সন্দীপ শ্রীবাস্তব :- নিজের দিকে ইঙ্গিত করে বলছেন, ” এর ভিতর মা স্বয়ং ভক্ত হয়ে লীলা করছেন। যখন প্রথম এই অবস্থা হল দেখলাম জ্যোতিতে দেহ জ্বলজ্বল করছে। বুক লাল হয়ে গেছে।
মাকে বললাম, মা বাইরে প্রকাশ হয়ো না, ঢুকে যাও। তাই তো এখন হীন –
নইলে কী হত?
‘ নইলে সেই জ্যোতির্ময় দেহ থাকলে জ্বালাতন করত। সর্বক্ষন ভিড় লেগে থাকত। সামলানো যেত না তিষ্ঠোতে দিত না এক মুহূর্ত।
এখন কি হচ্ছে?
রুপের প্রকাশ নেই দেখে আগাছারা পালিয়ে যাচ্ছে। বলাবলি করছে, এই অবতার? এ তো আমাদের মতই সামান্য সাধারণ। আমাদের মতই ভুগছে অসুখে, অপ্রাকৃতিকার্য যন্ত্রনায়। তবে এ আর আমাদের কী মনস্কামনা পূরন করবে। নিজের ব্যাধি সারাতে পারে না আমাদের কোন ব্যাধির নিরসন করবে। চলো ফিরে যাই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করব? দেখছ? শরীর কেমন হয়ে গিয়েছে ভুগে ভুগে! এতই যখন ভুগছে, শরীরের যখন এই হাল, তখন একজন।সাধারণ সাধুর সঙ্গে তফাত কি!
এই ব্যারাম হয়েছে কেন? এর মানেই ঐ। বললেন ঠাকুর, যাদের সকাম ভক্তি তারা ব্যরাম অবস্থা দেখলে চলে যাবে। যারা শুদ্ধ ভক্ত, যারা আমাকে অহেতুক ভালোবাসে তারাই লেগে থাকবে, টিকে থাকবে। আগাছার দল শুকিয়ে গেল। মিলিয়ে গেল ব্যাঙের ছাতা।
সেই খানেই তো তুমি অবতার। এই সাধারণত্বেই তো তুমি অসাধারণ। তুমি আর – আরদের মত ঐশ্বর্য নিয়ে আসোনি এবার। না রাজসম্পদ না শাস্ত্রব্যাকরন। না বা রুপবল স্বস্থ্যশক্তি। একটা সিদ্ধাই পর্যন্ত দেখালে না। ছদ্মবেশ ধরে এলে। পাঁচজনের একজন হয়ে রইলে।
আমাদের ছেড়ে চলে গেলে না বনে – পর্বতে, মঠে – মন্দিরে, আমাদের মাঝখানেই বাসা বাঁধলে। নিরীহের মত, নিরাভারনে মত। আমাদেরই মত দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত রইলে। দুঃখ – কষ্টের পাশ কাটিয়ে চলে গেলে না, ইচ্ছেমৃত্য ঘটালে না। সমাধি অবস্থায় দেহ ছাড়লে না। শুন্যে মিলিয়ে গেলে না হাওয়া হয়ে। তিল – তিল করে ভুগলে, তিল- তিল করে জীর্ণ করলে দেহ। কেন?
শুধু এই আশ্বাস দিতে যে তুমি আমাদেরই একজন। আমাদের রোগে শোকে দুঃখে কষ্টে যদি কেউ পাশে দাঁড়াবার থাকে সে তুমি। তুমিই সাহস তুমিই উৎসাহ। এই বোঝাতে যে দুঃখকষ্টও ঈশ্বরের অভিপ্রায়।