শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন ” আনন্দ তিন প্রকার — বিষয়ানন্দ, ভজনানন্দ, ও ব্রহ্মানন্দ। যা সর্বদা নিয়ে আছে – কামিনী – কাঞ্চনের আনন্দ – তার নাম বিষয়ানন্দ। ঈশ্বরের নামগুনগান করে যে আনন্দ তার নাম ভজনানন্দ। আর ভগবানের দর্শনের যে আনন্দ তার নাম ব্রহ্মানন্দ। ” ‘ আনন্দং ব্রহ্মণঃ ” — ব্রহ্মকে জানলে আনন্দ লাভ হয়। মানুষ যখন ব্রহ্মের সঙ্গে একত্ব উপলব্ধি করে, তখন সে ব্রহ্মনন্দ লাভ করে। আধ্যাত্মিক আনন্দ কোন বাহ্যবস্তুর উপর নির্ভরশীল নয়। আধ্যাত্মিক আনন্দ লাভ করলে মানুষ সর্বদাই সুখী থাকে। আচার্য শঙ্কর বলেছেন– যতরকম পার্থিব আনন্দ আছে তা লাভ হয় ব্রহ্ম থেকে। এই পার্থিব আনন্দ ব্রহ্মানন্দেরই একটি ধারা। ঠাকুর এই জাগতিক আনন্দকে একটি জলবিন্দুর সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং ব্রহ্মানন্দকে গভীর সমুদ্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। দুটি আনন্দই আনন্দ। কিন্তু পার্থিব আনন্দ বা বিষয়ানন্দ নির্মল নয়। কারন তা আসে কামনা- বাসনার মধ্যে দিয়ে। তাঁর মতে, পার্থিব আনন্দ ক্ষনস্থায়ী। সেই আনন্দ কখনই স্থায়ী হয় না।যতক্ষণ মিষ্টি খাওয়া হয় ততক্ষণই মানুষের আনন্দ, কিন্তু খাওয়া শেষ হলেই আনন্দেরও শেষ।
কিন্তু রামকৃষ্ণের ভাবধারয় এই পার্থিব এবং ক্ষনস্থায়ী আনন্দও অস্বীকার করার নয়। মানুষকে জীবনের শোক, দুঃখ, মৃত্যু, ব্যর্থতাকে সঙ্গে নিয়েই আনন্দের অনুসন্ধান করতে হবে এবং এই ক্ষনিকের আনন্দকে স্বীকার করেই ব্রহ্মনন্দ লাভ করতে হবে।এবং নিজের উত্তরন ঘটাতে হবে। সেই আনন্দস্বরুপ, সত্যস্বরুপ, মঙ্গলস্বরুপ ব্রহ্মের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নামই উত্তরন। তাঁর মতে এ- জগৎ হোক না কাঁটাবন, জুতো পায়ে দিয়ে কাঁটাবন পার হওয়া যায়। আধ্যাত্মিকতা মানুষকে উত্তরনের শক্তি ও প্রেরনা যোগায় এবং দিব্যানন্দের পথ দেখায়।
সৌজন্য – শ্রীরামকৃষ্ণায়তে মিটিং