Select Language

[gtranslate]
৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

।। মাকে যেমন দেখেছি ।।

স্বামী গৌরীশ্বরানন্দ:-কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে, মা বকতেন কিনা। আমি বলতানঃ ” সহজে না, তবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কখনো দু- একটি কথা বলতেন। ”


আমার হেডমাস্টার মশায় প্রবোধচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আশি টাকা বেতন পেতেন স্কুলের হেডমাস্টার বলে। তবে তখনকার দিনের আশি টাকা এখনকার দিনের কয়েক হাজার টাকারও বেশি। মা যখন ছিলেন আমরা দুটাকা মন চাল খেয়েছি।


জয়রামবাটিতে আমরা দশ আনা মন আলু কিনেছি, দুটাকা মন চাল। যাই হোক, তিনি কিছু টাকা খরচ করে মায়ের জন্য ফল, মিষ্টি, পান সুপারি ইত্যাদি কতকগুলি জিনিস সুন্দর করে সাজিয়ে আনতেন। মনে মনে খুব আশা যে, মা খুব খুশি হবেন।


মায়ের পায়ের কাছে ঝুড়িটি রেখে প্রনাম করে উঠতেই মা বললেনঃ ” দেখ বাবা, ঠাকুরের কৃপায় তো আমার সব জুটে যাচ্ছে? কোন অভাব আমার নেই। তুমি গৃহস্থ, এতগুলি টাকা কেন খরচ করলে? তোমার স্ত্রী আছে, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা আছে, তাদের ভরনপোষণ আছে, তা তুমি এতগুলি টাকা খরচ করলে কি করে হবে বাবা! ”


একটি কড়া কথাও মা বলেছিলেন — ” বাঁদরের চুল হলো বাঁধতে জানে না। ” মেয়েদের লম্বা লম্বা চুল হলে তারা খুব সুন্দর খোঁপা বাঁধে কিন্তু বাঁদরের লম্বা চুল হলে দাঁত দিয়ে ছিঁড়বে। বাঁদর তো দাঁত দিয়ে চুল কাটবেই, সে তো আর খোঁপা বাঁধাবে না।


এই কথাটি শুনে হেডমাস্টার মশায়ের মনে দুঃখ হয়েছে। বেশ কড়া কথা মা বললেনঃ ” সেদিন মাস্টার মশায় প্রনাম করে বাড়ি যাচ্ছেন, তখন মা বললেনঃ ” দেখ বাবা, কেন বলি জান? তুমি তো সংসারী লোক, তোমার কিছু সঞ্চয় দরকার। আর সঞ্চয় যদি না করো তো বাবা, সাধু – সন্ন্যাসীদের কি দেবে? সাধু – সন্ন্যাসীরা তো রোজগার করে না। তারা তো গৃহস্থের খেয়েই বেঁচে আছে। ”


তখন মাস্টার মশায় খুশি হলেন। কারন, শুধু স্ত্রী – পুত্র – কন্যার ভরনপোষণ ইত্যাদি জন্য সঞ্চয় নয়, সঞ্চয় করলে সাধুসেবা করা যাবে! মাস্টার মশায় পরে অনেক সাধু – সন্ন্যাসীর সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন মায়ের কৃপায়।

ekhansangbad
Author: ekhansangbad

Related News

Also Read