Select Language

[gtranslate]
২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গৃহশান্তি ।।

অদিতি ভট্টাচার্য :-পার্থ এমনিতে যথেষ্ট ভদ্র,ভালো ছেলে কিন্তু তার একটা খারাপ স্বভাব আছে,সেটা হ’ল ছোটোখাটো বিষয়ে খুঁত ধরা আর সেই নিয়ে অশান্তি শুরু করা৷পার্থর এই স্বভাবের জন্য তার মা আগে অনেক অশান্তি ভোগ করেছে৷এখন তার বৌ মিঠু সেই অশান্তি ভোগ করছে৷একদিন পার্থ অফিসে যাওয়ার পর মিঠু তার শ্বাশুড়িকে বলল”মা, আপনার ছেলের এই খুঁত ধরা স্বভাবের জন্য আমি মনে হয় পাগল হয়ে যাব,কোনো দিনও বলে লুচিগুলো ঠিক ফোলেনি,কোনো দিনও বলে তরকারিতে ঠিকমতো লবণ হয়নি৷অথচ আপনি আর বাবা কতো খুশি হয়ে সেই রান্না খান”৷উত্তরে শ্বাশুড়ি মা বলেন”আমার পোড়া কপাল রে,ঠিক একইভাবে আগে ওর বাবা জ্বালাতো,তারপর শুরু হ’ল ছেলের জ্বালাতন৷তখন ওর বাবা ছেলেকে সামলাতে গিয়ে শুধরে গেল৷আমি আজীবন সহ্য করে এলাম৷এবার তোকে জ্বালাচ্ছে”৷মিঠু বলল “আপনি যদি একটু সাহায্য করেন তবে আমি আপনার ছেলেকে শুধরে দেবো”৷শুনে শ্বাশুড়ি তো মহাখুশি৷
রাতে খেতে বসে পার্থ বলে উঠল”বিচ্ছিরি হয়েছে রান্না,এই দিয়ে খাওয়া যায় না৷”এই শুনে শ্বাশুড়ি বৌয়ে লেগে গেল তুমুল ঝগড়া৷দুজনে দুজনকে রান্না খারাপ হওয়ার জন্য দোষারোপ করতে লাগল৷পরের দিন দু’জনেই কথা বলা বন্ধ করে দিল আর বলল আগে তাদের একে অপরকে দোষ স্বীকার করতে হবে তাহলেই কথা বলবে,রান্না করবে৷জেদ ধরে বসে রইলো শ্বাশুড়ি বৌ দুজনেই৷পার্থ আর কি করবে না খেয়েই অফিস গেল৷অফিসের ক্যান্টিনে খেতে খেতে ভাবল “আহা বাড়ির রান্না কতো সুন্দর”৷
এদিকে পার্থ অফিস বেরিয়ে যেতেই মিঠু ভালোমন্দ রান্না করে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে খেতে ডাকল৷শ্বশুর মশাই এ সব প্ল্যানের বিন্দু বিসর্গও জানতেন না৷তিনি দিব্যি খেয়ে দেয়ে উঠে গেলেন৷কিন্তু শ্বাশুড়ি মায়ের চোখে জল৷বলে উঠলেন “আজ প্রথম ছেলেটা না খেয়ে অফিস গেল”৷মিঠু বলল “মা,খারাপ তো আমারও লাগছে কিন্তু এটা না করলে পার্থর খুঁত খুঁতানি কমানো যাবে না আর আপনার ছেলে না খেয়ে থাকার পাত্র নয়,ও ঠিক বাইরে খেয়ে নেবে৷আর বাইরে কয়েকদিন খেলেই ঠিক জব্দ হয়ে যাবে৷বুঝবে বাড়িতে কতো ভালো খাবার খায়,কতো শান্তিতে থাকে”৷
এতদিন যে ছেলে বাড়ি ফিরলেই মা বৌ ব্যস্ত হয়ে যেত, সেই ছেলে বাড়ি ফিরে দেখল বাড়ির পরিবেশ আগের মতোই থমথমে৷কেউ নিজেদের মধ্যে তো কথা বলছেই না,তার সাথেও কেউ কথা বলছে না৷জীবনে প্রথম পার্থর নিজেকে দোষী মনে হ’ল৷মনে হ’ল গত রাতে সে ওভাররিয়েক্ট করেই বাড়ির সুন্দর পরিবেশটা নষ্ট করে ফেলেছে৷খুব নরম সুরে মা আর বৌয়ের রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করতে লাগল৷
মা আর বৌয়ের রাগ তো কমলোই না উল্টে দু’জনেই পরের দিন নিজের নিজের বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিল৷মহা মুশকিলে পরল পার্থ৷রান্না ঘরে গিয়ে নিজেই রাতের খাবার বানানোর চেষ্টা করল৷তারপর অনেক সাধ্য সাধনা করে মা আর বৌকে খেতে রাজি করল৷পার্থ খেয়ে বুঝল সে নিজে পৃথিবীর জঘন্যতম রাঁধুনি৷অথচ বাড়ির সবাই কত সুন্দরভাবে নিন্দা না করে সেই খাবার খেয়ে উঠে গেল৷
প্রতিদিন বাথরুমে চান করতে গিয়ে বাথরুম নোংরা বলে চিৎকার করে পার্থ৷অথচ বাথরুম যথেষ্ট পরিস্কারই থাকে৷আজ কিন্তু বৌ বা মা কেউই বাথরুম পরিস্কার করেনি৷চিৎকার না করে অশান্তি এড়াতে পার্থ নিজেই বাথরুম পরিস্কার করতে গিয়ে বাধালো বিপত্তি৷পা পিছলে মুখ থুবড়ে পড়ল৷
ব্যাস রাগ,অভিযোগ,অভিমান ক্যান্সেল করে মা বৌ দু’জনে লেগে গেল পার্থর সেবায়৷দু’জনেই বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেল৷পার্থ মনে মনে ভাবল একটু ব্যাথা পেলেও মা আর বৌয়ের মধ্যে ভাবটা তো হ’ল৷গৃহশান্তিটা বজায় থাকল৷গৃহশান্তিটা যে কতটা জরুরি সেটা পার্থ ভালোই বুঝল৷পার্থর খুঁতখুঁতে স্বভাবটাও ম্যাজিকের মতো উধাও হয়ে গেল৷
এদিকে মিঠু তার শ্বাশুড়িকে ডেকে বলল “দেখলেন তো কেমন আপনার ছেলেকে শুধরে দিলাম৷অবশ্য আপনি না থাকলে আমি একা এতো সহজে এ কাজ করতে পারতাম না”৷বলে শ্বাশুড়ি বৌমা দু’জনেই হেসে উঠল৷

সৌজন্যে – প্রতিলিপি

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read