Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। শক্তিপীঠ ” মা অপর্ণা ” ।।

উগ্র মুর্তি ধারন করে যখন ‘ ভগবান শিব ‘ সতীর দেহ নিয়ে ব্রহ্মাণ্ড কাঁপাচ্ছে, তখন ‘ ভগবান বিষ্ণুর ‘ কাছে একটাই উপায় ছিল । ওনার সুদর্শন চক্রের আঘাতে অর্ধ জ্বলা সতীর দেহের অঙ্গ ও আভুষান যেখানে যেখানে পতিত হয়েছে সেখানে সেখানে এক একটা শক্তিপীঠ তৈরি হয়েছে । ১০৮ পীঠস্থানের মধ্যে ৫১টি শক্তিপীঠ মানা হয়ে থাকে ।

বাংলাদেশের বাগুরা জেলার শেরপুর স্টেশন থেকে ২৮ কিমি দূরে ভবানীপুর গ্রামে ” করতীয়া সদানীরা ” নদীর তটে অবস্থিত শক্তিপীঠ ” মা অপর্ণা ” দেবীর মন্দির । এই স্থানে মায়ের বাঁ পায়ের “নুপুর” ( তল্পি )পতিত হয়েছিল ।

তন্ত্রচুরামনি পীঠ নির্ণয়তন্ত্র তে করতীয়া তটের বর্ণনা এই ভাবে প্রাপ্তি হয় –
” করতীয়াতটে তল্পঁ বামে বামনভৈরবঃ ।
অপর্ণা দেবতা তত্র বহ্মাসরুপা করাদ্রুবা ।। “

এখানকার শক্তি হল দেবী ” অর্পন ” ও ভৈরব ” বামন ” । মাকে ” অপর্ণা ” ( যে ভগবান শিবকে অর্পিত করে ) ও ভৈরবকে ” বামন ” নামে পুজিত হন । এখানে আগে ভৈরব “বামন” দেবকে দর্শন করে তবেই মায়ের দর্শন করা যায় । এখানে মায়ের মুর্তি অষ্টধাতুর তৈরি ।

১৭০০ ও ১৮০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি রাজা রামকিশন মোট ১১ টা মন্দির বানিয়ে ছিলেন । তখন এই মন্দিরটি তৈরি করেন আলাদা ভাবে । মন্দিরটি পাঁচ একর জমির উপর ছড়িয়ে আছে ।

করতীয়া নদীকে সদানীরা নদী বলা হয় । বায়ুপুরান অনুসারে, এই নদী ৠক্ষপর্বত থেকে শুরু হয়েছে আর এর জল “মনিসদৃশ্য” উজ্জ্বল । একে ” ব্রহ্মারূপা করদভবা ” বলা হয়ে থাকে । কথায় আছে, “শিব-পার্বতী” জল গ্রহণ করার সময় শিবের হাত নড়ে জল পড়ে যাবার জন্য এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে ।

তাই এই নদী “শিবনির্মল্যসদৃশ্য মহত্ত্ব” । একে লন্ঘন করা উচিত নয় ।
মহাভারতের বনপর্ব ৮৫ / ৩ অন্তর্গত তীর্থযাত্রা বিযয়ক প্রসঙ্গতে মহাত্ম থেকে বর্ননা প্রাপ্তি হয় –
” করতিয়াঁ সমাসাঘ ত্রিরাত্রীপোষিতী নরঃ ।
অশ্বমেধবাপ্রীতি প্রজাপতিকৃতী বিধিঃ ।। “
অথার্ত , প্রজাপতি ব্রাহ্মাজী এই বিধানে বলেছে, যে ব্যক্তি করতীয়া গিয়ে স্নান করে তিন রাত্রি যদি উপবাস করে তাহলে সেই ব্যক্তি অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রাপ্তি করবে ।পুরানে এই পীঠস্থানের বর্ণনা পাওয়া যায় । এখানে সো যজন খেত্রে মৃত্যুর কামনা তো মনুষ্য কেন, দেবতারাও মৃত্যুর কামনা করে । তন্ত্রগ্রন্থ তে এই দেশে বিশিষ্ট মহত্ত্ব বর্ণনা করে ।

শক্তিসঁঙ্গমতন্ত্র অনুসারে এই স্থল সর্বসিদ্বিপ্রদায়ক –
রত্নাকর সমারম্ভ্ ব্রহ্মাপূত্রান্তাঁঙ্গ শিবে ।
বড্গদেশীঁ ময়া প্রীক্তঃ সর্বসিদ্বিপ্রদায়কঃ ।।

করতীয়া শক্তিপীঠ প্রাচীন বঙ্গদেশ আর কামরুপে সম্মিলন স্থলে শত যজন বিস্তৃত শক্তিত্রিকোন এর অন্তর্গত ।
সরতীয়া সমাসাঘ ইয়াবচ্ছিখরবাসিনীম ।
শতযজনবিস্তীর্ন ত্রিকনঁ সর্বসিদ্রিদম ।।
দেবা মরনমিচ্ছন্নি কিঁ পুর্নর্মাবাদয়ঃ ।


পৌরাণিক কথা অনুসারে,
সর্বত্র বিরলা চাহ কামরুপে গৃহ গৃহ ।। অথার্ত, এই খেত্রে ঘরে ঘরে দেবীর নিবাস মানা হয় ।
দিনে দেবীর তিনবার ভোগ দিয়ে তিনবার আরতি পরম্পরা আছে । সকালের আরতিকে “বাল্য” ভোগ, দুপুরের আরতিকে “অন্ন” ভোগ আর সন্ধ্যার আরতিকে “মহাভোগ” বলা হয় । বছরের সব দিন মা কালীর পুজো হয় কিন্তু নবরাত্রিতে শুধু কলস ( ঘট ) পুজো হয় ।


মন্দিরের পাশে একটি পুকুর আছে , যার নাম শক পুকুর বলা হয়ে থাকে । এই স্নান করে তবেই মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায় ।
এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ জন এসে ভক্তি করে পুজো করেন এবং উৎসবে মেতে ওঠেন । নবরাত্রি, অমাবস্যা, দীপাবলি, মকর সংক্রান্তিতে বিশেষ পূজো আয়োজন করা হয় ।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read