সমীর সাহা :- পুজো কি? খেয়ে দেয় কি পুজো করা যায়?
নির্ধারিত সময় ধরে উপোস না করে পুজো দিলে সে পুজোর কি সার্থকতা নেই?
এ সকল প্রশ্ন কিন্তু আমাদের অনেকের মনেই ঘোরা ফেরা করে।
স্বামী অদ্ভুতানন্দ মহারাজ শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ পার্ষদ শিষ্য সন্তান ছিলেন। ঠাকুর প্রসঙ্গে তিনি তাঁর স্মৃতিচারণায় ঠিক এই বিষয়গুলোই আলোচনা করেছিলেন। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শ্রী শ্রী ঠাকুর বলতেন,
“পুজো কি জানিস? ” – বলেই শ্রী রামকৃষ্ণ বলছেন,
“তাঁকে কি দেবো? সবই তো তাঁর। ভালো ভালো জিনিস যা দিবি তাঁর ছাড়া তো কারুর নয়। ”
এরপর শ্রী শ্রী ঠাকুর একটি অসাধারণ গল্প বললেন।
“একবার একজন বড়লোক তার নিজের বাগানের বৈঠকখানায় গিয়ে বসে আছেন। বাগানের মালী টালি সব বাগানের কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
এমন সময় দারোয়ান এসে বললে, ‘বাবু, আমি আপনার জন্য কাল থেকে একটা গাছ পাকা পেঁপে তুলে রেখে দিয়েছি। আপনি এটা নিন বাবু’।
বাবু কিন্তু জানেন, বাগান তাঁর, গাছও তাঁর, পেঁপেও তাঁর। কিন্তু ওই যে দারোয়ান কত শ্রদ্ধা করে মনে করে পেঁপেটি তার বাবুর জন্য রেখে তাঁকে দিলো, এটা কি বাবু দেখবেন না? দারোয়ানের শ্রদ্ধা কি বাবুর মন কে বিগলিত করবে না? বুঝবি পুজো করাও ঠিক সেই রকম।”
এর পরেই শ্রী রামকৃষ্ণ বলছেন,
” কিছু খেয়ে দেয় পুজো করলে কোন দোষ নেই। পেট খিদেয় চুঁই চুঁই করলে পুজো করবে কেমন করে? কেবল খাবারের দিকেই তো মন পরে থাকবে। কিছু খেয়েদেয় তারপর পুজোয় বসলে মন স্থির হয়।”
এই জন্যই ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছেন মন মুখ এক করে ভক্তি করতে হয়। লোক দেখানো ভক্তিতে কোন ফল হয় না। ওসব পাটোয়ারী বুদ্ধি। লোক দেখানো ভক্তিভাব বেশিদিন থাকে না। সময় মতন স্বরূপ ঠিক বেরিয়ে পরে। তাই যা করবে মন থেকে করবে, রীতি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে করবে। যে অমনি করবে সে’ই হবে আসল ভক্ত।”
সত্যি ভাবলে পরে অবাক হয়ে যেতে হয় এ কথা গুলো কতখানি সত্য আজকের দিনে। অথচ শ্রী শ্রী ঠাকুর সেই কোন কালে বলে গিয়েছেন কথাগুলো। একজন প্রকৃত দার্শনিক পুরুষ না হলে জীবন দর্শন সম্বন্ধে এই মূল্যবান কথাগুলো বলা সম্ভব নয়।
ঠিক যেমন ভগবান গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন,
“অনাহারে সাধন মেলে না।”
সুজাতার দান করা পায়েস খেয়ে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। খালি পেটে যদি ভগবান কে পাওয়া যেত তাহলে দারিদ্রতার অন্ধকারে নিমজ্জিত যে মানুষগুলোর দু বেলা আহার জোটেনা তাঁরাই বোধহয় সবার আগে ঈশ্বর লাভ করতো। তাই নয় কি?