৃষ্ণ একবার ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন। ব্রাহ্মসমাজের উৎসবশেষে দক্ষিণেশ্বরে ফিরছেন শ্রীরামকৃষ্ণ, সঙ্গে হৃদয়। রাত বেশ গভীর। চানকের রাস্তায় (বি. টি.রোড) তখন আশপাশে জঙ্গল, ডাকাতদল আটকাল গাড়ি। তারা তিনজন — সঙ্গে বল্লম, লাঠি ইত্যাদি অস্ত্র।
গাড়ি যখন, তখন যথেষ্ট বিত্তবান সন্দেহ নেই। কিন্তু হায়, এরা তো অতি সাধারণ, কিছুই সঙ্গে নেই। তারা হতাশ ও ক্রুদ্ধ। শ্রীরামকৃষ্ণ তাদের বুঝিয়ে বললেন, দক্ষিণেশ্বরে এসো, তোমাদের পাওনা মিটিয়ে দেব। কোনও চালাকি নয়তো ! তবে মানুষটিকে যেন কেমন বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। সর্দার তারা কাঁড়ার বললে, ঠিক আছে তবে কোনও চালাকি যেন না করা হয়, তাহলে পার পাবে না।
তারপর কদিন বাদে তারা কাঁড়ার দক্ষিণেশ্বরে এসে হাজির। শ্রী রামকৃষ্ণ কে বলল, কই আমাদের পাওনা গন্ডা মিটিয়ে দাও।
ঠাকুর বললেন , বসো, মায়ের প্রসাদ পাও, দেব বৈকি। রাতের কারবারি সে, ঘরে নানা লোকের আনাগোনা — হৃদয় হাজির — ভাল ঠেকল না। সে একটু থেকেই চম্পট দিল। কিন্তু ছাড়তে রাজি নয়, কদিন বাদে আবার হাজির।
সেদিন রামকৃষ্ণ মায়ের নাম গান করছেন। সে গানে সর্দার মুগ্ধ! প্রসাদ ধারণ করে, জল খেয়ে নীরবে প্রস্থান। কী জানি কোন পাওনায় আজ তার মন ভরপুর ! তারপর একদিন তিনজনেই এসে হাজির। শ্রীরামকৃষ্ণ তাদের দেখে মায়ের নাম করছেন আর বলেছেন, লাগ্ ভেলকি, লাগ্।
তা ভেলকিই লাগল, তারা সটান পড়ল শ্রীরামকৃষ্ণের চরণে — আমাদের কী হবে, আমরা পাপী, খুনি, ডাকাতি করি। শ্রীরামকৃষ্ণ তাদের সদ্ ভাবে জীবন যাপন করতে বলে অনেক সান্তনা দিয়ে ফেরত পাঠালেন।
এবারে তাদের পাওনা পূর্ণ হল। তারা কাঁড়ার এক কাঠ গোলায় চাকরি পেল, তার এক সাগরেদ হল রানী রাসমণির বাড়ির পাইক, অপরটি হল এক আস্তাবলে ঘোড়ার সহিস।
তারা কাঁড়ার আসত ঠাকুরের কাছে। একটা পিঁড়ি তৈরি করে ঠাকুরকে উপহার দিয়েছিল সে। তিনি অপ্রকট হলে সে দক্ষিণেশ্বরে এসে তাঁর ঘরে বসে থাকত ঘন্টার পর ঘন্টা আর চোখের জলে ভাসত। “আমার মন তুমি, নাথ, লবে হ’রে/ আমি আছি বসে সেই আশা ধরে॥”
[সূত্র: নিবোধত, মে-জুন ২০১৮]