Select Language

[gtranslate]
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কে বলে পাষাণী তুই,দয়ার অন্ত নাই…

মাগো, পাষাণী বলে অন্তত তোমাকে কেউ অপবাদ কষ্ট দিতে পারবেনা। তুমি তো মূর্তিমতী দয়া। মাগো সত্যিই যত তোমার কথা পড়ি, জানি, উপলব্ধি করি যে তোমার দয়ার অন্ত নেই। এতো কৃপা, এত মমতা কি কখনো কোন মানবী দিতে পারেন? কখনোই না। মা নিজের দেবীসত্ত্বা কে কাজে লাগিয়েছেন নিজের মাতৃসত্ত্বায়।

একবার এক ভক্ত মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মা কোন অবতার জন্মে অবতার চলে যাবার পরে অবতার এর শক্তি তো কখনো এইভাবে মুমুক্ষ্য জনগণকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন নি। মা তার উত্তরে বলেছিলেন, ঠাকুর সবার মাঝে মা খুঁজে পেতেন। তাই সেই মাতৃ ভাবকে বিস্তার করাতে, মাতৃক্রোরে অগণিত সন্তানকে আশ্রয় দেওয়ার জন্যই মায়ের জননী রূপে প্রকাশ।

মায়ের এই দয়া বা কৃপার এত উদাহরণ আছে যে বলে শেষ করা যায়না। আপনারা জানেন, জনৈক ভক্ত বাজার করে রোদের মধ্যে ভারী ঝুড়ি মাথায় চাপিয়ে মায়ের বাড়ি এসেছিল জয়রামবাটিতে। এসে দেখে মায়ের মুখ চোখ লাল আর মা আমার ঘেমে নিয়ে এক সার হয়ে উঠেছেন। ভক্ত বৎসলা জননী যে ভক্তের কষ্ট নিয়ে নিয়েছিলেন নিজের শরীরে।

নাম মনে পড়ছে না। এক ভক্ত একবার মাকে অনুরোধ করেছিল মায়ের শুকনো অন্ন প্রসাদ নিয়ে যাবে বলে। মা অন্ন রেখে দিয়েছিলেন এক পাত্রে আর তাকে বলেছিলেন নজর রাখতে যাতে কাক মুখ না দেয়। সেই ভক্ত দুপুরে খাবার পরে ঘুমিয়ে পরে। পরে বেলায় উঠে দেখে মা বসে বসে সেই অন্ন পাহারা দিচ্ছেন। পাঠক ভাবতে পারছেন, এই মা কেমন মা?

ভক্তদের ইচ্ছা মাত্রই আমার অন্তর্যামী মা বুঝতে পারতেন ও সেই মত তাদের চাহিদা মেটাতেন। আবার কম বয়সী ভক্তদের সাথে মজাও করতেন। জানেন কিছু বাচ্চাদের অনুরোধে বুড়ি বুড়ি খেলায় বুড়িও হয়েছিলেন তাদের আনন্দ দিতে। এক কিশোর একবার এসেছিল মায়ের কাছে। সে ছিল আবার বোমা মামলায় অভিযুক্ত এক আসামি। মাকে প্রণাম করে দেখে মা পুরোপুরি ঘোমটা দিয়ে আছেন। ছেলেটির বয়স তখন মাত্র ১৬ কি ১৭ বছর। মানবে কেন? বলেই ফেললো, মা এটা আবার কি? আমি তোমাকে এতদূর থেকে দেখতে এলাম আর তুমি ঘোমটা টেনে বসে রয়েছো? আমি তো তোমার মুখই দেখতে পাচ্ছিনা। মা সঙ্গে সঙ্গে ঘোমটা সরিয়ে তাকে চিবুক ধরে সস্নেহে আদর করেছিলেন।
আসলে সন্তানের আবদার মা ফেলতেই পারতেন না।

একটা কথা মনে পড়ে গেল। একবার সুরেন মজুমদার এসেছেন উদ্বোধন কার্যালয়। এসে দেখেন শরৎ মহারাজ লীলা প্রসঙ্গ লেখার তোড়জোড় করছেন। ওনাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। মহারাজ বললেন, এটা কি হলো? সুরেন বাবু তো থত মত খেয়ে গেলেন। বললেন, মহারাজ আপনাকে প্রণাম করে তো আমি ধন্য হলাম। আপনি এরকম বলছেন কেন?
শরৎ মহারাজ বললেন, আরে তুমি যাঁর কাছ থেকে আসছো আমি তো তাঁরই মুখ চেয়ে বসে আছি। তিনি চাইলে তুমিও এক্ষুনি আমার জায়গায় বসতে পারো। ভাবতে পারছেন, কি অসাধারণ কথাই বেরোলো মহারাজের মুখ দিয়ে।
মা যে আমার মহামায়া, ওনার ইচ্ছামতো উনি জগৎ সৃষ্টি ও ধ্বংস দুইই করতে পারেন। ঠাকুর বলতেন না, হাজার বছরের অন্ধকার কৃপামাত্রই আলোকিত হয়ে যেতে পারে। এ এক অসম্ভব আশার কথা। যতই হোক না কেন আমার পাপের বোঝা, যতই হোক না আমার জন্ম জন্মান্তরের কর্মফল, মা কে যদি ঠিক ঠিক মত ধরে থাকতে পারি, এক লহমায় হতে পারে আমার সেই শুভক্ষণ, পেতে পারি মায়ের অনুকম্পা।

মা আমার আনন্দময়ী। উনি কখনোই চান না ওনার সন্তানেরা নিরানন্দে থাকুক। আমরাই এই প্রিয় মাকে কখনো সখনো ভুলে গিয়ে আত্ম গরিমায় নিজেদের দুঃখ নিজেরা আমরাই ডেকে নিয়ে আসি।

আসুন পাঠক, আমাদের সকল কার্যের কর্মফল, এ জন্মের, জন্ম জন্মান্তরের মায়ের শ্রী চরণে সমর্পণ করে আমরা মুক্তি স্নানে অবগাহন করি।

মা আমাকে সব ভুলিয়ে দাও। আমার ধ্যানে, জ্ঞানে, স্বপনে, জাগরণে খালি তুমিই থাকো। তোমাকে নিয়েই যেন আমার নির্বাহিত হতে পারে এই জীবন আর অন্তিমে যেন স্থান পাই তোমার শ্রী চরণে।

মাগো, মা আমার। কৃপা হী কেবলম।

সৌজন্যে – শ্রীরামকৃষ্ণায়তে নমঃ

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read