চম্পা দাশ:-শ্রীরামকৃষ্ণ জীবনের শেষ তিন বছর, বিশেষ করে তাঁর কাশীপুরে বাসকালে শশী মহারাজ (স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ) গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণের সেবায় আত্মনিবেদন করেছিলেন ৷
ঠাকুরের তিরোধনের পরেও সেই একই ধারায় সেবাদি সম্পন্ন করে যেতেন ৷
বেলুড় মঠে প্রতি প্রত্যুষে ( এখন অবশ্য আর করা হয় না ) তিনি নিম বা বাবলার ডাল থেকে একটি দাঁতন তৈরী করে দিতেন ৷
যেমনটি শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবিতকালে ব্যবহার করতেন দাঁতনটি থেঁতলে ঠিক তেমনি নরম করে দিতেন ৷
শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবিতকালে যা যা পছন্দ করতেন তিনি সে সকল দ্রব্যই গুরুসেবায় নিবেদন করতেন ৷ অনেক রকম ফুল দেওয়া হত ৷
শ্রীরামকৃষ্ণ চাঁপা কেতকী প্রভৃতি কড়া গন্ধের ফুল পছন্দ করতেন না ৷
তিনি পছন্দ করতেন কোমল গন্ধের ফুল ৷
সুতরাং চম্পক কেতকী প্রভৃতি কড়া গন্ধের ফুল নিবেদন করলেও তিনি সেগুলিকে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতিকৃতি থেকে দূরে রাখতেন, যাতে কড়া গন্ধের ঝাঁঝ অনেকটা কমে যায় ৷
সকালবেলা স্নানের পর শ্রীরামকৃষ্ণ গতরাতে ভেজানো ছোলা খোসা ছাড়িয়ে আদা নুন দিয়ে খেতেন ৷
আজ পর্যন্ত এই ভোগ বেলুড়ে ও মাদ্রাজ মঠে নিবেদন করা হয় , কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি আদা খেতেন না, কারণ বাঙলাদেশে ঐরূপ রীতির প্রচলন ছিল ৷
সেকারণে সেদিন আদার বদলে গোলমরিচ দেওয়া হত ৷
এখনও ঐ নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে ৷
শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবনের প্রায় অন্তে গলায় ক্যানসার রোগের জন্য কোন শক্ত খাবার খেতে পারতেন না ৷ তিনি সুজির পায়েস জাতীয় তরল পথ্য খেতেন ৷
বেলুড়ে, মাদ্রাজে ও রামকৃষ্ণসঙ্ঘের আরও কয়েকটি কেন্দ্রে আজও সুজির পায়েস ভোগ দেওয়া হয় ৷
এই সমস্ত পূজা-পদ্ধতির সব কিছুরই প্রবর্তক স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ ৷
তিনি নিজে কাশীপুর বাগানে চব্বিশ ঘণ্টা ধরে যেভাবে সেবা করতেন সেই সেবা ধারারই অনুসরণ করতেন পরবর্তীকালেও ৷
তিনি ঠাকুরের ভোগ রান্না করতেন ৷
প্রথমে তৈরী করতেন চাটনি পায়েস প্রভৃতি যেগুলি খুব ঠাণ্ডা অবস্থায় নিবেদন করতে হয় ৷
আর ভাত ডাল তরকারী, যেগুলি গরম গরম পরিবেশন করতে হয় সেগুলি শেষকালে রান্না করতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোগ নিবেদন করতেন ৷ তিনি এক সঙ্গে সব লুচি তৈরী করতেন না , একটি একটি করে লুচি ভেজে ঠাকুরকে গরম গরম লুচি খাওয়াতেন ৷
তিনি এমনি আন্তরিক ভাবেই ঠাকুরের সেবা করতেন ৷
গভীর রাতে যখন তিনি খুব গরম অনুভব করতেন, তৃষ্ণার্ত বোধ করতেন ,তিনি ঠাকুরের ঘরে চলে যেতেন, শয়ন ঘরের জানালা খুলে দিতেন, এক গ্লাস জল খেতে দিতেন এবং সারারাত ধরে ঠাকুরকে পাখার বাতাস করতেন ৷
তাঁর পূজানুষ্ঠানে বিধি কিছু ছিল না, কিন্তু তা ছিল অনন্যস্বতন্ত্র ৷
তিনি সর্বক্ষণই অনূভব করতেন শ্রীরামকৃষ্ণের উপস্থিতি এবং সেকারণে পূজার পূর্বে ধ্যানজপ ইত্যাদির প্রয়োজন বোধ করতেন না ৷
কি সকালে কি সন্ধ্যায় তিনি সরাসরি পূজা আরম্ভ করতেন ৷
শ্রীশ্রীঠাকুরের সাক্ষাৎ লীলাসঙ্গী, “গুরুভক্তির চরম পরাকাষ্ঠা” ,স্বামীজীর অন্যতম প্রিয়, রামকৃষ্ণ মঠ মাদ্রাজের পুরোধা শ্রীমৎ স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীর মহারাজের পূণ্য জন্মতিথিতে জানাই আভূমি শতকোটি প্রণাম ৷