Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ত্রৈলঙ্গ স্বামীজি এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব

ত্রৈলঙ্গ স্বামীজি এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব দুই মহাসাধকই তখন কাশীতে। ত্রৈলঙ্গ স্বামীজি তখন তাঁর ভক্ত মঙ্গল ভট্টজির গৃহে অবস্থান করছেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের খুব ইচ্ছা তিনি একবার স্বচক্ষে কাশীর সচল বিশ্বনাথ ত্রৈলঙ্গ স্বামীজিকে দর্শন করবেন। তিনি তাঁর মনের কথা মথুরবাবুকে জানালেন।

মথুরবাবু বললেন, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। স্বামীজি এখন কোথায় আছেন তাঁর খোঁজ আমি নিয়ে নিচ্ছি। তারপর আপনাকে নিয়ে যাব। ঠাকুর একগাল হেসে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁগো ! তাই হবে।’

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ১৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে ত্রৈলঙ্গ স্বামীজিকে দর্শন করতে যান। ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির মানষকন্যা ও শিষ্যা শঙ্করী মাতাজি তখন দীর্ঘ সাধনা ও সিদ্ধি লাভের পর সদ্য হিমালয় থেকে কাশী ফিরে এসেছেন। শঙ্করী মাতাজি তখন ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির বেদির নীচে গুহাকৃত সাধনকক্ষে বসবাস করতেন। শ্রীশ্রী শঙ্করী মাতাজি সেই ক্ষণটির খুব সুন্দর বর্ণনা আমাদের জন্য রেখে গেছেন।

‘ঠাকুর ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির সন্মূখে। তাঁকে দেখেই মঙ্গলভট্টকে ইশারায় মাতাজিকে ডেকে দিতে বললেন। মঙ্গল ভট্টজি মাতাজির ঘরে প্রবেশ করে বললেন, একজন বাঙ্গালী সাধু এসেছেন, বাবা তাই আপনাকে ডাকছেন। গুরুর আদেশ তাই তিনি তাড়াতাড়ি ওপরে উঠে এলেন। তিনি দেখলেন, একজন শুভ্রকান্ত উজ্জ্বলদ্যুতি বিশিষ্ট বাঙ্গালি পরমহংস বাবা ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির সঙ্গে আলাপ করিতেছেন। তাঁহার সহিত অপর একজন বাঙ্গালি ভদ্রলোক ‘শামলা’ পরিহিত ছিলেন, পরে জানিতে পারিয়াছিলেন তিনিই দক্ষিণেশ্বরের মালিক রাণী রাসমণির জামাতা মথুরবাবু।’

ঠাকুরের সঙ্গে ত্রৈলঙ্গ স্বামীজির সমস্ত কথাবার্তা শঙ্করী মাতাজির সামনেই হয়েছিল। তবে পুরোটাই আকারে ইঙ্গিতে।

ঠাকুর- ভগবান এক না দুই ?
স্বামীজি- যখন সাধকের মন আত্মাতে বিলীন হয়ে যায়- সমাধি মগ্ন হয়- তখন ‘এক’ দুই আর থাকে না, তাকেই অদ্বৈতবাদ বলা হয়। আবার মন যখন ভগবানের অন্বেষণে সাধনায় নিয়োজিত হয় তখন ‘দুই’ অর্থাৎ (১) ভক্ত ও (২) ভগবান। ইহাকেই দ্বৈতবাদ বলা হয়। তাই বলতে পারা যায় ভগবান এক ও দুই। তবে বস্তুত ভগবান এক। দুইটি দানা-যুক্ত সম্পর্ণ ছোলা হল এর প্রকৃত দৃষ্টান্ত।

ঠাকুর- ধর্ম কী ?
স্বামীজি- সত্য।

ঠাকুর- জীবের কর্ম কী ?
স্বামীজি- জীব সেবা।

ঠাকুর- প্রেম কী ?
স্বামীজি- ভগবানের নামে তম্ময় হওয়ার পর যখন চোখে জল আসে, সেই অবস্থার নাম প্রেম।

শঙ্করী মাতাজি পরবর্তীকালে বলেছেন, ‘এইসকল মর্মস্পর্শী কথা শুনে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ‘ভাবসমাধি’ হয়ে গেল। তাঁর দুই চোখ দিয়ে অবিরল প্রেমাংশু পড়তে লাগল। তিনি আরও লিখেছেন, ‘তাঁর চক্ষুর বর্হিপ্রান্ত ভাগ দিয়া মুক্তধারাবৎ গণ্ডস্থল প্লাবিত করিয়া চিবুকে পতিত হইতে লাগিল। ভাবে বিহ্বল ঠাকুরকে দেখে স্বামীজিও আপ্লুত। তিনি ইঙ্গিতে মাতাজিকে রামকৃষ্ণেদেবের মাথায় পাখার বাতাস করার নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণ বাদে ঠাকুরের সমাধি ভঙ্গ হল। তিনি স্বামীজির আসন-বেদি প্রদক্ষিণ করে দুই হাত তুলে নাচতে লাগলেন। পরে তিনি মথুরবাবুকে দিয়ে আধামন ক্ষীর আনিয়ে নিজের হাতে স্বামীজিকে খাইয়ে দিয়েছিলেন।’

শঙ্করী মাতাজি লিখেছেন, ‘উভয়েই প্রেমানন্দরূপে সচ্চিদানন্দ সাগরে ভাসিতে লাগিলেন। তাঁহাদের পরষ্পরের মধ্যে একই আত্মরাজ্যে আবস্থিতিজনিত অন্তর্নিহিত ভাষায় আরও আনেক কথাবার্ত্তাদি হইয়াছিল কিন্তু তাহার প্রকৃত মর্ম উপস্থিত অন্যান্য লোকে ধারণা করিতে ও বুঝিতে পারিলেন না।’


উপস্থাপনায়- পন্ডিত চন্দ্রনাথ শাস্ত্রী।

সৌজন্যে শ্রীরামকৃষ্ণায়তে নমঃ

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read